পায়েল খাতুন। নিজস্ব চিত্র
লিঙ্গ পরিবর্তন করে বছর কুড়ির রিন্টু মালিত্যা হয়ে উঠেছিলেন পায়েল খাতুন। সামাজিক নানান প্রশ্ন আর ধাক্কা সামাল দিয়ে, পুরুষ থেকে তাঁর স্ত্রী হয়ে ওঠার এই পরিবর্তনে বরাবর পাশে ছিলেন শুকচাঁদ শেখ। মাস পাঁচেক হল সেই শুকচাঁদকেই বিয়ে করে সংসার পেতেছিলেন পায়েল।
বেঙ্গালুরুতে ছোট্ট এক চালা ঘরে তাঁদের এই সদ্য-সংসারে বিড়ম্বনা নয় বরং ছিল নিবিড় সহাবস্থান। সমস্যাটা পেকেছিল পরিযায়ী শ্রমিক শুকচাঁদের দেশের বাড়ি ফেরায়।
সম্প্রতি নওদা থানায় অভিযোগ দায়ের করে পায়েল জানিয়েছেন— ছুটিতে গ্রামের বাড়ি আসার পরেই শুকচাঁদের বাড়ির লোক তাঁকে বিচ্ছেদের মামলা করতে চাপ দিচ্ছে। শুধু তাই নয়, বাড়িতে কার্যত ‘বন্দি’ করে শুকচাঁদের সঙ্গে যোগাযোগের সব রাস্তাই বন্ধ করে দিয়েছেন তাঁরা। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন— ‘এ আবার বিয়ে নাকি!’
অভিযোগ পেয়ে নওদার সোনাটিকুড়ি গ্রামে পুলিশ গিয়েও খোঁজ পায়নি শুকচাঁদের। পুলিশের অনুমান, অন্য কোথাও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে ওই যুবককে। হরিহরপাড়ার ওসি মৃণাল সিংহ বলছেন, ‘‘আমাদের ধারনা, পুলিশ যাচ্ছে শুনেই ওই যুবককে কোথাও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে আমরা শুকচাঁদকে থানায় হাজির করাতে বলেছি।’’
আমতলার বাসিন্দা রিন্টু মালিত্যার নাচ-গানের শখ ছেলেবেলা থেকেই। গত বছর আমতলা হাইস্কুল থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাশ করার পরে পড়াশোনায় দাঁড়ি টেনে নাচের দলের সঙ্গেই ভেসে পড়ে সে। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরভর বিহার, উত্তরপ্রদেশ কিংবা ঝাড়খন্ডের গাঁ-গঞ্জে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নেচে বেড়াত সে। আয়ের অনেকটাই সে ঢেলে দিত সংসারে। সে আয় নিতে আপত্তি না থাকলেও রুপান্তরিত হয়ে শুকচাঁদকে বিয়ে করার পরেই তার পরিবার এখন বেঁকে বসেছে। স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে শুকচাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা যাবে না।
গত নভেম্বর মাসে বেঙ্গালুরু যাওয়ার পথে ট্রেনে আলাপ পায়েল-শুকচাঁদের। পায়েল বলছেন, ‘‘এক কামরায় ছিলাম। এ কথা সে কথায় জানলাম, শুকচাঁদ আমাদের এলাকারই ছেলে। কাজ করে বেঙ্গালুরুতে। সে আলাপই আমাদের সম্পর্ক গড়ে দিয়েছিল ক্রমে।’’ নাচের অনুষ্ঠান মিটে গেলেও শুকচাঁদের টানে দেশের বাড়ি না ফিরে ওই অচেনা শহরে রান্নার কাজ নিয়েছিলেন পায়েল। আলাপ ক্রমে গড়িয়েছিল পরিণয়ে। বছর চব্বিশের শুকচাঁদ পরিযায়ী শ্রমিক। কাজ ফুরোলে ফিরে আসতেন দেশের বাড়ি। তবে বিয়ের পরে আর গ্রাম-মুখো হননি। পায়েলের দাবি, শুকচাঁদের আব্দারেই এ বছর জানুয়ারি মাসে প্রায় দেড় লক্ষ টাকা খরচ করে পুরুষ থেকে স্ত্রী— রুপান্তরিত হন পায়েল। তার পর, এপ্রিল মাসে আমতলার এক ম্যারেজ রেজিস্ট্রারের কাছে নিয়ম মেনে বিয়েও করেন তাঁরা। বিয়ের পর গ্রামে না ফিরে দু’জনেই ফিরে গিয়েছিলেন বেঙ্গালুরুর ঠিকানায়। সে খবর গ্রামের বাড়িতে পৌঁছতেই, বিয়ে মেনে নেওয়া হবে প্রতিশ্রুতি দিয়ে শুকচাঁদকে কৌশলে বাড়িতে ডেকে পাঠানো হয়। আর গ্রামে পা দিতেই তাঁকে ‘বন্দি’ করা হয় বলে অভিযোগ।
পায়েলের অভিযোগ, যেখানে সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের মতো রুপান্তরকামীদের স্বাভাবিক জীবনযাপনের সুযোগ করে দিয়েছে সেখানে এলাকার সাধারন মানুষদের চাপে এমন দুরবস্থার সামনে পড়তে হবে কেন তাঁকে? নিজের মাসির বাড়িতে বসে পায়েল বলেন, ‘‘খুব কি অন্যায় করেছি আমরা, শুধু পরিচয়টুকু বদলে ফেলেছি, তার জন্য এমন খেসারত দিতে হবে!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy