Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪

কংগ্রেস-তৃণমূল সংঘর্ষে অশান্ত সুতি

থানা থেকে ৫০০ মিটার দূরে বোমা ও গুলির লড়াইয়ে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল সুতির ইমামবাজার। রবিবার সকাল ৭টা থেকে টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকদের সংঘর্ষে জখম হয়েছেন দু’জন অন্তঃসত্ত্বা-সহ মোট ১২ জন। তাঁদের জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গাফ্ফার শেখ নামে এক ব্যক্তিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা।

আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা।

নিজস্ব সংবাদদাতা
অরঙ্গাবাদ শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০০:৩১
Share: Save:

থানা থেকে ৫০০ মিটার দূরে বোমা ও গুলির লড়াইয়ে রণক্ষেত্রের চেহারা নিল সুতির ইমামবাজার। রবিবার সকাল ৭টা থেকে টানা সাড়ে তিন ঘণ্টা কংগ্রেস ও তৃণমূল সমর্থকদের সংঘর্ষে জখম হয়েছেন দু’জন অন্তঃসত্ত্বা-সহ মোট ১২ জন। তাঁদের জঙ্গিপুর মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে গাফ্ফার শেখ নামে এক ব্যক্তিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় বহরমপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

স্থানীয় সূত্রে খবর, জখমদের মধ্যে তিন জন গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। নিখোঁজ এক তৃণমূল কর্মী। লুঠ করা হয়েছে হয়েছে স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েতের এক কংগ্রেস সদস্যার বাড়ি-সহ পাঁচটি বাড়ি। জেলা পুলিশ সুপার সি সুধাকর গুলি চলার ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, “বোমাবাজি হলেও গুলি চালানোর কোনও খবর আমার জানা নেই। এলাকায় পুলিশ পিকেট বসানো হয়েছে।” এ দিন রাতপর্যন্ত ওই ঘটনায় পুলিশ অবশ্য কাউকেই গ্রেফতার করতে পারেনি।

ইমামবাজার মহালদারপাড়ায় দীর্ঘদিন ধরেই এলাকা দখল নিয়ে কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে বিরোধ চলছে। গত দু’বছরে একাধিক বার এই সংঘর্ষে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। একাধিক মামলায় দু’পক্ষের শতাধিক অভিযুক্তের কেউ জেলে রয়েছে, কেউ বা এলাকা ছাড়া।

এলাকাছাড়া কর্মী সমর্থকরা গ্রামে ঢুকতে গেলেই শুরু হচ্ছে সংঘর্ষ। এই অশান্তির জেরে গ্রামের সাধারণ মানুষ এতটাই আতঙ্কিত যে, বোমা ও গুলির ভয়ে বাড়ি থেকে বের হতে পারছেন না। বাসিন্দাদের অভিযোগ, সুতি থানা থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে এই অশান্তি চলছে। গত ২০ ডিসেম্বরও এই একই ঘটনা ঘটে। সেদিনও বোমাবাজির পাশাপাশি বাড়িঘরে লুঠপাঠ চালানো হয়। সংঘর্ষ থামাতে বিশাল পুলিশবাহিনী পাঠিয়ে ৩০ জনকে গ্রেফতার করা হয়।

কংগ্রেসের সুতি ২ ব্লকের সভাপতি আলফাজুদ্দিন বিশ্বাস বলেন, “রবিবার সংঘর্ষ শুরু করে তৃণমূলের সমর্থকেরা।” তিনি জানান দু’দলকে নিয়ে ১৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন শান্তি বৈঠক ডেকেছিলেন।

৮ ফেব্রুয়ারি ওই গ্রামের তিন তৃণমূল সমর্থক নির্দল পঞ্চায়েত সদস্য কংগ্রেসে যোগ দেন। এতেই উত্তেজিত হয়ে তৃণমূল কর্মীরা রবিবার সকালে বোমাবাজি শুরু করে। চড়াও হয় সদ্য কংগ্রেসে যোগ দেওয়া পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যা নুরন্নেসা বিবির বাড়িতে। দেদার লুঠপাঠ চালায় তারা। বাড়ির মধ্যেই ছোড়া হয় বোমা। তাতেই ওই বাড়ির দুই অন্তঃসত্ত্বা আহত হন। এরপর তারা চড়াও হয় পাশের কংগ্রেস কার্যালয়ে। চলে ব্যাপক ভাঙচুর।


পড়ে আছে বোমা।

আলফাজুদ্দিনের দাবি, “তৃণমূলের সমর্থকেরা মাস্কেট থেকে এলোপাথারি গুলি চালিয়েছিল কংগ্রেস সমর্থকদের দিকে। সেই গুলিই লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে তৃণমূল সমর্থকের গায়ে লাগে। পায়ের তলার মাটি সরে যাচ্ছে বলেই পরিকল্পিত ভাবে বিধায়কের মদতপুষ্ট তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা এই হামলা চালিয়েছে।” তিনি জানান, তৃণমূলের এই হামলায় মদত দিচ্ছে পুলিশ। তাই বারবার সংঘর্ষ ঘটছে সেখানে।

সুতির বিধায়ক তৃণমূলের ইমানি বিশ্বাস বলেন, “শান্তি বৈঠক ভেস্তে দিতেই কংগ্রেস বাইরে থেকে সশস্ত্র দুষ্কৃতী এনে হামলা চালায় চায়ের দোকানে বসে থাকা তৃণমূল কর্মীদের উপর। কংগ্রেসের দুষ্কৃতীদের বোমায় আহত হন অন্তত ৬ জন দলীয় কর্মী। পালানোর চেষ্টা করলে গুলি ছোড়া হয়। তাতেই গুলিবিদ্ধ হন তিন জন।” এ সব কাজ কংগ্রেসের ব্লক সভাপতির মদতেই হচ্ছে বলে অভিযোগ ইমানির।

অরঙ্গাবাদের যে স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা গ্রামের বিরোধ মেটাতে ১৮ ফেব্রুয়ারি সর্বদলীয় শান্তি বৈঠক ডেকেছিল, রবিবারের সংঘর্ষে কার্যত হতাশ হয়ে তারাও তা আপাতত বাতিল করে দিয়েছে। সংগঠনের সম্পাদক শামসুল আলম বলেন, “ক্রমাগত সংঘর্ষের ফলে গ্রামের নিরীহ বাসিন্দারা আতঙ্কিত। গ্রামের উন্নয়ন ও স্বাভাবিক কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। তাই শান্তি ফেরাতে দেড় মাস আগে স্থানীয় পুলিশ ও রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে কথা বলে বৈঠকের দিন স্থির হয়। অথচ রবিবারের সংঘর্ষে আমরা হতাশ। তাই আর কোনও ঝুঁকি নিতে চাই না।”

পুলিশ অবশ্য ইমামবাজারের সংঘর্ষকে দু’টি রাজনৈতিক দলের মদতপুষ্ট চোরাচালানকারীদের লড়াই বলে মনে করছে।

—নিজস্ব চিত্র

অন্য বিষয়গুলি:

congress tmc suti aurangabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE