বিমান বসু। —ফাইল চিত্র।
নেতা হিসেবে এক ডাকে তাঁদের চেনে সবাই। তবু সিপিএমের এই ভরা সম্মেলনের মরসুমে তাঁদের দেখা নেই!
রাজ্য জুড়ে এখন চলছে সিপিএমের জেলা সম্মেলন। ডিসেম্বর, জানুয়ারি পেরিয়ে ফেব্রুয়ারিতেও আছে জেলা সম্মেলন। তিন মাসের এই প্রক্রিয়া শেষ হবে ফেব্রুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে হুগলি জেলার ডানকুনিতে রাজ্য সম্মেলনে গিয়ে। কিন্তু এই জেলা সম্মেলনের পর্বে দেখা যাচ্ছে না প্রবীণ সিপিএম নেতা বিমান বসুকে। অনুপস্থিত আর এক বর্ষীয়ান নেতা রবীন দেবও। খুব সামান্য চোখে পড়ছে প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রকে। দলের বহু কর্মী-সমর্থকের কাছেই সিপিএমের সম্মেলন আর বিমান-রবীনেরা প্রায় সমার্থক! কিন্তু দল নিয়মের কঠিন গেরোয় বেঁধে ফেলেছে তাঁদেরও।
আলিমুদ্দিন স্ট্রিট থেকে বেরিয়ে বড় রাস্তা পেরোলেই প্রমোদ দাশগুপ্ত ভবন। দলের রাজ্য দফতরের অদূরে সেই ভবনে কলকাতা জেলা সিপিএমের সম্মেলন হয়ে গেল সদ্য। ‘ঘরের কাছে’ সেই সম্মেলনের মঞ্চেও দেখা যায়নি বিমান-রবীনকে। সূর্যকান্ত অবশ্য সেখানে এক দিন ছিলেন। কলকাতার আগে আরও হাফ ডজ়ন জেলার সম্মেলন হয়ে গিয়েছে। তার কোনওটাতেই ছিলেন না বিমান, যাননি রবীনও। এর পরের জেলা সম্মেলনগুলিতে যাবেন, তেমন কোনও নিশ্চয়তাও নেই।
বীরভূম, হুগলি, দক্ষিণ ২৪ পরগনা হোক বা কলকাতা— বিভিন্ন জেলা সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন সিপিএমের রাজ্য নেতারা। সম্মেলনে উপস্থিত থেকেছেন কেন্দ্রীয় কমিটির একাধিক সদস্য ও রাজ্য নেতৃত্ব। তা হলে কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হয়েও বিমান (এখন আমন্ত্রিত সদস্য) বা রবীন সেখানে নেই কেন? সিপিএম সূত্রের বক্তব্য, দলের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে জেলাওয়াড়ি সম্মেলনের দায়িত্ব ভাগ করা আছে। বিমান, রবীনেরা এখন রাজ্য কমিটি এবং রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীতে নেই। তাই কেন্দ্রীয় কমিটিতে থেকেও তাঁরা এই তালিকায় নেই! একই নিয়ম প্রযোজ্য পলিটব্যুরোর সদস্য সূর্যকান্তের ক্ষেত্রেও। তবে সূত্রের খবর, পরে উত্তর ২৪ পরগনার মতো জেলার সম্মেলনে তাঁকে আমন্ত্রিত হিসেবে দেখা যেতে পারে।
সিপিএমে বয়স-নীতি কার্যকর হওয়ার পরে গত পার্টি কংগ্রেসে পলিটব্যুরো থেকে অব্যাহতি নিয়েছিলেন বিমান। নিয়ম মেনে সরে গিয়েছিলেন রাজ্য কমিটি থেকেও। আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে দলের রাজ্য দফতরের চার তলায় রাজ্য কমিটির বৈঠক চলে যখন, নীচের তলায় থাকেন প্রবীণ নেতা। সাংগঠনিক নিয়মে এখন নির্দিষ্ট কোনও জেলার সঙ্গে সংযুক্ত না-হলেও সম্মেলনে বিমান, রবীন, সূর্যকান্তদের দেখা গেলে ভাল হত বলেই মনে করেন সিপিএমের নেতা-কর্মীদের বড় অংশ। সক্রিয় নেতাদের ক্ষেত্রে সম্মেলনে এমন ‘বেড়ি’ খুব প্রয়োজন কি না, তা নিয়ে চর্চাও হচ্ছে দলের অন্দরে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর এক সদস্যের বক্তব্য, ‘‘আমাদের দল ব্যক্তিকে আলাদা গুরুত্ব দিয়ে চলে না। সংগঠনের নিয়ম মেনেই কাজ হয়। জেলা সম্মেলন চলছে কিন্তু বিমানদা, রবীনদা’দের দেখা যাচ্ছে না, এটা ভাবতে একটু খারাপ লাগছে ঠিকই। তবে ওঁরাও নীতি মেনেই দলের কাজ করছেন, রাজ্য সম্মেলনে থাকবেন।’’
সম্মেলন-পর্বকে ‘মিস’ করলেও আপাতত জ্যোতি বসু সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড সোশ্যাল স্টাডিজ়ের কাজে মনোনিবেশ করেছেন বিমান-রবীন। নিউ টাউনে আগামী ১৭ জানুয়ারি ওই গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের উদ্বোধন করার কথা পলিটব্যুরোর কো-অর্ডিনেটর প্রকাশ কারাটের। সে দিন থেকে নিউ টাউনেই হবে কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক। রবীনের কথায়, ‘‘রাজ্যের সঙ্গে সরাসরি এখন যুক্ত নই। জ্যোতি বসু সেন্টারে নির্দিষ্ট দায়িত্ব রয়েছে। বিমানদা ওই কেন্দ্রের চেয়ারম্যান। গবেষণা কেন্দ্রের প্রথম পর্যায়ের কাজ শুরু হতে চলেছে। সেই ব্যাপারে দায়িত্ব পালন করছি। সম্মেলনে দলের অন্যেরা রয়েছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy