প্রতীকী ছবি।
ঢালাও প্রচার রয়েছে ঠিকই তবে শিশু-শিক্ষার ক্ষেত্রে সেই অনলাইন ক্লাস তেমন প্রভাব ফেলছে এ কথা জোর দিয়ে বলতে পারছেন না জেলা শিক্ষা দফতর। অধিকাংশ স্কুলেই পড়ুয়াদের স্মার্ট ফোন নেই। যাদের রয়েছে, তাদের কাছে চিনের প্রাচীরের মতো বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে নেট-সমস্যা। ফলে প্রচারের বোলবোলাওয়ের আড়ালে পঠন কতটা হচ্ছে তা নিয়ে সংশয় থাকছেই।
লকডাউনের তিন মাস পেরিয়ে গিয়েছে। স্কুল বন্ধ। এই অবস্থায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে শিক্ষ-বিধি মেনে জেলার স্কুলেও অনলাইন ক্লাসে পঠন-পাঠন শুরু হয়েছে। কিন্তু নেটের নিদারুণ অবস্থার জন্য ছেলে-মেয়েরা সে ক্লাসে তেমন উৎসাহ পাচ্ছে না। তার উপরে পঠন পদ্ধতিতে ফাঁকফোঁকড় থাকায় ছাত্রেরা যে টানা ক্লাস করছে তেমনও নয়, জানাচ্ছেন বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকেরা জানাচ্ছেন।
বেসরকারি স্কুলগুলিতে পরিকাঠামোগত কিছু সুবিধা থাকলেও সরকারি স্কুলে অনলাইন ক্লাস বলতে মোবাইলে ভিডিও করে তা ইউটিউব, কিংবা ফেসবুকে আপলোড করা। শিক্ষক যা পড়ালেন তাতে ছাত্রছাত্রীরা কতটা উপকৃত হল তা জানার সুযোগ নেই। কারণ পড়া ধরার সুযোগ নেই। নেই বুঝতে না পারলে তা ফের একবার ঝালিয়ে নেওয়ার সুযোগ।
বাস্তব সমস্যা আরও করুণ, স্মার্টফোন ছাড়া অনলাইন ক্লাস সম্ভব নয়, কিন্তু বহু সরকারি স্কুলে যাঁদের পঠন-পাঠন তাঁদের একটা বড় অংশের দিন আনি ধিন খাই অবস্থা। স্মার্টফোন সেখানে রীতিমতো বাতুলতা। ফলে বহু পড়ুয়ার ক্লাস করা শিকেয়। সুতি থেকে শংসেরগঞ্জ, বেলডাঙা থেকে কান্দি— অধিকাংশ দিনমজুর কিংবা বিড়ি শ্রমিক পরিবারে স্মার্টফোন নেই। জোতকমল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক শিবশঙ্কর সাহা বলছেন, “অনলাইনে ক্লাস অনেকেই করছেন ঠিকই। কিন্তু বাস্তব তো ঠিক এমন প্রযুক্তির সঙ্গে সঙ্গে তাল মেলানোর মতো নয়, তেমন প্রযুক্তির ফোন না থাকলে ক্লাস করবে কী করে?’’ শ্রীকান্তবাটী হাইস্কুলের প্রধানশিক্ষক উৎপল মণ্ডল বলছেন, “এক একটা ক্লাসে ১৫০ থেকে ২০০ ছাত্রছাত্রী। বেশির ভাগেরই স্মার্ট ফোন নেই। দু-চার দিন শুরু করেছিলাম। কিন্তু পড়ুয়াদের কোনও লাভ হচ্ছে না। স্কুলের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশকে তার সঙ্গে যুক্তই করা যায়নি। তাই বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিয়েছি। বাস্তবের সঙ্গে না মিললে কী করব!” সুতির সীমান্ত ঘেঁষা গ্রাম গোঠা। স্কুলের প্রধান শিক্ষক আশিস তিওয়ারি বলছেন, “পাঁচ হাজার ছাত্র ছাত্রী। বিড়ি শ্রমিক পরিবারের ছেলেমেয়ে। একেবারে পদ্মা ঘেঁষা প্রত্যন্ত এলাকা। সব সময় নেটের সংযোগ মেলে না। স্মার্টফোনও নেই অনেকের। তবু কয়েকজন শিক্ষক চেষ্টা করেছেন অনলাইনে ক্লাস করার। কিন্তু ছেলেমেয়েরা অংশ নেবে কী করে!’’
ধুলিয়ানের একটি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্রী সাবিনা ইয়াসমিন। কাচুমাচু মুখে সে জানায়, ‘‘বাবা টোটো চালান। দু’ মাস ধরে কাজ নেই। খুব কষ্টে সংসার চলছে। স্মার্টফোন পাব কোথা থেকে!’’
যা শুনে স্থানীয় এক স্কুলের শিক্ষকের মন্তব্য, ‘‘হেঁকে বসলাম বিরিয়ানি রাঁধ, আর দিলাম পুঁইশাক, স্বাদ হবে কী করে বাপু, আমাদের গলদটা যে গোড়ায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy