—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
কোটি-কোটি টাকা খরচ করে স্টেশনের পরিকাঠামোগত উন্নতির পাশাপাশি সৌন্দর্যায়নেও উদ্যোগী হয়েছে রেল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বয়ং এই প্রকল্পের উদ্বোধন করেছেন।
কিন্তু এর ফলে রেল স্টেশনের হকারেরা উচ্ছেদের মুখোমুখি হতে চলেছেন। আপাতত তাঁদের পুনর্বাসনের কোনও পরিকল্পনাও নেই রেল কর্তৃপক্ষের। রেলের এই সিদ্ধান্তের ফলে বিরাট সংখ্যক মানুষ জীবিকাহীন হয়ে পড়তে চলেছেন বলে আশঙ্কা। এই পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন হকার পুনর্বাসনের দাবি জানাতে শুরু করেছে। তাদের দাবি, রেল কর্তৃপক্ষ রেলের জমিতেই হকারদের জন্য বিকল্প কোনও ব্যবস্থা করে দিক। যদিও রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, সে দায়িত্ব রাজ্য সরকারকে নিতে হবে।
গোটা দেশের পাশাপাশি নদিয়া জেলার কল্যাণী, রানাঘাট, শান্তিপুর, কৃষ্ণনগর, নবদ্বীপ ও বেথুয়াডহরি রেল স্টেশনকে ‘অমৃত ভারত স্টেশন প্রকল্প’-এর আওতায় আনা হয়েছে। সেখানে যাত্রী পরিষেবার উন্নতির জন্য পরিকাঠামোর উন্নতি, পাশাপাশি সৌন্দর্যায়নের পরিকল্পনা করেছেন রেল কর্তৃপক্ষ। সেই মতো স্টেশনগুলির জন্য প্রায় ২৭-২৮ কোটি টাকা করে বরাদ্দ করা হয়েছে। চলমান সিঁড়ি থেকে শুরু করে উন্নত শৌচাগার, প্রতীক্ষালয়, ছাউনি তৈরি করা হবে। ২০২৪ সালের ৩১ মার্চের মধ্যে কাজ শেষ করে ফেলা হবে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে।
এই প্রকল্প বাস্তবায়িত করতে গেলে স্টেশনের হকারদের উচ্ছেদ করা হবে বলে রেল সূত্রে জানা গিয়েছে। অথচ, গোটা পরিকল্পনার মধ্যে কোথাও হকারদের পুনর্বাসনের কথা বলা নেই। বর্তমানে প্রচুর সংখ্যক হকার স্টেশনে স্টল করে, জীবিকা নির্বাহ করছেন। ফলে, স্টেশনে উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গেই এক বিরাট সংখ্যক পরিবার চরম অনিশ্চয়তার মুখে পড়বে বলে আশঙ্কা।
কৃষ্ণনগর স্টেশনে ১৯৯৬ সাল থেকে চায়ের স্টল চালাচ্ছেন সমর সিংহ। তিনি বলেন, “আমাদের উঠে যেতে হবে। তা হলে খাব কী? পরিবারের আট সদস্য এই স্টলের উপরেই নির্ভরশীল। ৫৬ বঠর বয়স হয়ে গিয়েছে। এখন বিকল্প কোনও জীবিকার সন্ধান করাও সম্ভব নয়।”
তাঁর কথায়, “আমরাও চাই স্টেশনের উন্নতি হোক। যাত্রী পরিষেবা বাড়ুক। কিন্তু আমাদের পেটে লাথি মেরে সেটা যেন না হয়।”
পুনর্বাসন ছাড়া হকার উচ্ছেদের বিরোধিতায় নেমেছে বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠন। সকলেই রেলের জমিতে বিকল্প ব্যবস্থা করে দেওয়ার দাবি জানাচ্ছে। সিটু-র নদিয়া জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক এসএম সাদি বলেন, “এমনিতেই চরম কর্মসংস্থানের সঙ্কট। তার উপরে শ’য়ে শ’য়ে হকারকে যদি জীবিকীহীন করা হয়, তা হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। আমরা চাই স্টেশনের উন্নতি হোক। কিন্তু হকারদের জন্য রেলের জমিতেই বিকল্প ব্যবস্থা করতে হবে।”
আইএনটিটিইউসি-র নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সনৎ চক্রবর্তী বলেন, “হকারদের পেটে লাথি মারার পরিকল্পনা করছে মোদী সরকার। রেলের প্রচুর জমি আছে। হকারদের পুনর্বাসন দিতে হবে।” একই কথা বলছে বিজেপি-র শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘের শিয়ালদহ ডিভিশন কমিটির সম্পাদক তারক আচার্য। তিনি বলেন, “যাত্রী পরিষেবার জন্য স্টেশনের পরিকাঠামোর উন্নতি অবশই দরকার। আমরাও সেটা চাই। কিন্তু সেই সঙ্গে রেলের জমিতে হকারদের পুনর্বাসন চাই, সেটাও দিতে হবে।”
যদিও পূর্ব রেলের জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র বলেন, “রেল তো আর হকারদের বসায়নি। ওঁরা অবৈধ ভাবে বসে আছেন।” একইসঙ্গে তাঁর দাবি— “পুনর্বাসনের দায়িত্ব রাজ্য সরকারকেই নিতে হবে।”
যা শুনে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি সনৎ চক্রবর্তীর পাল্টা দাবি, “রাজ্য সরকার কেন দায়িত্ব নিতে যাবে? রেলের জমিতে হকারেরা বসে আছেন। রেলকেই দায় নিতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy