পলাশির ধর্নামঞ্চ। নিজস্ব চিত্র
এখনও ধর্নামঞ্চে এসে বাধা দেয়নি কেউ। মুর্শিদাবাদের জলঙ্গির মতো কোনও হামলা হয়নি। প্রকাশ্যে হুমকিও আসেনি কোনও তরফে। কিন্তু শাসক দল তৃণমূলকে প্রত্যক্ষ ভাবে পাশেও পাচ্ছে না পলাশির সিএএ-এনআরসি বিরোধী ধর্নামঞ্চ। এমনকি কিছু গ্রামে তারা লোকজনকে ধর্নামঞ্চে যেতে বাধা দিচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠছে।
দিল্লির শাহিন বাগ বা কলকাতার পার্ক সার্কাসের মতো পাদপ্রদীপের আলোয় নেই পলাশি। কিন্তু দিন যত গড়াচ্ছে, ধর্নার তাঁবুতে লোক বাড়ছে। বৃহস্পতিবার ষষ্ঠ দিন অতিক্রম করল এই ধর্না। শীতের মেঘলা আবহাওয়া সত্ত্বেও সকাল থেকে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। বেলা যত গড়িয়েছে, ভিড় বেড়েছে। কালীগঞ্জ ছাড়াও পাশে পলাশিপাড়া ব্লক থেকেও মহিলারা এসে ধর্নায় যোগ দিয়েছেন। যদিও পার্ক সার্কাস বা বহরমপুরের মতো এখানে তাঁরা নেতৃত্বে নেই। বরং পুরুষদের থেকে পৃথক ভাবে ঘেরাটোপের মধ্যে তাঁদের বসার ব্যবস্থা হয়েছে। দুপুরে অনেকেই কাজে চলে যাচ্ছেন। যাঁরা মঞ্চে থাকছেন, তাঁদের জন্য এলাকার এর-ওর বাড়ি থেকে খাবার আসছে। সন্ধ্যায় কাজ সেরে সকলে ফিরে এলে ভিড় জমছে। রাতে রান্না চাপানো হচ্ছে ধর্নামঞ্চের পাশেই। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় বা কলকাতার অন্য কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেও ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত আসা-যাওয়া করছেন।
ধর্নার প্রথম দিনে যেমন বিজেপি বাদে প্রায় সব রাজনৈতিক দলের নেতাদেরই ধর্নামঞ্চে দেখা গিয়েছিল। কালীগঞ্জে তৃণমূলের প্রাক্তন বিধায়ক নাসিরুদ্দিন আহমেদ বা সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য দেবাশিস আচার্যেরা এসেছেন। কিন্তু তার পর থেকে তৃণমূলকে আর ধর্নামঞ্চের ধারে-কাছে ঘেঁষতে তেমন দেখা যায়নি। বরং জাতীয় পতাকা ছাড়া আর কোনও ঝান্ডা না থাকলেও বামপন্থী ছাত্র ও গণসংগঠনের সঙ্গে যুক্ত অনেককেই ধর্না মঞ্চে আসতে দেখা যাচ্ছে।
ধর্নার সূচনালগ্ন থেকেই স্থানীয় দুই এসইউসি নেতা গোটা ব্যবস্থাপনায় সক্রিয় ছিলেন। যদিও এই মঞ্চকে তাঁরা এখনও দলীয় প্রচারের জন্য কাজে লাগাননি। সিপিএম নেতারাও আসা-যাওয়া করছেন। স্থানীয় সূত্রের খবর, বুধবার যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা পড়ুয়ারা বক্তৃতার মাঝেই ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’ বলে স্লোগান দিয়েছিলেন, তা ধর্নামঞ্চের অনেকের কাছেই অস্বস্তির কারণ হয়েছে। এই নিয়ে পরে নিজেদের আপত্তির কথাও জানিয়েছেন কেউ-কেউ।
এখন কালীগঞ্জ-পলাশিপাড়াতেই প্রশ্ন উঠছে, বামপন্থীরা সক্রিয় বলেই নিজেদের সরিয়ে রেখেছে তৃণমূল? কিন্তু এই লড়াইয়ে বিজেপি-চালিত কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে তো সব পক্ষেরই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলার কথা। রাজ্য বিধানসভাতেও তো কংগ্রেস এবং বামেরা তৃণমূলের আনা সিএএ-এনপিআর-এনআরসি প্রস্তাব সমর্থন করেছে।
শুধু এড়িয়ে যাওয়াই নয়, তৃণমূল অনেক ক্ষেত্রে গ্রামে-গ্রামে গিয়ে চোখ রাঙাচ্ছে বলেও স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ। তাঁদের দাবি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যতই জাতীয় স্তরে সিএএ-এনআরসি বিরোধিতার অন্যতম মুখ হয়ে উঠুন, তাঁর দলের নেতারা অন্য রকম আচরণ করছেন। কালীগঞ্জ ও পলাশিপাড়ার বেশ কিছু গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব চান না যে ওই গ্রাম থেকে কোনও লোক ধর্নামঞ্চে যোগ দিক। যোগ দিলে পরে সমস্যায় পড়তে হবে বলে ভয়ও দেখানো হচ্ছে।
কালীগঞ্জের বিধয়ক হাসানুজ্জামান শেখের বক্তব্য, ‘‘কেন্দ্রীয় সরকার যে কালা কানুনের কথা বলছে তাতে আন্দোলন তো হবেই। আমরাও দলের নির্দেশে দলের ব্যানারে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি।’’ তা হলে ধর্নামঞ্চে যাচ্ছেন না কেন? বিধায়কের ব্যাখ্যা, ‘‘প্রতিটি দলেরই নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। তার বাইরে গিয়ে কাজ করা যায় না। দলের অনুমতি পেলেই যাব।’’ কেন গ্রামের লোকজনকে ধর্নামঞ্চে যেতে বাধা দেওয়া হচ্ছে? বিধায়কের দাবি, ‘‘এ সব অভিযোগ ভিত্তিহীন। তবে যাঁরা তৃণমূল করেন, তাঁদের তো দলের নির্দেশ মানতেই হবে। দল তো এখনও যাওয়ার নির্দেশ দেয়নি। নেতারা না গেলে কর্মীদেরও যাওয়া উচিত নয়। তার পরেও যাঁরা যাচ্ছেন, সেটা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়।’’
ধর্নামঞ্চ কমিটির তরফে মহিউদ্দিন মান্নান অবশ্য বলেন, ‘‘আমাদের আন্দোলন কোনও দলের আন্দোলন নয়। তা স্বাধীন ভাবেই চলছে, চলবে। গ্রামের লোকজনকে আটকানো হচ্ছে, এমন কোনও অভিযোগ আমরা পাইনি। যে কেউ এসে এখানে এসে আমাদের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy