তবুও ফেরে না হুঁশ। লালবাগে দুর্ঘটনার পরেও বাসের জানলার বাইরে বেরিয়ে থাকল যাত্রীদের হাত ও মাথা। রবিবার বহরমপুরে। ছবি: গৌতম প্রামাণিক
অন্য দিনের মতোই তিনি বাসে উঠেছিলেন জিয়াগঞ্জের সন্ন্যাসীতলা থেকে। গন্তব্য ছিল লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের গেট। কিন্তু গন্তব্যে আর পৌঁছতে পারলেন না ভানু মণ্ডল (৩২)। বাসের জানলার বাইরে মাথা বের করাই কাল হল তাঁর। লালবাগ সব্জিকাটরা মোড়ে খুঁটির ধাক্কায় মৃত্যু হল ভানুর।
‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ’-এর প্রচারে মোটরবাইক চালক ও আরোহীদের হেলমেট পরার ব্যাপারে সচেতন করে পুলিশ। পাশাপাশি বাসযাত্রীদেরও অনুরোধ করা হয়, তাঁরা যেন জানলার বাইরে হাত বা মাথা না রাখেন। কিন্তু তার পরেও যে বহু যাত্রী সচেতন নন তা ফের প্রমাণ করে দিল রবিবার সকালে লালবাগের ওই ঘটনা।
জেলায় এমন ঘটনা অবশ্য এই প্রথম নয়। এর আগে বড়ঞায় দুই মহিলার হাত বাসের বাইরে ছিল। লরির ধাক্কায় তাঁদের দু’জনেরই কনুই থেকে হাত ছিঁড়ে পড়ে। কান্দিতে একই ভাবে গাছের সঙ্গে বাসের ধাক্কায় এক মহিলার হাত বাদ যায়। ইসলামপুরে বাসের জানলা দিয়ে হাত বাড়িয়ে এক মহিলা লিচু কিনছিলেন। সেই সময় ট্রাকের ধাক্কায় তাঁর হাতও ছিঁড়ে পড়ে। সেই তালিকায় এ বার জুড়ে গেল লালবাগের সব্জিকাটরাও।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জিয়াগঞ্জের বাসিন্দা ভানু লালবাগ হাসপাতালের গেটে ফল বিক্রি করতেন। এ দিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ সন্ন্যাসীতলা থেকে বাসে ওঠেন। বাসটি লালবাগ সব্জিকাটরা মোড়ে আসতেই চলন্ত বাসের জানলা দিয়ে মুখ বের করেছিলেন ভানু। রাস্তার পাশেই রয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। সেই খুঁটির ধাক্কায় থেঁতলে যায় ভানুর মাথা।
পরিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, ভানু জিয়াগঞ্জে থাকলেও তিনি লালবাগের কুঠিয়াপাড়ার বাসিন্দা। ভানুর সাত ও পাঁচ বছরের দুই ছেলে আছে। ভানুর স্বামী শম্ভু মণ্ডল টোটো চালাতেন। মাস তিনেক আগে টোটো বিক্রি করে দেন তিনি। তার পর সে ভাবে কোনও কাজকর্ম করতেন না। তা নিয়ে স্বামী-স্ত্রীর প্রায়ই ঝামেলা হত।
মাস দুয়েক আগে ভানু তাঁর দুই ছেলেকে নিয়ে বাপের বাড়ি জিয়াগঞ্জের বিলকান্দিতে চলে আসেন। তাদের স্কুলে ভর্তি করান। সংসারের খরচ চালাতে ভানু লালবাগ মহকুমা হাসপাতালের গেটে ফলের ব্যবসা শুরু করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বাসটি বেশ গতিতেই আসছিল। সব্জিকাটরার মোড়ে একটি ট্রাক দাঁড়িয়েছিল। ওই ট্রাকটিকে পাশ কাটাতে গিয়ে বিদ্যুতের খুঁটির দিকে একটু বেশিই ঝুঁকে যায় বাসটি। তখনই এই বিপত্তি।
মুর্শিদাবাদের আইসি শ্যামল বিশ্বাস বলেন, ‘‘সেফ ড্রাইভ, সেভ লাইফ কর্মসূচিতে আমরা নাগাড়ে লোকজনকে সচেতন করছি। কিন্তু মানুষ সচেতন হচ্ছেন কই? আর কবে লোকজন নিজের ভালটা নিজে বুঝবেন, কে জানে!’’
বাসটিকে আটক করেছে পুলিশ। তবে, বাসের চালক ও খালাসি পলাতক। ভানুর মামা কালু মণ্ডল বলেন, ‘‘ভানুর ছেলে দু’টিকে বাড়ি গিয়ে কী বলব, বলুন তো!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy