প্রধানমন্ত্রীর ‘স্বচ্ছ ভারত’ অভিযানের কথা মাথায় রেখে পুর নির্বাচনে দেওয়াল লিখন থেকে সরে এল বিজেপি-র নবদ্বীপ শহর মণ্ডল। দলের এই সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যেই নবদ্বীপের সব ক’টি ওয়ার্ড এবং বুথ কমিটিকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শহরের নানা মোড়ে ফ্লেক্স ঝুলিয়ে দলীয় কর্মীদের কাছে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বার্তা‘আমাদের অঙ্গীকার, শহরে দেওয়াল লিখব না আমরা।’
কেন এই সিদ্ধান্ত? নবদ্বীপ শহর মণ্ডলীর সভাপতি রাসবিহারী সেন বলছেন, “দেওয়াল লিখন দেখে ক্ষুব্ধ হন অনেকেই। মুখে কিছু না বললেও, ক্ষোভটা পড়ে ভোট বাক্সে।” জেলা নেতৃত্বকেও বিষয়টি জানিয়েছেন তাঁরা। বিজেপির নবদ্বীপ অঞ্চল পর্যবেক্ষক জীবন সেন বলেন, ওই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানাচ্ছে দল।
আশ্চর্য ভাবে, মূল প্রতিদ্বন্দ্বী তৃণমূল কিন্তু এই উদ্যোগকে প্রশংসাই করছে। নবদ্বীপ শহর তৃণমূল সভাপতি শ্যামাপ্রসাদ পাল বলেন, “নবদ্বীপের মতো শহরে যদি দেওয়াল লিখন না হয়, সে তো অত্যন্ত ভাল। তবে বিজেপি বিষয়টাকে রাজনৈতিক উদ্দেশে ব্যবহার করছে।”
কংগ্রেসের নদিয়া জেলা সভাপতি অসীম সাহা অবশ্য মনে করছেন, ‘স্বচ্ছ ভারত’ আদতে কংগ্রেসের ‘নির্মল ভারত’-এর অন্য নাম। তিনি বলেন, “এটা বিজেপির চটক ছাড়া আর কিছু নয়।” অন্যরা অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত যেমন বলেন, “দেওয়াল পেলে তো লিখবে দু’টো হাত। বিজেপির সেই হাত বা লোকবল কোথায়?” রাসবিহারীবাবুর পাল্টা জবাব, “মনে রাখবেন, ২০১৩-র লোকসভা ভোটে নবদ্বীপ পুর এলাকায় বিজেপি দ্বিতীয় স্থানে ছিল। এখন আমরা অনেক সংগঠিত।”
বাস্তবিকই, দক্ষিণে তেঘড়িপাড়া, মনিপুর, দণ্ডপাণিতলা থেকে উত্তরে প্রাচীন মায়াপুর কিংবা পশ্চিমে মালঞ্চপাড়া, সরকার পাড়া, বাইপাস হয়ে শহরের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরলে দেখা যায়, দেওয়ালে পুরভোট প্রচারে বিজেপির দখলদারি স্পষ্ট। ‘অল ওয়াল বুকড ফর বিজেপি’, লেখা রয়েছে দেওয়ালের কোণে। কিন্তু বিজেপির দাবি, যে সব দেওয়াল তাদের দখলে, সেখানেও না লেখার নির্দেশ চলে গিয়েছে কর্মীদের কাছে।
তবে রাজনীতির চাপানউতোরের বাইরে থাকা সাধারণ মানুষ খুশি। নবদ্বীপ পুরাত্তত্ব পরিষদের সম্পাদক শান্তিরঞ্জন দেব বলেন, “সাধুবাদ জানাই। সব কিছুরই বদল ঘটেছে। প্রচারেই বা বদল হবে না কেন? যা কাজ মিটলে সহজেই সরিয়ে নেওয়া যায় তেমন ভাবেই প্রচার হওয়া উচিত।” বিজ্ঞান মঞ্চের নদিয়া জেলা সম্পাদক অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায় বলেন, “সেই ১৯৭৬ সাল থেকেই আইনে বলা হয়েছে দেওয়াল লেখা বেআইনি। কিন্তু সে আইন মানছে কে?” নবদ্বীপ ব্যবসায়ী সমিতির সম্পাদক নিরঞ্জন সাহাও মনে করেন, অন্য রাজনৈতিক দলগুলিও এমনটা করলে ভাল হত।
অন্য দলগুলিও কি তবে এমন করবে? সিপিএমের নবদ্বীপ লোকাল কমিটির সম্পাদক অমরেন্দ্রনাথ বাগচি বলেন, “বিজেপির এখন প্রচুর টাকা। ওঁরা ফ্লেক্স, ব্যানার, ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন সাজিয়ে প্রচারে যে টাকা খরচ করতে পারেন। আমরা পারব কী করে?”
দেওয়াল না লেখার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না কংগ্রেসের নির্মল সাহাও। বলেন, “দেওয়ালে স্বচ্ছতা দেখিয়ে কী লাভ? আগে বিজেপি তার দলের নেতাকর্মীদের মনের ময়লা দূর করার ব্যবস্থা করুক।” বিজেপির কিন্তু দাবার চাল করছে শহরের ঐতিহ্যকে। ঐতিহ্যবাহী শহরের দেওয়াল নোংরা না-করার বার্তা পৌঁছে শহরবাসীর মন জয় করতে চাইছে। বিজেপির জেলা সহ-সভাপতি জীবনকৃষ্ণ সেন বলেন, “প্রত্যক্ষ যোগাযোগ অনেক বেশি কার্যকর। সে কাজ শুরু করেছি।” তবে এর পাশাপাশি ফ্লেক্স, ব্যানার, পতাকা দিয়ে প্রচারের কাজ চলবে। যা ভোট মিটলেই সরিয়ে নেওয়া যাবে।”
কিন্তু খরচ পোষাবে কী করে? শহর বিজেপির নেতাদের বক্তব্য, যত দেওয়াল লিখতে হত, তার চাইতে কম ফ্লেক্স ছাপবেন তাঁরা। বাজেটে পুষিয়ে যাবে। একই অবস্থান গোটা রাজ্যে নেওয়া যাবে কিনা, সে বিষয়ে এখনই নিশ্চিত নন রাজ্য তাঁরা। রাজ্য সভাপতি রাহুল সিংহ বলেন, “নবদ্বীপ শহর মণ্ডলী আমাদের অবশ্য এখনও ওই সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি। জানালে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব।”
নবদ্বীপের বিরোধীরা অবশ্য বলছেন, “আজ তো বড় বড় কথা বলছে, কাল কী হয় দেখুন। না আঁচালে বিশ্বাস নেই।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy