Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Education

HS Result 2022: অন্ধকারেও চোখ খুলে উঠে দাঁড়ায় রিয়া

ছোট থেকেই রিয়ার স্বপ্ন প্রশাসনিক কর্তা হওয়ার। কিন্তু এক দিন আচমকা সব বদলে যায়। তখন বছর তেরো, সবে নবম শ্রেণি।

মা-বাবার সঙ্গে রিয়া

মা-বাবার সঙ্গে রিয়া নিজস্ব চিত্র।

সুস্মিত হালদার
হাঁসখালি শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০২২ ০৬:২৩
Share: Save:

এক দিন আচমকা গোটা জগৎ অন্ধকার হয়ে গিয়েছিল। কঠিন অসুখ কেড়ে নিয়েছিল মানুষটির দু’চোখের দৃষ্টিশক্তি। জগৎ অন্ধকার হলেও জীবনে আলোয় ফিরতে চেয়েছিল সে। একটু একটু করে নিজেকে তৈরি করেছে। লড়াইয়ে আজ সে অনেকটাই জয়ী। প্রতিকূলতা জয় করে সে উচ্চ মাধ্যমিকে ৯৪ শতাংশ নম্বর পেয়েছে। এ বার লক্ষ্য— সিভিল সার্ভিস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া।

মেয়েটির নাম রিয়া সরকার। বগুলা হাসপাতাল মোড় এলাকার বাসিন্দা। পরিবারের দাবি, ওই ছাত্রী বরাবরের মেধাবী। ছোট থেকেই রিয়ার স্বপ্ন প্রশাসনিক কর্তা হওয়ার। কিন্তু এক দিন আচমকা সব বদলে যায়। তখন বছর তেরো, সবে নবম শ্রেণি। মাথায় অসহ্য যন্ত্রণা শুরু হয়। প্রথম দিকে পরিবারের লোকজন সে ভাবে সমস্যার গুরুত্ব বুঝতে পারেনি। এক দিন যন্ত্রণার চোটে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে রিয়া। তাকে ভর্তি করা হয় কলকাতার একটি বেসরকারি শিশু হাসপাতালে। সেখানে ২২ দিন আইসিইউ-তে ভর্তি রাখা হয়। তার পরেও প্রায় এক মাস সেখানে ভর্তি রাখা হয় তাকে। চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন যে, রিয়ার মস্তিষ্কে যক্ষ্মা হয়েছে। সেখান থেকে মেনেনজাইটিস।

জ্ঞান ফেরার পর চোখ খুলেই ভয়ে চিৎকার করে উঠেছিল কিশোরী। প্রথম প্রশ্ন করেছিল— “আমি দেখতে পাচ্ছি না কেন?”

উত্তরে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, তার অপটিক নার্ভ নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

কিশোরী সে দিন ভেঙে পড়েছিল খুব। কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়ে। একটা সময়ের পর সে অন্ধকারেও চোখ খুলে উঠে দাঁড়ায়। নিজেই নিজেকে ‘কাউন্সেলিং’ করতে শুরু করে। শুরু হয় নতুন লড়াই। ব্রেইল পদ্ধতি শিখতে শুরু করে। বেশ কিছু দিনের চেষ্টায় শিখেও ফেলে রিয়া। কিন্তু অস্বস্তি সঙ্গী হয়ে থেকেই যায়।

সোমবার রিয়া বলে, “আসলে আমি প্রথম থেকে তো দৃষ্টিহীন ছিলাম না। ফলে, পরে ব্রেইল পদ্ধতিতে পড়তে সমস্যা হচ্ছিল।”

রিয়া ঠিক করে রেকর্ডিং পদ্ধতিতে নিজেকে পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত করবে। সেই মতো গৃহ শিক্ষকদের পাশাপাশি তার মা রিনা সরকারও বই পড়ে রেকর্ডিং করে দিতে থাকেন। সেই রেকর্ড শুনে শুনে পড়া মুখস্থ করতে থাকে রিয়া। দু’বছর এমন চলার পর সে বগুলা বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পরীক্ষা দেয়। প্রায় ৮৮ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করে।

একই ভাবে সে উচ্চমাধ্যমিকের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করেছে। এই বছর বগুলা হাইস্কুল থেকে পরীক্ষা দিয়ে উচ্চ মাধ্যমিকে প্রায় ৯৪ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করেছে মেয়েটি। রিয়া এবারে ভূগোল নিয়ে পড়তে চায়। সেই সঙ্গে নিতে চায় সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি।

এই লড়াইয়ে তার শক্ত খুঁটি মা রিনা। তিনি বলেন, “মেয়ে পড়াশোনায় ভালই ছিল। কিন্তু দৃষ্টিশক্তি চলে যাওয়ার পর থেকে যেন একেবারে মরিয়া হয়ে উঠেছে। কোনও প্রতিবন্ধকতাই দমিয়ে রাখতে পারবে না।”

অন্য বিষয়গুলি:

Education Exam Student HS Examination
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy