Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

ফেরার ট্রেন জুটল না ওঁদের ভাগ্যে

ট্রেনে বাড়ি আসার জন্য অনলাইনে আবেদনও করেছিলেন এই জেলার কয়েক জন শ্রমিক। কিন্তু বর্তমানে স্টেটাস ‘পেন্ডিং’ দেখাচ্ছে। আর তাতেই রাতের ঘুম উড়েছে নাকাশিপাড়ার ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের।

—নিজস্ব চিত্র

—নিজস্ব চিত্র

সন্দীপ পাল
কালীগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২০ ০১:০৩
Share: Save:

পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরাতে কেন্দ্র তথা রাজ্য সরকার বিশেষ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। সোমবার রাজস্থানের অজমের শরিফ থেকে এই বিশেষ ট্রেন ছাড়ে। ওই ট্রেনে বাড়ি আসার জন্য অনলাইনে আবেদনও করেছিলেন এই জেলার কয়েক জন শ্রমিক। কিন্তু বর্তমানে স্টেটাস ‘পেন্ডিং’ দেখাচ্ছে। আর তাতেই রাতের ঘুম উড়েছে নাকাশিপাড়ার ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের।

এত দিন লকডাউনে ভিন্ রাজ্যে আটকে থাকার পর প্রশাসনের সিদ্ধান্তে খানিক আশার আলো দেখেছিলেন ওঁরা। কিন্তু ট্রেনের ফেরার ‘কনফার্ম’ টিকিট হাতে না পেয়ে চিন্তায় পড়েছেন ওই শ্রমিকেরা। রীতিমতো দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। বেশ বুঝতে পারছেন, এত অপেক্ষার পর ট্রেন ছাড়লেও এই যাত্রায় ওঁদের বাড়ি ফেরা হল না।

এই শ্রমিকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, কাজের খোঁজে বছর পাঁচেক আগে নাকাশিপাড়া থেকে জয়পুরের চান্দাবাজির লাখের গ্রামে পাথর ভাঙার কাজে গিয়েছিলেন ওঁরা। করোনাভাইরাস সংক্রমণের আতঙ্কে গত ২০ মার্চ থেকে তাঁদের কাজ বন্ধ রয়েছে। যার জেরে রোজের টাকাও মিলছে না। জমানো টাকা যা ছিল, তা প্রায় শেষ। মার্চের শেষ থেকে রোজগারহীন অবস্থায় সেখানে গৃহবন্দি হয়ে রয়েছেন ওই পরিযায়ী শ্রমিকেরা। এই মুহূর্তে সেখানে আটকে রয়েছেন কুড়ি জন। এঁদের মধ্যে নাকাশিপাড়ার বিলকুমারির দশ জন, চন্ডীপুরের দুই জন, আরবেতা ও বার্নিয়ার এক জন করে রয়েছেন। বাকিরা সবাই অন্য রাজ্যের বাসিন্দা।

ওই শ্রমিকেরা জানাচ্ছেন, খাবার বলতে মাসখানিক ধরে জুটছে আলু সেদ্ধ-ভাত। তরি-তরকারির স্বাদ প্রায় ভুলেই গিয়েছেন তাঁরা। মালিক কিছু চাল ও আলু কিনে দিয়েছেন, তাই দিয়েই চলছে। তবে এই ভাবে আর কতদিন চলবে, জানেন না ওঁরা। জানা গেল, প্রথম দিকে কয়েক জন খাবারের সমস্যা নিয়ে খবর জানতে এলেও পরে আর কেউ খাবার দিতে আসেননি।

ওই শ্রমিকেরা জানাচ্ছেন, মোবাইলে পরিযায়ী শ্রমিকদের হেঁটে বাড়ি ফেরার খবর পড়েছেন। কিন্তু তাঁদের সাহসে কুলোয়নি। ওত দূর থেকে বাড়ি ফিরতে পারবেন, সেই আশাও নেই। তাই সরকারি নির্দেশ জানার পরে চান্দাবাজির বাজারে গিয়ে এক দোকান থেকে পঞ্চাশ টাকার বিনিময়ে বাড়ি আসার জন্য অনলাইন আবেদন করেন। স্থানীয় পঞ্চায়েতের তরফ থেকে নাম লিখে নিয়ে যায়। থানায় তাঁদের আধার কার্ডের জেরক্স জমাও করে আসেন। কিন্তু দুই দিন আগে ওই আবেদনের বিষয়ে জানতে গেলে দোকানদার জানিয়ে দেন, আবেদন ‘পেন্ডিং’ হয়ে রয়েছে। তার পর থেকেই হতাশায় ভুগছেন ওই শ্রমিকেরা। তাঁদের একটাই ভাবনা— বাড়ি ফেরা হবে কি?

শ্রমিকদের এক জন ইকবাল মণ্ডল এ দিন ফোনে বলেন, ‘‘ভেবেছিলাম এই ট্রেনেই বাড়ি ফিরতে পারব। কিন্তু তা আর হল না। সব কিছুই তো করলাম। তা-ও যেতে পারলাম না বাড়ি। তার উপরে কেউ আমাদের খোঁজ নেয় না। পকেটের টাকা সব শেষ। এর পর চালাব কী করে!’’ আর এক শ্রমিকের আক্ষেপ, ‘‘পরিবারের লোক খুব চিন্তায় রয়েছে। ফোন করলেই কান্নকাটি করে। এখন কোনও মতে ফিরতে পারলে হয়।’’

এই বিষয়ে নদিয়ার জেলাশাসক বিভু গোয়েলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘‘প্রশাসন থেকে পরিযায়ী শ্রমিকদের ফিরিয়ে আনার যে ব্যবস্থা চলছে, তাতে তাঁরা পর পর ফিরবেন। কী ভাবে হবে, সেই সিডিউল আমার কাছে নেই। তবে সকলকেই ফেরানোর ব্যবস্থা করা হবে।’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy