পুরনো নোট বাতিলের জেরে দেশ-দশের কতটা উপকার হয়েছে তা সময় বলবে। তবে, নোটের গেরোয় আপাতত রুজির প্রশ্নে প্রায় দাঁড়ি পড়তে চলেছে বেলডাঙার কাঠ কলের মালিকদের।
কাজ নেই কাঠ চেরাই মিলে কাজ করা কয়েকশো শ্রমিকেরও। র্যাঁদায় তাই জং পড়ে গিয়েছে নদিয়ার করিমপুরের কাঠ কলগুলিতেও।
বেলডাঙার দু’টি কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির কর্তারা জানাচ্ছেন, ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়। দাবি, শ্রমিকদের পাওনা গন্ডা মেটাতে না পারায় তারা অনেকেই পেটের দায়ে অন্য পেশায় পা বাড়িয়েছেন। কাজেই কাঠ কল বন্ধ।
কাঠের আসবাবের দাম এমনিতেই বেশি। বিকিকিনি ঝিমিয়ে এসেছে। কাঠ কেনার জন্য প্রতি সপ্তাহে হাজার পঞ্চাশ টাকা তাই মাজারি কলেই লাগে। কিন্তু নিয়মের গেরোয় ব্যাঙ্ক থেকে এখন ২৪ হাজারের বেশি জুটছে না। ফলে নুন আনতে পান্তা পুরানোর অবস্থা কাঠকলগুলির। গত এক মাসে তাই ক্ষতির পরিমাণ ছুঁয়েছে কয়েক লক্ষ টাকা।
বিয়ের মরসুমে কাঠের আসবাবপত্রের বিক্রি কিঞ্চিৎ বাড়ে। কিন্তু নোট বাতিলের জেরে অনেক বিয়েই পিছিয়ে গিয়েছে। অনেকে বায়না দিয়েও পালঙ্ক নিতে আসছেন না। ফলে নগদ টাকা মিল মালিকদের কাছে নেই বলেই তাঁদের দাবি।
বেলডাঙা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির সহ-সম্পাদক আরাফাত শেখ বলেন, ‘‘একে তো নগদের অভাবে কাঠ কিনতে পারছি না। কারখানাতে যা আসবাবপত্র আছে তাও বিক্রি করাও লাটে উঠেছে। এমনকী যাঁরা বায়না করে গিয়েছিলেন তাঁরাও জিনিস নিতে আসছেন না।’’
তিনি জানান, সমিতির প্রতিটি সদস্য প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে ব্যাঙ্কে জমান। বছর শেষে সুদ-সহ সেই টাকা তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। এ বছর সে টাকাও তুলতে পারেননি।
বেলডাঙা কাঠ ব্যবসায়ী সমিতির অন্য একটি কমিটির কোষাধক্ষ্য বাশার শেখ বলেন, ‘‘প্রথম দিকে আমরা বাতিল টাকা নিয়েছি। কিন্তু দিন যতোই গড়াতে থাকল মহাজন সেই পুরনো নোট নেওয়া বন্ধ করে দিল। ফলে ব্যবসা প্রায় বন্ধ।’’
কাঠের আসবাবের চাহিদা এ সময়ে করিমপুরেও বাড়ে। এখান থেকেই কৃষ্ণনগর, পলাশি, নবদ্বীপে আসবাব সরবরাহ হয়। বিয়ের মরসুম হওয়ার জন্য খাট, ড্রেসিং টেবিল বা আলনার বিক্রি বেশি। কিন্তু এ বছর বড় নোট বাতিলের জেরে সমস্যায় পড়েছেন কাঠ ব্যবসায়ী, মিস্ত্রী ও খরিদ্দার সকলেই। করিমপুরের কাঠ ব্যবসায়ী বিজন ঘটকের কথায়, “এ বারে একেবারে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছি। দোকানে পনেরো থকে পঞ্চাশ হাজার টাকার পালঙ্ক পড়ে পড়ে ধুলো খাচ্ছে। বরকর্তার দেখা নেই!’’ খদ্দের দু’এক জন যা আসছেন, তাঁরা পুরনো নোটেই দাম মেটাতে চাইছেন। কিন্তু সে টাকা ব্যাঙ্কে জমা নিলে তো!
একই কথা পাট্টাবুকার কাঠমিস্ত্রি সুব্রত হালদারের, “আগে প্রতি দিন কাজ শেষে মালিক আমাদের মজুরি দিতেন। এখন বেচাকেনা প্রায় বন্ধ, মজুরি না পেলে পেট ভরবে কী করে!’’ বেলডাঙা হরেকনগরের কাঠমিস্ত্রি মিয়াজুল শেখ জানান, গত দশ দিনে দেড় দিন মাত্র কাজ পেয়েছেন। অগ্রহায়ণের বিয়ের অর্ডার ছিল। একটি খাট তৈরির জন্য অগ্রিম ১০ হাজার টাকা দিয়ে গিয়েছে। সেই বিয়ে নোটের অভাবে পিছিয়ে গিয়েছে। ফলে খাট নিতে আসেনি। মিয়াজুল বলছেন, ‘‘খাট তৈরি করে বসে আছি, এ বার তো ওই খাটে আমাকেই তুলে কবরে নিয়ে যেতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy