অডিট রিপোর্টে ২৪ লক্ষ টাকার গরমিল। সেই টাকার হিসাব না দেওয়া পর্যন্ত এক পয়সাও পাবেন না বলে সোমবার শান্তিপুর কলেজের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ বিমল গোস্বামীকে জানিয়ে দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক। এ দিন হাইকোর্টের ৭ নম্বর কোর্টের বিচারপতি অশোককুমার দাশ অধিকারী দুই পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে এই মন্তব্য করেন বলে জানিয়েছেন কলেজের আইনজীবী অলোককুমার ঘোষ। তিনি বলেন, ‘‘সব শুনে বিচারপতি বলেছেন অডিট রিপোর্টে যে ২৪ লক্ষ টাকার হিসাবের গরমিল আছে, সেই টাকার হিসাব না দেওয়া পর্যন্ত এক টাকাও পাবেন না অবসরপ্রাপ্ত ওই অধ্যক্ষ।’’ দুই সপ্তাহ পরে আবার শুনানির দিন ধার্য করা হয়েছে বলে অলোকবাবু জানিয়েছেন।
২০০৩ সালের জুলাই মাস থেকে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত শান্তিপুর কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন বিমলবাবু। তার বিরুদ্ধে অডিট রিপোর্টে ২৪ লক্ষ টাকার গরমিলের পাশাপাশি একাধিক ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ টাকার গরমিলের অভিযোগ ওঠে। কলেজের জেনারেল বর্ডির বৈঠকে তিনি একবারও এর কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি বলেও অভিযোগ। এই লক্ষ লক্ষ টাকার গড়মিলের কারণেই কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতিরা তাঁর সার্ভিস বুক ও পেনশন বুকে সই করেননি বলে জানা গিয়েছে। ফলে তিনি পেনশন ছাড়াও অবসরকালীন অন্য সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না।
এই কারণেই ২০১২ সালের অগস্ট মাসে তিনি কলকাতা হাইকোর্টে কলেজের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ দিন ছিল তার শুনানি। সেখানে উপস্থিত ছিলেন কলেজের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত অধ্যাপক চয়ন ভট্টাচার্য ও প্রাক্তন অধ্যক্ষ বিমল গোস্বামী। চয়নবাবু বলেন, ‘‘২০০৯-১০ সালের অডিট রিপোর্টে ২৪ লক্ষ টাকার গরমিল ধরা পড়েছে। তার কোনও হিসাব দিতে পারেননি বিমলবাবু। আমরা চাই বিমলবাবু এই বিরাট পরিমাণ অর্থের হিসাব দিন। সেটাই আমি মহামান্য বিচারপতির কাছে আবেদন করেছি।’’
বিমলবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘আমার সময়ে আডিট রিপোর্টে কোনও টাকার গরমিল নেই। সব ঠিকঠাকই ছিল। পরবর্তীকালে আমি অবসর নেওয়ার পরে চক্রান্ত করে এই সব করে থাকতে পারে।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমি যখন অধ্যক্ষ ছিলাম, তখন যে সব শিক্ষকের বিরুদ্ধে বাধ্য হয়ে আমাকে কড়া হতে হত তারাই আজ আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করে আমার সর্বনাশ করার চেষ্টা করছেন।’’ কিন্তু কেন আদালতের দ্বারস্থ হলেন তিনি? বিমলবাবু বলেন, ‘‘গভর্নিং বডির সভাপতি আমার সার্ভিস বুক ও পেনশন বুকে সই করেননি। মাসের পর মাস আমি ঘুরেছি। অনুরোধ করেছি। কিন্তু কোনও লাভ হয়নি। বাধ্য হয়েই তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি।’’
কেন বিমলবাবুর সার্ভিস বুকে ও পেনশন বুকে সই করলেন না সভাপতিরা? তৎকালীন সভাপতি কৃষ্ণনগর পূর্ব কেন্দ্র প্রাক্তন বিধায়ক সুবিনয় ঘোষ বলেন, ‘‘ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অডিট রিপোর্টে ২৪ লক্ষ টাকার গরমিলের পাশাপাশি একাধিক আর্থিক দুর্নীতির অভিযোগ আছে। তিনি সেগুলো নিয়ে কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘কলেজের শিক্ষকদের অভিযোগের ভিত্তিতে গোটা বিষয়টি ডিপিআই-কে জানিয়েছিলাম। ডিপিআই-এর তরফে তাঁর কাছে ব্যাখ্যাও চাওয়া হয়েছিল। আর এই সব কারণেই আমি সে দিন ওনার সার্ভিস বুকে ও পেনশন বুকে সই করিনি।’’
সুবিনয়বাবুর পরে এই কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি হন শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক অজয় দে। বিমলবাবুর ক্ষেত্রে দুই দলের বিধায়কই এক অবস্থান নেন। অজয়বাবু বলেন, ‘‘শুধু অডিট রিপোর্টেই নয়, নানা ক্ষেত্রে একাধিক আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ আছে বিমলবাবুর বিরুদ্ধে। তিনি কোনও নিয়ম-কানুনের ধার ধারতেন না। আমরা বলেছিলাম যে আগে আমাদের হিসাব বোঝাও, তারপর তোমার সার্ভস বুক আর পেনশন বুকে সই করব। আজ বিচারপতির বক্তব্যই প্রমাণ করল আমরা কতটা ঠিক ছিলাম।’’
বিমলবাবুর বিরুদ্ধে আর্থিক অনিয়মের কথা বলতে গিয়ে কলেজের এক অধ্যাপক বলেন, তাঁর আর্থিক অনিয়মের মাত্রা এই পর্যায়ে চলে গিয়েছিল যে, সেটা কখনও কখনও হাসির পর্যায়ে চলে গিয়েছিল। তিনি বলেন, ‘‘এক জায়গায় কর্মচারীদের টিফিনের খরচ দেখানো হয়েছে। সেই তালিকায় কম্পিউটারও আছে। এ ছাড়া টিএ বিল থেকে শুরু করে ন্যাকের জন্য খরচ, নানা ক্ষেত্রে আর্থিক অনিয়ম ধরা পড়েছে।
কলেজের গভর্নিং বডির বর্তমান সভাপতি রানাঘাট উত্তর-পশ্চিম কেন্দ্র তৃণমূল বিধায়ক পার্থসারথী চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি চেয়েছি সব ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ফিরে আসুক। বিচারকের এই উক্তিতে আমি খুশি। এ বার বিমলবাবু বাধ্য হবেন সঠিক ভাবে হিসাব দিতে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy