প্রতীকী ছবি। (ইনসেটে) জাহাঙ্গীর আলম।
হামিদা মনখারাপ করে বসে আছেন মাটির দাওয়ায়। সামনে বিড়ি বাঁধার কুলো। কিন্তু তাঁর বিড়ি বাঁধতে ইচ্ছে করে না। ছোট মেয়ে ফরিদার ক’দিন থেকে জ্বর। কিন্তু তার বাপ গিয়াসউদ্দিনের সে দিকে নজর নেই। একটু পরে গিয়াস বাড়ি ঢোকেন। হামিদা জানতে চান, ‘‘আইজ ফরিদার ওষুধ আইনাছো?’’
গিয়াস কথা বলেন না। ভ্যানটাকে চিলতে আঙিনার এক কোনে রাখেন।
—‘কথা শুইন্তে পাইরছো না? ওষুধ কেনে আইনল্যানা সেইটা বলো?’
—‘চুপ কইরা থাক। পরে আনছি জামালের কাছ থাইকা। ভাত দে।’
—‘উহঃ ভাত! কেনে মদ গিল্যা, লটারি কাইটা পেট ভরেনি?’
—‘চুপ! আমার টাকা। আমি যা খুশি তাই করবো।’
হামিদা চুপ করেন না। তাঁর মাথায় আগুন জ্বলে ওঠে। হামিদার চোখের দিকে তাকিয়ে রেগে গিয়ে গিয়াস বলেন, ‘‘তালাক! তালাক! তালাক!’’
হঠাৎ করে সব চুপ। তার পরে হামিদা কাঁদতে শুরু করেন। বুঝতে পারেন না, দুই মেয়েকে নিয়ে তিনি কী করবেন, কোথায় যাবেন! কিছুক্ষণের মধ্যেই পাড়ায় রটে যায়, গিয়াস হামিদাকে তালাক দিয়েছেন। ব্যস, ওঁদের বিয়ে ভেঙে যায়!
কিছু দিন আগে আমার পরিচিত এক মেয়েকে তাঁর রাজমিস্ত্রি স্বামী ফোনের মাধ্যমে তাৎক্ষণিক তিন তালাক দিয়েছেন এবং আর একটি বিয়ে করেছে। কোরান ও হাদিস-এর তালাকের নিয়মানুযায়ী তাঁরা কেউই বিবাহ বিচ্ছিন্ন হননি। কিন্তু দু’পক্ষই বিশ্বাস করে নিয়েছে, তাঁরা বিবাহ বিচ্ছিন্ন। এর কারণ কোরান ও হাদিস এ বর্ণিত তালাক সম্পর্কে অজ্ঞতা।
কোরান ও হাদিসের কোথাও বিবাহ নামক পবিত্র প্রতিষ্ঠানকে ভাঙার জন্য তাৎক্ষণিক তিন তালাকের বিধান নেই। তাৎক্ষণিক তিন তালাকের মাধ্যমে কোনও বিবাহ বিচ্ছেদ হয় না। কেউ যদি করে থাকেন, তা হলে সেটা ইসলাম অনুযায়ী অন্যায়।
কেন্দ্রীয় সরকার তালাক বিল পাশের মধ্য দিয়ে তাৎক্ষণিক তিন তালাককে নিষিদ্ধ করেছে। এই বিলকে আমি সমর্থন করি। কিন্তু কিছু সুবিধাবাদী মানুষ নিজেদের স্বার্থ চরিতার্থ করতে তাৎক্ষণিক তিন তালাক দিয়ে বিয়ে ভাঙেন। কেউ কেউ রাগের বশে করে ফেলেন। অনেকে ফোনেও তাৎক্ষণিক তিন তালাক দিয়ে বিয়ে ভাঙেন। আসলে এ ভাবে তালাক হয় না।
ইসলামের দৃষ্টিতে তালাক দেওয়া অত্যন্ত অপছন্দের ও ঘৃণ্য কাজ। বলা হয়, স্বামী রেগে গিয়ে স্ত্রীকে ১৫ বার যদি বলেন ‘আমি তোমাকে তালাক দিলাম।’ তা হলে সেটা তালাক বলে গণ্য হবে না। কারণ, রাগের মাথায় তালাক হয় না। হাজার বার বললেও হয় না। তবে ইসলামে নারীদের সম্পূর্ণ আটক করে রাখতেও বলা হয়নি; বরং তাঁরাও প্রয়োজনে যথাযথ নিয়মে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারবেন। এ জন্য তাঁদের নির্দিষ্ট ক্ষমতাও দেওয়া হয়েছে।
প্রধানশিক্ষক, লস্করপুর হাইস্কুল
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy