Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

আড়াই লাখের যাত্রা থমকে রাজ্য-সীমান্তে

গুজরাটের সুরাত থেকে সন্তানকে ফেরাতে নিজের শেষ সম্বল খুইয়েছেন ইসলামপুরের পমাইপুর এলাকার একাধিক পরিবার।

অসহায় শ্রমিকেরা। —নিজস্ব চিত্র

অসহায় শ্রমিকেরা। —নিজস্ব চিত্র

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ইসলামপুর শেষ আপডেট: ০৫ মে ২০২০ ০০:৫৪
Share: Save:

নুন আনতে পান্তা ফুরায় আঞ্জুরা বিবির উঠোনে। টানাটানির সেই সংসারে অনেক কষ্টে একটা ছাগল পুষেছিলেন, বকরি ইদের আগে চড়া দামে বিক্রি করবেন বলে। সেই বাড়তি আয়ের স্বপ্ন এখন শিকে। ভিন রাজ্য থেকে ছেলেকে ফেরাতে কদিন আগে সেই ঘাস-পাতার যত্নে বড় করে তোলা ছাগলটিকে শেষতক বিক্রি করে এলেন হাটে। আঞ্জুরা অবশ্য একা নন, লকডাউনে থমকে পড়া দেশের নানান কোণায় আটকে পড়া ছেলেপুলেকে ঘরে ফেরাতে কেই হাত পাতছেন গ্রামের মাতব্বরের কাছে, কেউ বা চড়া সুদ গুনে ধার নিচ্ছেন মহাজনের কাছে টাকা।আর কেউ বা তাঁর পুরনো দুধেল গরুটিকেই হাজার দুয়েক টাকায় তুলে দিচ্ছেন গয়লাদের হাতে। সেই তালিকায় আঞ্জুরার প্রয়াস।

গুজরাটের সুরাত থেকে সন্তানকে ফেরাতে নিজের শেষ সম্বল খুইয়েছেন ইসলামপুরের পমাইপুর এলাকার একাধিক পরিবার। তবে তাতেও যে সুরাহা হয়েছে এমন নয়। এত কিছুর পরেও ঘরে ফেরা হয়নি পমাইপুর এলাকার ৪২ জন শ্রমিকের। আড়াই লক্ষ টাকা দিয়ে ভাড়া করা বাস আটকে গিয়েছে ঝাড়খন্ড পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তে কুমারডুবি এলাকায়। খবর এসেছে, খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সে বাস সীমানা পার করলেও চোখ রাঙিয়ে বাস থামিয়েছে পশ্চিম বর্ধমানের কুলটি থানার পুলিশ। আগে পরীক্ষা তার পরে বাড়ি। কথাটা ভুল কিছু নয়, করোনাভাইরাস সংক্রমণের ভয়ে প্রাথমিক পরীক্ষাটুকু জরুরি ঠিকই, তবে সর্বস্ব খুইয়ে ঘরে ফেরার তোড়জোড় করা মানুষগুলোর সেই পরীক্ষা একটু ধ্রুত করলে হয় না, আব্দার করছেন রানিনগরের গাঁ-গঞ্জে ছড়িয়ে থাকা তাঁদের পরিবারের লোকজন। রানিনগর ১-এর বিডিও মোহাম্মদ ইকবাল অবশ্য বলছেন, "শ্রমিকদের আটকে থাকার খবর তো পাইনি। তাঁদের পরিবারের পক্ষ থেকেও কিছু জানানো হয়নি। এমন জানলে তো আমরা এখান থেকে যোগাযোগ করতাম।" এখন উপায়?

মুর্শিদাবাদের বিভিন্ন প্রান্তের নির্মাণ শ্রমিকেরা ছড়িয়ে রয়েছেন দেশের বিভিন্ন শহরে। রানিনগর এলাকার পমাইপুর গ্রামের ৪২ জন নির্মাণ শ্রমিক ছিলেন গুজরাটের সুরাতে। ইদের আগে ঘরে ফেরা তাঁদের রেওয়াজ। দূর রাজ্য কিংবা আরব মুলুক, যেখানেই থাকেন না কেন, এই সময়ে ঘরে ফেরেন তাঁরা। নিভু নিভু পরিবারগুলো, সামান্য বাড়তি আয়ের টাকায় এ সময়ে একটু ঝলমলে হয়। দীর্ঘ লকডাউন সেই সব চেনা স্বপ্নে পাঁচিল তুলেছে। ঘর যেন আরও সুদুর হয়ে গিয়েছে। সুরাতে আটকে পড়া শ্রমিক তানভির আহমেদ ফোনে বলছেন, ‘‘দিনের পর দিন ঘরে বন্দি থেকে সর্বস্বান্ত আমরা, শেষ পর্যন্ত বাড়ি থেকে গরু ছাগল বিক্রি করে টাকা পাঠিয়ে ছিল। সেই টাকা দিয়ে সকলে মিলে আড়াই লক্ষ টাকায় একটি বাস ভাড়া করে বাড়ির দিকে ভেসে পড়েছিলাম। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজ্যের সীমান্ত এসে আটকে গিয়েছি, এখন তীরে এসে নৌকা ডোবার দশা।’’

বর্ধমানের কুলটি থানা এলাকায় ওই বাসটি ঢোকার পরেই আটকে দিয়েছে পুলিশ। শ্রমিকেরা জানান, সোমবার সকালে বাস আটকে তাঁদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে—ফিরে যাও গুজরাত। আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনার সুকেশ জৈন জানান, নবান্ন থেকে অনুমতি না পেলে ভিন রাজ্যের কোনও বাসই ছাড়া যাবে না। প্রায় সব-হারা মানুষগুলো তাই এ দিন সকাল থেকে রাস্তার উপরে বসে রয়েছেন।

মুর্শিদাবাদের স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তৃণমূলের আমিনুল হাসান অবশ্য আশ্বাস দিয়েছেন, ‘‘প্রশাসনের কর্তাদের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে, ঘরের মানুষকে ঘরে ফিরেও আটকে থাকতে হবে কেন!’’

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy