প্রকাশ দাস
প্রমাণের অভাবে বেকসুর খালাস হয়ে গেলেন খোরজুনায় ধর্ষণ ও খুনের মামলায় অভিযুক্ত প্রকাশ দাস। বুধবার কান্দি আদালতের ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টের বিচারক তাপসচন্দ্র দাস তাঁর রায়ে বলেন, সরকার পক্ষের আইনজীবী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে যথেষ্ট তথ্যপ্রমাণ দিতে না পারায় আদালত তাঁকে নির্দোষ হিসেবে মুক্তি দিচ্ছে।
২০১৩ সালের ২৩ জুন ভোরে প্রাতঃকৃত্য সারতে বেরিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান বড়ঞার খোরজুনা গ্রামের এক মহিলা। পরে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের পরিত্যক্ত আবাসনে তাঁর দেহ মেলে। তাঁকে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে, এই অভিযোগে দেহ আটকে আন্দোলনে নামেন এলাকার লোকজন। কামদুনি কাণ্ডের দু’সপ্তাহের মধ্যে এই ঘটনায় রাজ্য জুড়ে হইচই হয়। কংগ্রেস, তৃণমূল, বামফ্রন্ট নির্বিশেষে মহিলার পরিবারের পাশে দাঁড়ায়।
এমন একটি মামলায় অভিযুক্তের অপরাধ হল না কেন? সরকার পক্ষের আইনজীবী সুনীল চক্রবর্তী বলেন, ‘‘কেন এমন রায় হল, সেটাই বুঝতে পারছি না!’’ মহিলার স্বামী বলেন, ‘‘এক জন সাক্ষীও তো অভিযুক্তের হয়ে কথা বলেনি!’’ খোরজুনা নিয়ে আন্দোলনে এক সময়ে খুবই সক্রিয় ছিলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি তথা সাংসদ অধীর চৌধুরী। রায় শুনে তাঁর মন্তব্য, ‘‘পুলিশ লঘু করে মামলা সাজিয়েছে বলেই আদালত এই রায় দিয়েছে। মৃতার পরিবার এই রায় চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে গেলে আমি সব রকম সাহায্য করতে রাজি।’’ তবে সরকারি কৌঁসুলির বক্তব্য, “পুলিশ যথেষ্ট সহযোগিতা করেছে। আগামী সোমবারই আমরা হাইকোর্টে যাচ্ছি।”
চার বছর আগে সে দিন দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে কান্দি-সাঁইথিয়া সড়কের খোরজুনা মোড়ে গাছের গুঁড়ি ফেলে অবরোধ করেছিলেন এলাকার মানুষ। প্রকাশ দাসও সেখানে ছিলেন। মুর্শিদাবাদের তৎকালীন পুলিশ সুপার হুমায়ূন কবীর গিয়ে তদন্ত শুরু করান এবং তার পরেই পুলিশ প্রকাশকে গ্রেফতার করে। এই খুনের প্রতিবাদে গোটা বড়ঞা ব্লকে ১২ ঘণ্টার বন্ধ ডাকা হয়। খোরজুনা থেকে লোকজন নিয়ে গিয়ে পুলিশ সুপারের অফিস ঘেরাও করেন অধীর। কামদুনি ও খোরজুনার দুই পরিবারের লোকেদের দিল্লিতে নিয়ে গিয়ে রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গেও দেখা করান তিনি। ‘প্রতিবাদী মঞ্চ’ গড়ে আন্দোলনে নামে খোরজুনা।
মামলা রুজুর ৮৮ দিনের মাথায় পুলিশ চার্জশিট জমা দিয়েছিল। সাক্ষ্য শুরুর সময়ে খোরজুনার লোকজন আদালত চত্বরে মিছিল করেন। এ ভাবে সাক্ষ্যগ্রহণ সম্ভব নয় দাবি করে মামলাটি অন্য আদালতে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার আবেদন জানায় অভিযুক্ত পক্ষ। তা খারিজ করে হাইকোর্ট ‘ইন ক্যামেরা ট্রায়াল’ অর্থাৎ এজলাসের দরজা-জানলা বন্ধ করে শুনানি করার নির্দেশ দেয়। ২২ জন সাক্ষীর মধ্যে ১৯ জনই এ ভাবে সাক্ষ্য দেন।
শেষে সওয়াল-জবাব পর্বে এসে অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী একাধিক বার জানান, তিনি প্রস্তুত নন, আরও সময় চাই। আদালত তা খারিজ করে দিলে তিনি মামলা থেকে সরে দাঁড়ান। পরে সরকারের তরফেই অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী নিয়োগ করা হয়। সেই আইনজীবী মনিরুল ইসলাম এ দিন দাবি করেন, “প্রকাশ যে কোনও ভাবেই ওই ঘটনায় যুক্ত নয়, চার বছর পরে সেটাই প্রমাণ হল।” প্রকাশের ভাই পলাশও বলেন, “দাদা কোনও ভাবেই ওই ঘটনায় জড়িত নয়। বিচার বিচার ব্যবস্থার উপরে প্রথম থেকেই আমরা আস্থা রেখেছিলাম।।”
মৃতার স্বামীর আক্ষেপ, “ধর্ষণ ও খুনে অভিযুক্ত কেউ যদি বেকসুর খালাস হয়ে যায়, এমন ঘটনা আরও ঘটবে। আমরা হাইকোর্টে যাচ্ছি।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy