Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

জন্মদিন নীল হয়ে পড়ে আছে বোনের পায়ে

পরিণত বয়সে আবার জন্মদিন কী! জন্ম-বার আসে এবং চলেও যায়। সোশ্যাল মিডিয়া সে সব জানে না। জুকারবার্গ জন্মদিনের সকালে একটা মেসেজ পাঠায় নিয়ম করে। সেখানে মুখের ছবির উপর দিয়ে ভেসে বেড়ায় লাল-নীল-সবুজ-হলুদ বাহারি বেলুন। আর মোটা মোটা নীল অক্ষরে লেখা ওঠে—‘হ্যাপি বার্থ ডে’।

প্রতীকী ছবি। সৌজন্যে শাটারস্টক

প্রতীকী ছবি। সৌজন্যে শাটারস্টক

শুভাশিস সৈয়দ
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৫৪
Share: Save:

জন্মদিন মানেই তার কাছে পালিয়ে যাওয়া। পরিবার-পরিজন থেকে, ভিড়-হট্টগোল থেকে, যাবতীয় সোল্লাস থেকে দূরে কোথাও সরে যাওয়া। নীলাকাশ দাস এমনটাই পছন্দ করেন।

জন্মদিনে ঘুম থেকে ওঠার পরেই বাড়ি থেকে মোটরবাইক বের করে বেরিয়ে যান তিনি, ফেরেন সারা পাড়া ঘুমিয়ে পড়লে, অনেক রাতে। জন্মদিনের কয়েক দিন আগে এক রাতে খাওয়া-দাওয়ার পরে ঘুমোতে যাওয়ার আগে মেয়ে বায়না করে—‘‘বাবা, এ বার কিন্তু তোমার জন্মদিনে সব্বাইকে ডাকব।’’

চুপ করে থাকে নীল। টিভির পর্দায় চোখ স্থির। মেয়ে বলে চলে, ‘কী কিছু বলছো না যে!’ শান্ত গলায় তিনি মেয়েকে বলেন—‘জন্মদিন তো আসুক!’ সোমা বাপ-মেয়ের কথার মাঝে নিজেকে জড়াতে চায় না। নিশ্চুপে ঘর থেকে বেরিয়ে যান।

পরিণত বয়সে আবার জন্মদিন কী! জন্ম-বার আসে এবং চলেও যায়। সোশ্যাল মিডিয়া সে সব জানে না। জুকারবার্গ জন্মদিনের সকালে একটা মেসেজ পাঠায় নিয়ম করে। সেখানে মুখের ছবির উপর দিয়ে ভেসে বেড়ায় লাল-নীল-সবুজ-হলুদ বাহারি বেলুন। আর মোটা মোটা নীল অক্ষরে লেখা ওঠে—‘হ্যাপি বার্থ ডে’।

সে সব দেখার অবশ্য সময় নেই নীলের। ওই একই দিনে জন্মেছিল তার বোন। তার ফেসবুকের বার্তাও আসে নীলের নোটিফিকেশনে। সে সবও দেখে না নীল।

সোশ্যাল মিডিয়ার হট্টগোল, পরিচিত জনের ফোন, ফোনের ভেতরে মেসেজে শুভেচ্ছা জানানো থেকে অনেক দূরে তখন সে। বন্ধু-বান্ধবের জন্মদিনে গিয়ে হইহই করে কাটানো সেই নীল নিজের জন্মদিনে থম মেরে থাকে।

—‘কী খাওয়াবি না জন্মদিনে?’ বন্ধুর ফোন পেয়ে আমতা আমতা করতে থাকে নীল। নিজেকে একটু সামলে নেয়। মোবাইলে বোবাকান্না দমকে ওঠে। নীরবে মোবাইল রেখে দেয়। একটু কি চিক চিক করে চোখ! বাথরুমে নিজের সঙ্গে অভিমান করে নীল।

সেটাও ছিল, পুজোর আগে এমন এক শরতের সন্ধ্যা। জন্মদিনের রাতে বাড়িতে পায়েস ফুটছে। ফোনটা এসেছিল তখনই। স্বাস্থ্য দফতরে চাকরি করা বোনের দুর্ঘটনা। পড়ি কি মরি করে ছুটে গিয়েছিল তবে দেখেছিল চোখ বুজে ফেলেছে বোন। স্বাস্থ্য দফতরের অ্যাম্বুল্যান্সে চড়েই বাড়ি ফেরার পথে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কে...।

জন্মদিনে সে রাতেই দাঁড়ি পড়ে গিয়েছিল। গত পাঁচ বছর ধরে, নাহ্ জন্মদিন মানেই একটা ঘোর দুঃস্বপ্নের মতো জাতীয় সড়ক, হুহু করে ছুটে আসছে তীব্র দু’টি আলো। চোখ বন্ধ করে ফেলে নীল। একটা নীল কষ্ট আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকে তাঁকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Birthday Berhampur
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy