খুশির হাওয়া নেহারিতলায়।
ত্রিমোহিনী বাজারের কোল ঘেঁষে সুতি নেহারিতলা গ্রামে হাজার আড়াই মানুষের বসত। গ্রামের বেশিরভাগ মানুষ কৃষিজীবী। তবে অধিকাংশ পরিবারই ভূমিহীন। অন্যের খেতে জন খেটে আবাদ তাঁদের। ধান-পাট-পেয়াঁজ চাষ করেও দিন আনি দিন খাই দশা তাঁদের। গ্রামে শিক্ষার হারও কম। বরং পাল্টা দিয়ে বাড়ছে স্কুলছুটের সংখ্যা। স্কুলের গন্ডি পার না করেই ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার প্রবণতা গ্রামে প্রবল।
স্থানীয় পঞ্চায়েত, প্রশাসনের কাছে পরিযায়ী শ্রমিকের সঠিক পরিসংখ্যান না থাকলেও গ্রামের বাসিন্দারা জানান, গ্রামের প্রায় সাড়ে চারশো যুবক এখনও ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করেন। তারমধ্যে দিল্লির বিভিন্ন জায়গায় কাজ করেন অন্তত ৩০ জন যুবক। ছড়িয়ে রয়েছেন বেঙ্গালুরু, পুণে, সুরাতেও। নেহারিতলার ৬ যুবকের ঠিকানা সংযুক্ত আরব আমিরশাহি। এঁদের অধিকাংশই নির্মাণ শ্রমিক।
গ্রামের প্রবীণ বাসিন্দারা বলছেন প্রায় এক দশক আগেও নওদার নেহারিতলা গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িঘর ছিল মাটির অর্থাৎ কাঁচা। গ্রামের ছেলে ভিন রাজ্যে শ্রমিকের কাজ করায় এখন গ্রামে যেন শ্রী ফিরেছে। গ্রামের বেশিরভাগ বাড়িই পাকা হয়েছে এখন। কারও ঘরে বাকি রয়েছে প্লাস্টার কারও বা রঙের কাজ। দু-একটি বাড়িতে স্বপ্নের লোহার গ্রিল!
ইদ-মহরমে ঘরে ফিরে দিন কয়েকের গ্রাম জীবন কাটিয়ে তাঁরা ফিরে যান দূরের শহর-জীবনে। ওঁদের কারও প্রবাসী হওয়ার কারণ বোনের বিয়ে, কারও বা কাঁচা ঘর পাকা করা।
সুজাউদ্দিন শেখ নামে স্থানীয় এক যুবক বলেন, ‘‘আগে আমিও দিল্লিতে একই কারখানায় কাজ করতাম। সেখানে মজুরি কম হলেও ঘরে বসে কাজ। কিন্তু বেঙ্গালুরুতে রাজমিস্ত্রির কাজে আয় বেশি, এখন সেখানেই প্লাস্টার মিস্ত্রির কাজ করি।’’ শ্রমিকদের পরিবারের লোকজন বলছেন রাজমিস্ত্রির কাজে বেশি রোজগার হয় ঠিকই, কিন্তু পরিশ্রমও বেশি হয়। অল্পবয়সী যুবকের অনেকেই রাজমিস্ত্রির কাজ করতে চান না।
দিল্লিতে আটকে পড়া শ্রমিকেরা বেশিরভাগই তরুণ। তাদের কারও বয়স পনেরো, কারও বা একুশ। কেউ ষষ্ট কেউ বা অষ্টম শ্রেণিতেই পাঠ সাঙ্গ করেছেন। গ্রামের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলছেন, ‘‘আসলে এটাই গ্রামের যুবকদের অঘোষিত রীতি। বয়স বাড়ার সঙ্গে তারা স্বপ্ন দেখে ভিন রাজ্যে পাড়ি দেওয়ার। সামান্য বাড়তি আয়ের। গোটা গ্রামটা ধীরে ধীরে যেন ভিন দেশে ভেসে যাচ্ছে গো!’’
রমজান শেখের মা খুরশিনা বিবি বলেন, ‘‘ক্লাস নাইনে উঠে ছেলে পড়া ছেড়েছে। ছেলের পাঠানো টাকাতেই দু’কামরার পাকা বাড়ি তৈরি করেছি। ইদের আগে ফিরে রঙ প্লাস্টার করার কথা।’’ খুরশিনার হাসিতে যেন গ্রামের হতশ্রী উঠোনে এক চিলতে আর্থ-সামাজিক রোদ্দুর আছড়ে পড়ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy