নজরদারির অভাবে ভেস্তে যেতে বসেছে কম্পিউটার এডেড লার্নিং (ক্যাল) প্রোগ্রামের উদ্দেশ্যই।
এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য হল, স্কুলের দৈনন্দিন পড়াশোনা প্রাণবন্ত করে তুলতে কম্পিউটারের মাধ্যমে তা ছাত্রছাত্রীদের সামনে উপস্থাপন করা, যাতে ছাত্রছাত্রীদের মনের মধ্যে পড়া গেঁথে যায়। তা ছাড়া ছাত্রছাত্রীদের আরও বেশি করে স্কুলে ধরে আটকে রাখা এবং স্কুলছুটের সংখ্যা কমানো। কিন্তু নিয়মিত পর্যবেক্ষণে না যাওয়ায় জন্য মুর্শিদাবাদ জেলার ১৬২টি স্কুলের মধ্যে হাতেগোনা ১৫-২০টি স্কুলে এই প্রকল্প ঠিক ভাবে চলছে, বাকিগুলির অবস্থা তথৈবচ।
সর্বশিক্ষা মিশনের জেলা প্রকল্প আধিকারিক তানিয়া পারভিন অবশ্য বলেন, “স্কুলগুলিতে সরজমিন তদন্ত করে দেখার জন্য তিন জনের কমিটি তৈরি করা হয়েছে। সমস্ত স্কুল পর্যবেক্ষণ করে ওই কমিটির সদস্যেরা ফেব্রুয়ারির মধ্যে রিপোর্ট জমা দেবেন। তার পরেই বলা সম্ভব হবে, কতগুলো স্কুলে ঠিক মতো ওই প্রকল্প চলছে।”
২০০৫-০৬ শিক্ষাবর্ষে মুর্শিদাবাদের ১০টি স্কুলে প্রথম ‘ক্যাল’ প্রকল্প চালু হয়েছিল। এই প্রকল্পের জন্য স্কুলপিছু চার জন করে শিক্ষক নিয়ে শুরুতেই ১৫ দিনের প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করে জেলা সর্বশিক্ষা মিশন দফতর। গোড়ায় ছিল ৯৭৫৬ জন ছাত্রছাত্রী। কিন্তু গত কয়েক বছরে প্রকল্পের আওতাধীন স্কুলের সংখ্যা বেড়েছে, পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও। বর্তমানে ওই প্রকল্পের আওতাভুক্ত ১৬২টি স্কুলে রয়েছে ১ লক্ষ ১১ হাজার ৩৯৯ জন ছাত্রছাত্রী। ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে ১৬২টি স্কুলে নজরদারি চালানোর জন্য তিন বছরের মেয়াদে ১১ সদস্যের ডিষ্ট্রিক্ট রিসোর্স গ্রুপ (ডিআরজি) তৈরি করা হয়েছিল। গ্রুপের সদস্যেরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন স্কুল পর্যবেক্ষণ করে প্রতি মাসে রিপোর্ট দিতেন। তা রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশন দফতরেও পাঠানো হত।
কিন্তু রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরে এই সংক্রান্ত কোনও ‘নির্দেশিকা’ আর না আসায় ২০১১ সালের অগস্টের পর থেকে ডিআরজি কার্যত অকেজো হয়ে পড়ে। এই প্রকল্প ক্যাল চালানোর জন্য প্রতি বছর স্কুলগুলিকে মোটা অঙ্কের অনুদান হিসেবে দেয় জেলা সর্বশিক্ষা মিশন দফতর। সেই দফতরের এক অফিসারের কথায়, “তিন বছরের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ডিআরজি সংক্রান্ত বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে রাজ্য সর্বশিক্ষা মিশন দফতর চিঠি দিয়ে নতুন করে নির্দেশিকা পাঠানো হচ্ছে বলে জানায়। কিন্তু এখনও পর্যন্ত ওই তা দফতরে এসে না পৌঁছানোয় বিগত ডিআরজি কার্যহীন হয়ে পড়ে।”
আর, তখন থেকেই ধুঁকতে শুরু করে ক্যাল। তার সাম্প্রতিক উদাহরণের মধ্যে রয়েছে ধুলিয়ানের একটি স্কুল, যেখানে কম্পিউটার-প্রোজেক্টর সবই অফিস ঘরে অব্যবহৃত অবস্থায় ফেলে রাখা হয়েছিল। বিষয়টি নজরে আসার পরে ওই স্কুল থেকে ক্যাল তুলে নেওয়া হয় এবং তার বদলে কান্দি মহকুমার বড়ঞার একটি স্কুলকে প্রকল্পের অর্ন্তভুক্ত করা হয়। এ ছাড়াও বেশ কয়েকটি স্কুলে কম্পিউটার বিকল হয়ে পড়ে রয়েছে বলে জেলা সর্বশিক্ষা মিশনের নজরে এসেছে। আবার, এমন কয়েকটি স্কুলো রয়েছে, যেখানে খুব সুন্দর ভাবে ওই প্রকল্প চলছে। যেমন, ভগবানগোলার একটি স্কুলে টিফিনের পরে ক্লাসে ছাত্রছাত্রীদের দেখা পাওয়া যেত না। সেখানে টিফিনের পরে ক্যাল চালুর পর থেকে স্কুল পালানো ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা তলানিতে এসে ঠেকেছে।
ইন্দ্রাণী হাসনামায়ানি উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক মির আশরাফ আলি বলেন, “ক্যাল চালানোর জন্য স্কুলে সাড়ে তিনশো আসনের অডিটোরিয়াম তৈরি করা হয়েছে। কম্পিউটার, প্রোজেক্টর, সাউন্ড সিস্টেম, ডকুমেন্ট ক্যামেরা, ডিজিট্যাল পেন একই ছাদের তলায় থাকায় সহজে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো যাচ্ছে। তাদের পড়াশোনার প্রতি আকর্ষণ বেড়েছে, বেড়েছে শতকরা পাশের হারও।”
তবে শিক্ষকদের একাংশের মতে, বিষয়ভিত্তিক পাঠ্যক্রম অনুযায়ী সিডি দেওয়া হলে অনেক বেশি সুবিধে হত। কেননা এমন অনেক শিক্ষক রয়েছেন, যাঁরা কম্পিউটার চালানোয় পারদর্শী নন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে তাঁদের প্রথম বার কম্পিউটারের সঙ্গে পরিচিতি ঘটছে। এমন শিক্ষকদের ১৫ দিনের প্রশিক্ষণ দিয়েও লাভ হচ্ছে না। কোনও স্কুলে আবার ভূগোল শিক্ষক কম্পিউটারের মাধ্যমে শিক্ষাদানে আগ্রহী। ফলে ছাত্রছাত্রীরা পর্দায় ভূগোল দেখতে পাচ্ছে না। মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক ওয়াই রত্নাকর রাও বলেন, “যে সমস্ত স্কুলের শিক্ষক আগে প্রশিক্ষণ নিয়েছিলেন, তাঁদের আগামী এপ্রিলে ফের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।”
এজেন্টদের বিক্ষোভ। সমস্ত প্রতারক অর্থলগ্নি সংস্থার মালিকদের গ্রেফতার ও আমানতকারীদের জমা টাকা ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়ে বুধবার রঘুনাথগঞ্জ থানার সামনে বিক্ষোভ দেখালেন প্রতারিত আমানতকারী ও এজেন্টদের সংস্থা। সংস্থার জঙ্গিপুরের সভাপতি খাইরুল ইসলাম বলেন, “মুর্শিদাবাদে ১১০টি বেসরকারী অর্থলগ্নি সংস্থার মালিকেরা কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁদের অবিলম্বে গ্রেফতার করতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy