— প্রতীকী চিত্র।
স্বামী কার? এই প্রশ্নে স্বামীর দেহ নিয়ে ‘চুলোচুলি’ শুরু করেন তিন স্ত্রী। বিবাদ থামাতে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয় পুলিশ। শেষে দেহ তুলে দেওয়া হয় মায়ের হাতে। শেষকৃত্যের পর নতুন বিষয়ে শুরু হয় বচসা। প্রকৃত স্ত্রীর অধিকার কে পাবেন? কে হবেন ওই শিক্ষকের সম্পত্তির উত্তরাধাকিরী? সব দেখে শিক্ষকের মায়ের আক্ষেপ, এঁরা কেউই স্ত্রী হওয়ার যোগ্য নন। মু্র্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের রতনপুর স্টেশন এলাকার ঘটনা।
বৃহস্পতিবার মৃত শিক্ষকের দেহ সৎকার করতে নিয়ে যাচ্ছিলেন স্ত্রী। এমন সময় পথ আগলে দাঁড়ান এক মধ্যবয়স্ক মহিলা। সঙ্গে এক তরুণ ও তরুণী। মহিলার দাবি, তিনি ওই শিক্ষকের প্রকৃত স্ত্রী এবং তরুণ-তরুণী তাঁর সন্তান। শুরু হয় দুই মহিলার ‘চুলোচুলি’। স্থানীয়দের মধ্যস্থতায় সমস্যা কিছুটা মিটেছিল। এমন সময় নিজেকে প্রথম স্ত্রী দাবি করে হাজির হন আরও এক মহিলা। শিক্ষকের নিথর দেহ নিয়ে দড়ি টানাটানি শুরু হয় তিন স্ত্রীর। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় শমসেরগঞ্জ থানার পুলিশ। অবশেষে পুলিশের মধ্যস্থতায় দেহ তুলে দেওয়া হয় মৃত শিক্ষকের মায়ের হাতে। শব যাত্রায় এক সঙ্গে শামিল হন তিন স্ত্রী।
মৃতের নাম রাজেন্দ্র মাহাতো। বয়স ৫৮ বছর। পেশায় প্রাথমিক শিক্ষক ছিলেন। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বিহারের মধুবনী জেলার বলরামপুরের বাসিন্দা ছিলেন রাজেন্দ্র। শিক্ষকতার সূত্রে দীর্ঘ দিন ধরে মুর্শিদাবাদের শমসেরগঞ্জের কোহতপুরে থাকতেন। মুর্শিদাবাদে চাকরি করতে আসার আগেই পড়শি গ্রামের সঙ্গীতা মাহাতোকে বিয়ে করেছিলেন রাজেন্দ্র। তাঁর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় সেখানকার পাঠ চুকিয়ে দেন। শমসেরগঞ্জে পাকাপাকি ভাবে থাকতে শুরু করে রাজেন্দ্র। পরে সেখানে বিয়ে হয় ডলি মাহাতোর সঙ্গে। ডলি এবং সঙ্গীতা, দু’জনেরই দু’টি করে সন্তান রয়েছে। এর পর ডলির সঙ্গেও অশান্তি শুরু হয় রাজেন্দ্রর। আদালতের দ্বারস্থ হয়ে খোরপোশের মামলা করে তিনি। সেই মামলা এখনও জঙ্গিপুর আদালতে বিচারাধীন। প্রথম এবং দ্বিতীয় স্ত্রীকে ছেড়ে বছরখানেক ধরে শমসেরগঞ্জ রতনপুর স্টেশন পল্লি এলাকায় ভাড়া বাড়িতে থাকতে শুরু করেন রাজেন্দ্র। সেখানেই পরিচয় হয় সন্ধ্যা সাহা নামে এক মহিলার সঙ্গে। তাঁর সঙ্গে তৃতীয় বার বিয়ে করেন রাজেন্দ্র।
বেশ কিছু দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন রাজেন্দ্র। বুধবার রাতে তাঁর মৃত্যু হয়। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তাঁর শেষকৃত্যের প্রস্তুতি শুরু হয়। তৃতীয় স্ত্রী শেষকৃত্যের প্রস্তুতি শুরু করলে দ্বিতীয় স্ত্রী ডলি মাহাতো এসে উপস্থিত হন। খবর পেয়ে মধুবনি জেলা থেকে ছুটে আসেন প্রথম স্ত্রী সঙ্গীতাও। স্বামীর দেহের দখল নিয়ে তিন স্ত্রীর মধ্যে শুরু হয় চুলোচুলি। ঘটনাস্থলে পৌঁছে শমসেরগঞ্জ থানার পুলিশ মায়ের হাতে দেহ তুলে দেন।
প্রথম স্ত্রী সঙ্গীতা মাহাতো বলেন, ‘‘প্রথমে আমাকে বিয়ে করেন। তার পরে শিক্ষকতার কাজে মুর্শিদাবাদে চলে আসেন। আমার সঙ্গে শ্বশুরবাড়ি লোকের যোগাযোগ রয়েছে। তবে স্বামীর সঙ্গে বনিবনা ছিল না। এখানে এসে একজন মহিলার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল শুনেছি, বিয়ে করেছে বলে কোনও দিন জানাননি।’’ দ্বিতীয় স্ত্রী ডলি মাহাতো বলেন, ‘‘ওর মধুবনীতে এক স্ত্রী রয়েছে শুনেছি। কিন্তু এখানে ওর কোনও বউ নেই। সম্পত্তি বা চাকরি যা পাওয়ার, প্রথম স্ত্রী কিংবা আমি পাব। তৃতীয় স্ত্রীর প্রশ্নই ওঠে না।’’ তৃতীয় স্ত্রী দু’জনের দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়ে বলেন, ‘‘স্বামীর যা সম্পত্তি ছিল, সব আমাকে লিখে দিয়ে গেছেন। তাই অন্য কারও দাবি আইনসঙ্গত নয়।’’ রাজেন্দ্রর মা বলেন, ‘‘সম্পত্তির জন্য সবাই এক সঙ্গে লাফিয়ে পড়ছেন। আমার ছেলের জন্য একটুও শোক নেই কারও। এদের কেউ স্ত্রী হওয়ার যোগ্য নন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy