প্রতীকী ছবি।
তাঁর নাম প্রায় হারিয়ে গিয়েছিল। তাঁর নাম যে এক সময়ে সিপিএমের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল, তা-ই বুঝি ভুলে গিয়েছিলেন অনেকে। নানা কারণে দলের ভিতরে একপ্রকার ‘ব্রাত্য’ হয়ে থাকা সেই বিধান পোদ্দারকে আবার ফিরিয়ে আনা হল দলের মূলস্রোতে। বসিয়ে দেওয়া হল দলের তফসিলি জাতি, জনজাতি ও অন্য অনগ্রসর শ্রেণি সেলের জেলা সভাপতির পদে।
যা দেখে দলেরই অনেকে বলছেন, এত দিন পুরনোদের মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে আনার যে নির্দেশ দলনেত্রী দিয়ে আসছিলেন, লোকসভা ভোটের আগে তা-ই কার্যকর করা হচ্ছে। অন্য একটি সূত্র আবার বলছে, বিজেপি যে ভাবে মতুয়া ভোটে ভাগ বসানোর চেষ্টা করছে, তা রুখতেই বিধানের মতো মতুয়া নেতাকে ফের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
সম্প্রতি মতুয়াদের নিয়ে একের পর এক সভা করছে বিজেপি। বিশেষ করে রানাঘাট বিধানসভা এলাকায়। এই পরিস্থিতিতে মতুয়া ভোট বাঁচাতে তৃণমূলকে সক্রিয় হতেই হচ্ছে। মতুয়া মহাসঙ্ঘের জেলা কমিটির উপদেষ্টা হিসাবে আগে থেকেই সক্রিয় ভূমিকা নিতে শুরু করেছেন কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক সত্যজিৎ বিশ্বাস বা রানাঘাট উত্তর-পূর্ব কেন্দ্রের বিধায়ক সমীর পোদ্দারেরা। বিধান পোদ্দারকে দলের তফসিলি সেলের দায়িত্বে আনার মধ্যেও অনেকে সেই মতুয়া অঙ্কই দেখতে পাচ্ছেন। এক জেলা নেতার কথায়, “বিধান সাংগঠনিক ছেলে। এ বার ভোটে ওদের মতো নেতাদের প্রয়োজন। তা ছাড়া মতুয়া ভোটও একটা বিষয়। রানাঘাট কেন্দ্রে মতুয়া ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবেই।”
ভীমপুরের বাসিন্দা বিধান পোদ্দার কংগ্রেসে থাকার সময় থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগামী বলে পরিচিত ছিলেন। ১৯৯৬ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে কৃষ্ণগঞ্জ বিধানসভা থেকে তিনি কংগ্রেস প্রার্থী হিসাবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে সিপিএমের সুশীল বিশ্বাসের কাছে ১৬৯৮ ভোটে হেরে যান। ২০০১ সালের বিধানসভা ভোটে তৃণমূলের টিকিটে প্রার্থী হয়ে ফের সেই সুশীল বিশ্বাসের কাছেই ৫৪১ ভোটে হারেন তিনি। ২০০৩ সালে সুশীল বিশ্বাসই সিপিএম ছে়ড়ে তৃণমূলে চলে আসেন এবং ২০০৬ সালে তাঁকেই দাঁড় করায় তৃণমূল। সিপিএমের কাছে প্রায় সাড়ে আট হাজার ভোটে তিনি হেরে যান। কিন্তু তার পরেও দলে তাঁর প্রতাপ কমেনি। ২০১১ সালে তৃণমূলের টিকিটে তিনি ফের জয়ী হন। সিপিএম ছেড়ে আসা সুশীলই হয়ে ওঠেন ‘প্রকৃত তৃণমূল’। বিধান কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়েন।
বিধায়ক থাকাকালীন, ২০১৪ সালে মৃত্যু হয় সুশীল বিশ্বাসের। কিন্তু তাতেও বিধান বিশেষ সুবিধা করতে পারেননি। উপনির্বাচনে টিকিট পান সত্যজিৎ বিশ্বাস (এখনও কৃষ্ণগঞ্জের বিধায়ক তিনিই)। জেলা কমিটির অন্যতম সম্পাদক ছিলেন বিধান, কিন্তু সেই পদও তাঁকে খোয়াতে হয়। দলের একাংশের অভিযোগ ছিল, বিভিন্ন ভোটে তিনি দলের বিরুদ্ধে কাজ করেছেন, বিশেষ করে সুশীল বিশ্বাস যেগুলিতে প্রার্থী হয়েছিলেন। এর মধ্যে তাঁর জন্য সুখবর বলতে ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত ভোটে বিধানের স্ত্রী সাধনা পোদ্দার টিকিট পাওয়া এবং জিতে কৃষ্ণনগর-১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি হওয়া।
প্রত্যাশিত ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, প্রায় অস্তিত্বহীন হয়ে পড়া বিধানকে কেন ফের গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে? সেটা কি মূলত মতুয়া ভোটের কথা মাথায় রেখেই? মতুয়া প্রসঙ্গে না গিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্তের বক্তব্য, “নয়ের দশক থেকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একনিষ্ঠ কর্মী উনি। পুরনো কর্মী হিসাবেই মর্যাদা পেলেন।” আর বিধান বলেন, “শুধু মতুয়ারা কেন? আমি তো সবাইকে নিয়েই চলি। দল আমায় যে দায়িত্ব দেবে, আমি সর্বশক্তি দিয়ে তা পালন করার চেষ্টা করব।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy