কোজাগরি রাতে গ্রামের ঘরে ঘরে হয়েছে লক্ষ্মী পুজো। সেই সঙ্গে জমজমাট মেলা। চাকদহে লক্ষ্মীপুজো এ ভাবেই হয়ে আসছে বছরের পর বছর। এক সময় চাকদহ শহর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরে শুধুমাত্র বল্লভপুর বসত এই মেলা। ৬৪ বছরের সেই মেলা এখন পার্শ্ববর্তী দরাপপুর, চৌগাছা এবং নেতাজি বাজারেও মেলা বসে। বিসর্জনের দিন শোভাযাত্রা করে বিভিন্ন বাড়ি ও ক্লাবের প্রতিমা নিয়ে আনা হয় এই মেলায়। মেলা দেখতে জেলা বা জেলার বাইরে থেকে হাজার-হাজার মানুষ এসে ভিড় জমান। সোমবার থেকেই চলেছে মেলার প্রস্তুতি।
বাংলাদেশে ঢাকার পূর্বাইল থানার জয়দেবপুর এলাকায় ঘরে ঘরে মহা আড়ম্বরে লক্ষ্মী পুজো হত। সেখানেই বসত মেলা। দেশ ভাগের পর ওই এলাকার মানুষ এদেশে এসে আশ্রয় নেন। ১৯৫০ সাল থেকে এ পারে তাঁরাই শুরু করেন লক্ষ্মী পুজো। প্রথমদিকে গৃহস্থ বাড়িতে পুজো হলেও, পরে বিভিন্ন ক্লাব পুজো শুরু করে। এখন তিনশোর বেশি পুজো হয়। প্রথমে মরালী নদীর তীরে বল্লভপুর স্কুল মাঠে মেলা বসত। এখন মেলা ছড়িয়ে পড়েছে অন্যত্রও।
স্থানীয় বাসিন্দা ও হিংনারা গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য অনুপ সরকার বলেন, “মেলা দেখতে আশপাশের বিভিন্ন জেলা থেকে হাজার হাজার মানুষ আসেন। আধিকাংশ বাড়িতেই মেলা উপলক্ষে আত্মীয়দের ভিড় হয়। আসলে পূর্ববঙ্গে মানুষরা শেষ পর্যন্ত ভুলতে পারেননি তাঁদের স্মৃতি। সেই আবেগ নিয়েই এই উৎসব।” একই কথা শুনিয়ে আর এক বাসিন্দা সুবোধ রঞ্জন সরকার। বলেন, “এখানে এসে স্থানীয় মরালী নদীকেই বাংলাদেশের নদী হিসাবে কল্পনা করে মেলা শুরু হয়েছিল। শুরুতে হ্যাজাকের আলো জ্বালিয়ে মেলা চলত। আর আজ চারিদিকে শুধু আলো আর আলো।”
মঙ্গলবার সকাল থেকেই চলছে জোর কদমে প্রস্তুতি। বল্লভপুর গ্রামবাসী বৃন্দের পুজোর এবার ৬৪ বছর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘হাট’ কবিতার অনুকরণে ১৭ জন জীবন্ত মডেল দিয়ে তৈরি হচ্ছে পুজো মণ্ডপ। ৪৫ ফুট উঁচু ও ৩৫ ফুট চওড়া উড়িষ্যার বালেশ্বরের একটি মন্দিরের অনুকরণে তৈরি হচ্ছে বেড়বাড়ী উইং ক্লাবের পুজো মণ্ডপ। শশা, সূর্যমুখি ফুলের বীজ, রুদ্রাক্ষ দিয়ে তৈরি হয়েছে লক্ষ্মী প্রতিমা। ক্লাব সদস্য জীতেন দাস বলেন, “আমাদের এবারের বাজেট প্রায় দু’লক্ষ টাকা। সদস্য সংখ্যা প্রায় ১৫০। বাজেটের আধিকাংশটাই সংগ্রহ করা হয় সদস্যদের কাছ থেকে।” শিল্পী প্রসেনজিৎ দাসের হাতে তৈরি হয়েছে একটি মন্দিরের আদলে চৌগাছা ফ্রেন্ডস ক্লাবের পুজো মণ্ডপ। সাদা তিল দিয়ে তৈরি হচ্ছে প্রতিমা।
তাজমহলের আদলে তৈরি হয়েছে নিউ ইয়ং স্টাফের মণ্ডপ। মালেশিয়ার থিয়েন হাউ মন্দিরের আদলে কাচ, স্টিলের প্লেট, ফাইবার, প্লাইউড দিয়ে সেভেন স্টারের মণ্ডপ। মন্দিরের অনুকরণে মণ্ডব ও সূর্যমুখী, ঘাসের বীজ, মুলোর বীজ-সহ নয় রকমের বীজ দিয়ে তৈরি হছে নেতাজি সংঘের মণ্ডপ। শিল্পী গোপাল হালদার ফোম দিয়ে সবুজ বাঁচানোর বার্তা দিতে তৈরি করছেন হরিআলি, অগ্রদূত সংঘের মণ্ডপে। প্লাস্টিক বর্জন করে বাঁশ, কাঠ, প্লাইউড দিয়ে স্বর্ণ মন্দির তৈরি করেছে মিলন সংঘ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy