শোকার্ত দুই পরিবার। নিজস্ব চিত্র।
তাজা দুটো প্রাণ চলে গিয়েছে।
স্তব্ধ গোটা পাড়া। মাঝে-মধ্যে শুধু ভেসে আসছে ডুকরে ওঠা কান্নার আওয়াজ। রাস্তায় দাঁড়িয়ে বহু মানুষ। আড়ালে চোখ মুছছেন কেউ-কেউ।
বৃহস্পতিবার মোটরবাইকে চেপে পূর্ব বর্ধমানের কালনায় গিয়েছিলেন শাজাহান কারিগর ও ফিরোজ মল্লিক নামে ওই দু’জন। সেখানেই ঘটে যায় দুর্ঘটনা। নদিয়ার শান্তিপুর থানার ধাইপুরে আর তাঁদের ফেরা হয়নি।
বিকেলে ধাইপাড়ায় গিয়ে জানা যায়, শাজাহানের বাবা আমিরুল কারিগরের পাঁচ মেয়ে। সেজো মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন বুলবুলিতলার কাছে শিতধরিয়া এলাকায়। কিন্তু সেখানে মেয়ের শ্বশুরবাড়িতে সমস্যা চলছিল। তা মেটাতেই এ দিন কথাবার্তা বলতে যান শাজাহান। তাঁর সঙ্গে গিয়েছিলেন আরও জনা দশ-বারো। তাঁদের মধ্যে ছিলেন ফিরোজও। কয়েকটি বাইকে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ তাঁরা রওনা দেন। ঘণ্টাখানেক পরেই দুর্ঘটনায় দু’জনের মৃত্যুর খবর আসে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, শাজাহান রাজমিস্ত্রির কাজ করতেন। কাজে তাঁর সুনাম ছিল। বিয়েও ঠিক হয়েছিল কৃষ্ণনগরের রথতলায়। আমিরুল বলেন, “ছেলেটা যাওয়ার আগে বলে গেল, ‘বাবা আসছি’। আমি বললাম, ‘সাবধানে যাস’। কী হয়ে গেল!” মৃত আর এক যুবক ফিরোজ বিবাহিত। তাঁর মেয়ে এক মাসের। বছর দুয়েক আগে কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃতে এমএ পাশ করেছেন। বাড়িতে যন্ত্রচালিত তাঁতে কাজ করতেন।
নিহত ফিরোজ মল্লিক ( বাঁ দিকে) ও শাজাহান কারিগর (ডান দিকে), নিজস্ব চিত্র
ধাইপাড়ার বাসিন্দারা জানান, দুই ভাইয়ের মধ্যে ছোট ছিলেন ফিরোজ। নানা বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত ছিলেন। স্থানীয় বাসিন্দা শরিফ খানের আক্ষেপ, “সকলের পাশে দাঁড়াত ছেলেটা। এক মাস আগেই মেয়ে হল। মেয়েকে ভাল জায়গায় পড়াবে, বড় করবে, এ সব বলত। বাচ্চাটা তো কিছু বুঝে ওঠার আগেই বাবাকে হারাল!”
হেলমেট না থাকায় সিভিক পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে দু’জনে বাসের সামনে পড়ে যান বলে কালনা পুলিশ দাবি করলেও ধাইপুরের বেশির ভাগ মানুষ তা মানতে রাজি নন। মানছে না মৃতদের পরিবারও। তাঁদের দাবি, ফিরোজদের মাথায় হেলমেট ছিল। তাঁরা বাইক থামিয়ে রাস্তার ধারে দাঁড়িয়েছিলেন। একটি বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে তাঁদের উপরে এসে পড়ে। পুলিশের তাড়া খাওয়া অন্য একটি বাইককে বাঁচাতে গিয়েই বাস নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছিল বলে তাঁদের দাবি।
এই দুর্ঘটনার জেরে দফায়-দফায় গোলমাল হয় কালনায়। পুলিশের দাবি, শান্তিপুর থেকে লোকজন গিয়ে ঝামেলা পাকায়। কিন্তু ধাইপুরের বাসিন্দাদের দাবি, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে কিছু লোকজন গেলেও গন্ডগোলে ছিলেন না। ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন শান্তিপুরের তৃণমূল বিধায়ক অরিন্দম ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, “ওখানে একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে খবর পেয়ে আমি যাই। ওখানে প্রচুর মানুষ ছিলেন। শান্তিপুরের লোকজন গিয়ে ঝামেলা করেছেন, এটা বলা বোধ হয় ঠিক হবে না।” শান্তিপুরের উপপুরপ্রধান আব্দুস সালাম কারিগর দাবি করেন, “এখান খেরে কেউ গিয়ে ঝামেলা করেনি। তখন সবাই শোকাহত। হাসপাতালে ছুটছেন। এখান থেকে কত লোকই বা গিয়েছিল, যে ঝামেলা করবে!”
সন্ধ্যায় দুজনের দেহ এসে পৌঁছয় এলাকায়। নিজের বাড়ির দাওয়ায় বসে ফিরোজের বাবা সওকত মল্লিক বলেন, ‘‘ছেলেটা কারও বিপদের কথা শুনলেই ছুটে যেত। এ দিনও তা-ই গিয়েছিল। তার এই পরিণতি!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy