Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
এফসিআই গুদাম থেকে পাচারের অভিযোগ

বস্তা ভর্তি গম ‘ভ্যানিশ’

বাইরে তখন মালবাহী বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন ভ্যান দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার পাশেই নবনির্মিত সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাসের ভিতরে ও আশপাশে একাধিক লোক দাঁড়িয়ে। তাঁরাই গুদাম থেকে গম ভর্তি লরি বাইরে এলে সেখান থেকে বস্তা বস্তা গম নামিয়ে নেন।

লরি থেকে নামিয়ে ইঞ্জিন ভ্যানে তোলা হল গম। নিজস্ব চিত্র

লরি থেকে নামিয়ে ইঞ্জিন ভ্যানে তোলা হল গম। নিজস্ব চিত্র

মনিরুল শেখ 
কল্যাণী শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০১৯ ০১:২৭
Share: Save:

শহরের মেন স্টেশনের কোল ঘেঁষে রয়েছে ফুড কর্পোরেশন অব ইন্ডিয়া (এফসিআই)-র বিশাল গুদাম। সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণ গম গণবন্টন ব্যবস্থার মাধ্যমে উপভোক্তাদের কাছে না গিয়ে খোলা বাজারে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ অনেক দিনের। বহু দিন ধরেই এলাকার কিছু দুষ্কৃতী ওই কারবার করে আসছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। বিষয়টি আনন্দবাজারের তরফে সরেজমিনে খতিয়ে দেখতে সোমবার সকালে সেখানে যাওয়া হয়েছিল।

বাইরে তখন মালবাহী বেশ কয়েকটি ইঞ্জিন ভ্যান দাঁড়িয়ে রয়েছে। তার পাশেই নবনির্মিত সেন্ট্রাল বাস টার্মিনাসের ভিতরে ও আশপাশে একাধিক লোক দাঁড়িয়ে। তাঁরাই গুদাম থেকে গম ভর্তি লরি বাইরে এলে সেখান থেকে বস্তা বস্তা গম নামিয়ে নেন। জানা গেল, বেলা ৩টে নাগাদ গাড়ি বার হবে। তার পরেই ‘কাজ’ শুরু হবে এখানকার দীর্ঘদিনের এক কারবারির। নির্ধারিত সময়ের একটু আগেই সেই লোকটিকে দেখা গেল। সাদা জামা পরে ব্যস্ত হয়ে বিভিন্ন জায়গায় ফোন করছেন। খানিক পরে গম ভর্তি লরি গুদামের মূল ফটক পার করতেই ইঞ্জিন ভ্যানের চালক প্রস্তুত হলেন। একে একে গাড়ি এসে থামতে লাগল ওই ভ্যানের সামনে।

চালক ত্রিপল খুলে বস্তা- বস্তা করে গম ফেলতে থাকলেন ভ্যানে। গম ‘ভ্যানিশ’-এর সেই দৃশ্যের ছবি একটু দূর থেকে তোলা গেল। মিনিট পনেরোর মধ্যে ভ্যান প্রায় ভর্তি গেল। মাল নামিয়েই চালকেরা ছুটে যাচ্ছেন ওই ব্যক্তির কাছে। তিনি তাঁদের টাকা মিটিয়ে দিচ্ছেন। সূত্রের খবর, ওই কারবারি গম বাজারদরের থেকে কেজি প্রতি বেশ কয়েক টাকা কমে কিনে নেন। তার পরে খোলাবাজারে চড়া দরে বেচে দেন। গোটা কর্মকাণ্ডের ছবি তোলার সময় তাঁর চোখ পড়ে ক্যামেরায়। কাছে এসে হুমকির স্বরে জানান, ছবি তোলা যাবে না, কারণ চালকেরা ভয় পাচ্ছেন।

তখন সাংবাদিক পরিচয় দিতে তিনি নির্লিপ্ত গলাতেই জানালেন, এই কারবার বহু বছর ধরে চলছে। কল্যাণীর এক জন এর মাথা। তিনি তাঁর ‘গুরু!’ তাঁকে ফোন করে কথাও বলিয়ে দেন। টেলিফোনের ও পার থেকে সেই ‘গুরু’ বলেন, ‘‘এটা পুরনো কারবার। এর সঙ্গে বহু লোকের রুটিরুজি জড়িয়ে। এটা বন্ধ করলে অনেকের সমস্যা হবে।’’ গুদামের ও পাণ্ডা এর পর দাবি করেন, ‘‘তাঁরা এখানে কাজ না-করলে তা করবে ব্যারাকপুর এক্সপ্রেসওয়ের ধারের এক জন। এক জনকে বন্ধ করতে বাধ্য করে এটা আটকানো যাবে না।’’

এত দিন ধরে দিনের আলোয় এ ভাবে সরকারি মাল চুরি হচ্ছে কী ভাবে? প্রশাসন কেন নিশ্চুপ? খাদ্য সুরক্ষা আইনে কেন্দ্র তিন শ্রেণির উপভোক্তাদের চাল-গম দেয়। সেই মাল এফসিআই থেকেই যায়। আর রাজ্য খাদ্য সুরক্ষার অধীনে দুই শ্রেণির উপভোক্তাকে যে গম দেওয়া হয় তা-ও রাজ্য এফসিআই থেকে যায়। গরিব মানুষের খাদ্য এ ভাবে মাঝপথে বেহাত হওয়াটা দুর্ভাগ্যজনক বলে মানছেন অনেকেই।

কল্যাণীর এফসিআই-এর ডিপোর ম্যানেজার উত্তম ঘোষ এই মুহূর্তে ছুটিতে রয়েছেন। তাঁর অনুপস্থিতিতে সহকারী ম্যানেজার জয়দেব মণ্ডল ডিপোর দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি দাবি করেন, ‘‘গম চুরির বিষয়টা গুদাম চত্বরের ভিতরে হচ্ছে না। গেট পেরিয়ে কী হচ্ছে বা হয় তা আমরা দেখতে পাই না।’’ অর্থাৎ শস্য নিয়ে যাওয়ার গোটা পথে কার্যত সরকারি নজরদারি থাকে না, সেটা তাঁর কথায় স্পষ্ট হয়েছে। গাড়িতে নির্দিষ্ট পরিমাণের অতিরিক্ত গম লোড করার অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন।

অন্য বিষয়গুলি:

FCI Wheat Wheat Smuggling
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy