Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
ছাগল বাঁচাতে কুয়োয় ঝাঁপ

উঠে এল নিথর দেহ

পানীয় জলের আকাল। কলের জল স্বপ্ন। আশপাশের পুকুরগুলিও তেমন পরিস্কার নয়। এলাকার মানুষ তাই একের পর এক কুয়ো খুঁড়েছিলেন গ্রামে। তবে, প্রয়োজন মিটে গেলেও সেই সব কুয়ো আর বোজানো হয়নি। দৌলতাবাদের এই কুয়োটিও তেমনই, মরণ ফাঁদ হয়েই পড়েছিল। মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদ থানার কলাডাঙা-নওদাপাড়া এলাকায় এমন কুয়ো যে আরও রয়ে গিয়েছে, এ দিন তা জানিয়েছেন, আশপাশের গ্রামবাসীরাই।

স্বজনহারা: দৌলতাবাদে। নিজস্ব চিত্র

স্বজনহারা: দৌলতাবাদে। নিজস্ব চিত্র

সুজাউদ্দিন
দৌলতাবাদ শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৮ ০৭:১০
Share: Save:

পরিত্যক্ত কুয়ো। ফুট আড়াই উঁচু তার পাঁচিল। তার উপরে উঠে টাল সামলাতে না পেরে পড়ে গিয়েছিল বাড়ির ছাগলটা। তাকে উদ্ধার করতে তড়িঘড়ি সেই কুয়োয় নেমেছিলেন মরসেলিম শেখ (৩৩)। উঠছেন না দেখে, মাঁর দাদা রজব আলিও (৪৫) নেমে গিয়েছিলেন কুয়োয়। বিষাক্ত গ্যাসে, মারা গেলেন তিনিও। পরে দমকল এসে তাঁদের দেহ উদ্ধার করে ইসলামপুর গ্রামীণ হাসপাতালে পাঠালেও চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, মারা গিয়েছেন দুই ভাই-ই। মারা গিয়েছে তাদের ছাগলটিও।

পানীয় জলের আকাল। কলের জল স্বপ্ন। আশপাশের পুকুরগুলিও তেমন পরিস্কার নয়। এলাকার মানুষ তাই একের পর এক কুয়ো খুঁড়েছিলেন গ্রামে। তবে, প্রয়োজন মিটে গেলেও সেই সব কুয়ো আর বোজানো হয়নি। দৌলতাবাদের এই কুয়োটিও তেমনই, মরণ ফাঁদ হয়েই পড়েছিল। মুর্শিদাবাদের দৌলতাবাদ থানার কলাডাঙা-নওদাপাড়া এলাকায় এমন কুয়ো যে আরও রয়ে গিয়েছে, এ দিন তা জানিয়েছেন, আশপাশের গ্রামবাসীরাই।

এ দিন, ওই কুয়োর গায়ে হেলান দিয়ে রাখা ছিল ইট। সেই ইটের পাঁজার উপরে উঠে লাফালাফি করার সময়ে ছাগলটি কুয়োর মধ্যে পড়ে যায়। তাতে পরিবারের লোকজন কান্নাকাটি শুরু করে দেন। এগিয়ে এসেছিলেন মুরসেলিম। ছাগল তুলতে প্রায় ৩০ ফুট গভীর কুয়োয় নেমে পড়েন। কিন্তু কুয়োয় নামার পরেই তার আর কোনও সাড়াশব্দ পাওয়া যায়নি। জানতে পেরে মাসতুতো দাদা রজব আলি কুয়োতে নেমে পড়েন মুরসেলিমকে উদ্ধারে। কিন্তু দু’জনের কোনও সাড়াশব্দ মেলে না। তখন গ্রামের মানুষ দৌলতবাদ থানায় ছোটেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আজাবুল ইসলাম বলছেন, ‘‘মুরসেলিম কিছুটা কুয়োতে নামতেই ধপ করে একটা শব্দ হল। প্রথমে সকলে ভেবেছিল হয়ত পা হড়কে পড়ে গিয়েছে, কিন্তু তার পরে আর কোনও সাড়া শব্দ পাইনি। পরে পাশের বাড়ি থেকে ছুটে আসে মাসতুতো দাদা রজব। অনেকে আপত্তি করলেও ভাইকে বাঁচাতে ঝুঁকি নিয়েই কুয়োতে নামেন তিনিও। কিছুটা নেমে হাত নেড়েছিল এক বার। তার পরে তারও কোনও সাড়া মেলেনি। প্রায় দু’ঘণ্টা পরে বহরমপুর থেকে আসে দমকলের কর্মীরা।

দমকলের ওসি সুনীলকুমার মণ্ডল বলছেন, ‘‘কুয়োয় ছাগল পড়েছে বলে খবর পাই। পরে গ্রামে এসে জানতে পারি দু’জন যুবক কুয়োয় নেমে উঠতে পারেননি। মিথেন গ্যাসের প্রভাবে ওই দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে বলে প্রাথমিক ভাবে অনুমান।’’

পরিত্যক্ত কুয়োয় ঢাকনা না থাকায় মাঝে-মধ্যেই তাতে ছাগল-মুরগি-বিড়াল পড়ে যায়। এখন দু’জনের মৃত্যুতে হুঁশ ফিরেছে মদনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের। পঞ্চায়েতের বিদায়ী প্রধান সিপিএমের আকবর আলি বলছেন, ‘‘অনেক বাড়ি বা মহল্লায় এমন খোলা কুয়ো আছে। কিন্তু কখনও কোনও দুর্ঘটনা ঘটেনি বলেই তা বন্ধ করার কথা কারও মনে হয়নি। কুয়োগুলো এ বার বন্ধ করে দেওয়া হবে।’’ বহরমপুেরর বিডিও রাখি পাল বলেন, ‘‘কুয়োগুলি যাতে বন্ধ করে দেওয়া যায় সে ব্যাপারে প্রশাসনিক স্তরে পদক্ষেপ করা হবে, যাতে ওই ঘটনা আর না ঘটে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Brother Well Goat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE