সুপ্রিয়া সাহা। নিজস্ব চিত্র
নিজের সিমকার্ড সুপ্রিয়ার মোবাইলে ভরাই কাল হল।
সেই ফোনের সূত্র ধরেই অবশেষে সুপ্রিয়া সাহা খুনের কিনারা করল নবদ্বীপ থানার পুলিশ। ধরা পড়ল খুনের সঙ্গে যুক্ত এক মহিলা-সহ তিন জন। ধৃতেরা হল কুণাল হালদার, নয়ন মালাকার এবং শুক্লা বিশ্বাস। শুক্লাই পুরো পরিকল্পনার মাস্টারমাইন্ড বলে পুলিশ জানিয়েছে। পুলিশ জানিয়েছে, সুপ্রিয়াকে খুন করার পর ধৃতদের অন্যতম কুণাল তাঁর ফোনে এক বার নিজের সিম ভরেছিল। সেই সূত্র ধরেই তদন্তে সাফল্য মেলে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় ফাঁদ পেতে প্রথমে কুণালকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে জেরা করে আরও দু’জনের নাম জানতে পারে। তাদেরও গ্রেফতার করা হয়েছে। এর আগে নিহত সুপ্রিয়ার ছেলে জয় সাহাকে পুলিশ গ্রেফতার করেছিল। শুক্লা বিশ্বাস গত ৪ জুলাই জয়ের বিরুদ্ধে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস ও সোনার গহনা-টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ করেছিলেন। সেখানে জয়ের মা সুপ্রিয়ারও নাম ছিল। সেই অভিযোগে সুপ্রিয়া জজকোর্ট থেকে আগাম জামিন পেলেও পরবর্তী সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে হুমকি এবং ভয় দেখানোর অভিযোগে দ্বিতীয় একটি মামলা করে শুক্লা। সেই মামলায় সুপ্রিয়াকে ১২-১৬ অগস্ট জেল হেফাজতে থাকতে হয়। জামিনে ছাড়া পেয়ে তিনি শুক্লার নামে আদালতে পাল্টা অভিযোগ দায়ের করেন গত ২৫ অগস্ট। সেখানে তিনি জানান, শুক্লা তাঁকে মারধর করেছে ও হুমকি দিচ্ছে। এর পর সুপ্রিয়া রহস্যজনক ভাবে নিখোঁজ হয়ে যান।
এ দিকে, দীর্ঘ কয়েক মাস বেপাত্তা থাকার পর জয় গত বৃহস্পতিবার হাই কোর্ট থেকে অন্তর্বর্তী জামিন নিয়ে বাড়ি ফিরেছিল। পুলিশের কাছে সে দাবি করে যে, তালা ভেঙে বাড়ি ঢুকে ঘরের মধ্যে মায়ের তোশকে মোড়া দেহ ‘খুঁজে’ পায়। কিন্তু মৃতার জা সবিতা সাহার অভিযোগের ভিত্তিতে সেই রাতেই জয়কে গ্রেফতার করা হয়। সে এখন পুলিশ হেফাজতে।
পুলিশের দাবি, শুক্লার সঙ্গে জয়ের সম্পর্ক দুই বছরের। লটারিতে জয় বিপুল টাকা পাওয়ার পর সেই টাকা মায়ের কাছে রেখেছিল। সেই টাকা দাবি করে শুক্লা। কিন্তু জয় কুপথে যাচ্ছে বুঝতে পেরে কোনও ভাবেই টাকা তাকে দেননি শুক্লা। টাকার জন্য বারে-বারে মা-কে চাপ দিতে থাকে জয়। শেষে ব্যর্থ হয়ে সে শুক্লাকে বলে কোনও ভাবে ছক কষে সুপ্রিয়ার থেকে সে যেন টাকা বের করে আনে। তখনই সুপ্রিয়াকে খুনের পরিকল্পনা করে শুক্লা। জেরায় পুলিশকে কুণাল জানিয়েছে, মাস তিনেক আগে শুক্লা তাকে বলে, জয়ের বাড়ির আলমারিতে ৫০ লক্ষ টাকা এবং সোনার গয়না আছে। জয়ের মাকে খুন করে ওই টাকা আনতে পারলে তাকে দশ লক্ষ টাকা দেওয়া হবে। এক সঙ্গী নয়ন মালাকারকে নিয়ে গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাত ৯টা নাগাদ সুপ্রিয়ার বাড়ি যায় কুণাল। পূর্ব পরিচিতির সুবাদে সহজেই সে ভিতরে ঢুকতে পারে এবং গলা টিপে প্রৌঢ়াকে খুন করে। কিন্তু ঘরের আলমারি ভাঙলেও সেখানে তেমন টাকা বা গয়না কিছুই না পেয়ে বাড়িতে তালা দিয়ে চলে যায় তারা। সঙ্গে নিয়ে যায় সুপ্রিয়ার ফোন। সেই ফোনেই এক বার নিজের সিম ভরেছিল কুণাল। ঘটনার এক দিন পর গত ১৬ সেপ্টেম্বর কুণাল নবদ্বীপ ছেড়ে চলে যায়।
সুপ্রিয়ার আইনজীবী বিকাশ মণ্ডল প্রথম থেকেই বলে আসছিলেন যে, সম্পত্তি বা টাকাপয়সাই তাঁর মক্কেল সুপ্রিয়ার মৃত্যুর পিছনে অন্যতম কারণ। নবদ্বীপ থানার আইসি অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, “ধৃতেরা সকলেই স্বীকার করেছে যে, এই খুনের সঙ্গে তারা যুক্ত ছিল। তদন্তের স্বার্থে আদালতের কাছে ধৃতদের হেফাজত চেয়ে আবেদন করা হবে।” শুক্রবার জয় সাহাকে আদালতে হাজির করা হলে বিচারক ছ’ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy