প্রতীকী ছবি
তাঁতের কাজ করে মাসে সাড়ে তিন হাজার টাকা আয়। ওই টাকা থেকেই বাড়িতে বৃদ্ধা মা, স্ত্রী, দুই ছেলে ও এক ভাইকে নিয়ে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর অবস্থা। তাই বছর পাঁচেক আগে গুজরাত গিয়েছিলাম পাইপ লাইনের কাজ করতে। মাসে ১৪ হাজার টাকা রোজগার। কোনওমতে সালারের শিরপাড়া তিন জন ও পূর্ব বর্ধমানের পাঁচুন্দি গ্রামের এক জন মোট পাঁচ জন মিলে থাকতাম। মাসে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা নিজের খরচ হত। বাকি নয় হাজার বাড়িতে পাঠিয়ে দিতাম। তাতে মায়ের ওষুধ ও দুই ছেলের পড়াশোনার খরচ চালিয়ে অভাব দূর হয়েছিল। দুর্গা পুজোর পর গুজরাত যেতাম, টানা দশ মাস কাজ করার পর বাড়ি ফিরতাম।
এ বার করোনাভাইরাস সব উল্টেপাল্টে দিল। জনতা কার্ফুর সাত দিন আগে থেকেই আমাদের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। জনতা কার্ফুর দিন জানতে পেরেছিলাম করোনাভাইরাসের নাম। তারপর থেকেই লকডাউন শুরু।
তখন চিন্তা করিনি। তিন সপ্তাহ পড়ে লকডাউন উঠে গিয়ে কাজ হবে তাই বাড়ি ফেরার চেষ্টাও করিনি। এদিকে পকেটের টাকা ফুরিয়ে আসছে। বাজারে আনাজপাতি থেকে চাল ডালের দাম বেড়েছে। সপ্তাহে এক দিন বাজার করতে যেতাম। ভাঙা ভাঙা হিন্দি কথা বলতে পারি, তাতে কাজ চলে যায়। কিন্তু রাস্তায় পুলিশ দেখে ওই হিন্দিটুকুও হারিয়ে যাওয়ার অবস্থা।
বাড়ি থেকে মাত্র ২০০ মিটার দূরে বাজার যেতে চার বার পুলিশকে কৈফিয়ত দিতে হয়েছে। ঠিক মতো না বলতে পারলেই জুটেছে লাঠির মার। এমনিতে সকালে রুটি, দুপুরে ভাত, সন্ধ্যায় মুড়ি ও রাতে ফের ভাত খাওয়ার অভ্যাস ছিল। কিন্তু লকডাউনের কারণে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর সকালে চা খাওয়া ভুলে যেতে হয়েছিল আমাদের। বেলা এগারোটায় ভাত খেয়ে ফের রাত ন’টায় ভাত খেয়ে নিতাম। মাঝে দশ ঘণ্টা আর কিছু খেতাম না। খিদে পেলেও আমাদের কিছু করার ছিল না। বাড়িতে খোঁজ নিত, আমরা সত্যি কথা কোনও দিন বলিনি। কষ্ট করেই ৭০ দিন কাটিয়েছি। আয় নেই অথচ নিয়মিত বাড়ি ভাড়া দিয়ে খাবার খেয়ে ওখানে থাকা যায় না। শেষে জানতে পারি বাংলার জন্য ট্রেন দিয়েছে। ওই ট্রেনে বাড়ি ফেরার জন্য কোনও ভাড়া দিতে হয়নি।
বহরমপুরে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর বাসে করে আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছে। ট্রেনের মধ্যে খাবার বলতে পাঁউরুটি, শুকনো মুড়ি আর চানাচুর খেয়ে তিন দিনে বাড়ি ফিরেছি। ওই ৭০ দিন আমরা যে কষ্টে ছিলাম তাতে আর ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে যাওয়ার ইচ্ছা নেই। কিন্তু ভিন্ রাজ্যে কাজ করতে না গেলে সংসার কী ভাবে চলবে এই প্রশ্ন উঠছে নিজের মনে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy