ছয়ঘরি ভোটকেন্দ্রে গৌতম প্রামাণিকের তোলা ছবি।
দুই ছেলেমেয়ে গরমে ভোটের লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে চায়নি বলে গত বিধানসভা নির্বাচনে ভোট না দিয়েই বাড়ি চলে এসেছিলেন রিম্পা বিবি। এ বার ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছতেই টিভি থেকে উঠে আসা কার্টুন চরিত্রদের সঙ্গে খুনসুটি করতে মায়ের হাত ছেড়ে দিয়ে চলে যায় তাঁর দুই ছেলেমেয়ে। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে নিশ্চিন্তে ভোট দিয়ে বাড়ি ফেরেন ছয়ঘরির রিম্পা বিবি। উল্টে ভোটকেন্দ্র থেকে ছেলেমেয়েদের বাড়ি নিয়ে আসতে যথেষ্ট বেগ পেতে হয় তাঁকে।
তিন বছরের এই উলটপুরানে তাজ্জব বনে গিয়েছেন রিম্পা বিবি। মুর্শিদাবাদ লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে বহরমপুর ব্লকের মধ্যে যে ৫৪৬টি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র রয়েছে, তার মধ্যে ১২ নম্বর ছয়ঘরি গার্লস হাইমাদ্রাসা ভোটগ্রহণ কেন্দ্রকে যে মডেল হিসেবে গ্রহণ করা হয়েছে, জানা ছিল না তাঁর। এত দিন যারা ভোটগ্রহণ কেন্দ্র মানেই বুঝতেন ঠা-ঠা রোদে ভোটের লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা, তাঁদের কাছে এই মডেল ভোটগ্রহণ কেন্দ্র পড়ে পাওয়ার মতো।
ভোটারদের রোদের হাত থেকে রেহাই দিতে টাঙানো হয়েছে তার্পোলিন। ভোটের লাইনে মাথার উপরে ঘুরছে ফ্যান। প্রচণ্ড গরমে ঘেমে-নেয়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ঢুকতেই ‘মে আই হেল্প ইউ’-এর হাত এগিয়ে দিচ্ছে পানীয় জল। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের মধ্যে বেজে চলেছে রবীন্দ্রসঙ্গীতের সুর। বাবা-মা যখন ব্যস্ত ভোট দিতে, কচিকাঁচারা তখন টিভি-বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা কার্টুন চরিত্রদের সঙ্গে খুনসুটিতে ব্যস্ত।
ছয়ঘরির সুদীপ্ত চক্রবর্তীর পরিকল্পনা ছিল ছুটির দুপুরে ঘরে বসে সিনেমা দেখে কাটিয়ে দেওয়ার। তাঁর কথায়, “এই গরমের মধ্যে ভোট দিতে যাওয়ার কোনও ইচ্ছে ছিল না। কিন্তু ভোট দিতে না এলে জানতেই পারতাম না, ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের পরিবেশ এমনও হতে পারে!”
ফুল দিয়ে সাজানো হয় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের গেট। শুরুতেই চোখে পড়ে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের মানচিত্র। ফুলের টবের সারি ভোটগ্রহণ চত্বরের সৌন্দর্য বাড়ায়। ছিল ভোটার সহায়তা কেন্দ্র। ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ঢুকলেই ওই ভোটার সহায়তা কেন্দ্র থেকে প্রতিটি ভোটারের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে হলুদ রঙের একটি গোলাপ। সঙ্গে একটি পেন। দায়িত্বে থাকা অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী সেলিনা খাতুন বিবি বলেন, “স্লিপ ছাড়াই ভোট দিতে এলে তালিকা দেখে ভোটারদের তা বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে।”
ভোটারদের সঙ্গে আসা কচিকাঁচাদের উপহার হিসেবে হাতে তুলে দেওয়া হয় লজেন্স ও খেলনার বল। মাথার টুপি। ছোট ছেলেমেয়েদের মনোরঞ্জনের জন্য হাজির মিকি মাউসের মত কার্টুন চরিত্র। তাদের সঙ্গে মিশে হাসি-মজা-আনন্দে কেটে যাচ্ছে খুদেদের সময়। ভোট দিতে এসে আচমকা শরীর খারাপ হলে দেবীপুর ও ঘাসিপুর উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের স্বাস্থ্যকর্মী সাবিনা ইয়াসমিন ও তৈইবা বেগম হরেক রকমের ওষুধের ডালি নিয়ে বসে আছেনহজমের ওষুধ থেকে ওআরএস-এর প্যাকেট। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “ওই মডেল ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ভাল সাড়া ফেললে ভবিষ্যতে প্রতিটি ভোটগ্রহণ কেন্দ্র ওই ধাঁচে তৈরি করা হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy