প্রতাপনগর স্কুলে। নিজস্ব চিত্র
টালি কিংবা টিন, রান্নার একটা ছাদ আছে। কিন্তু খিচুড়ি আর পাঁচমেশালির যে পাতটা মিডডে মিলের হাত ধরে প্রতি দুপুরে পড়ে, সেখানে কোনও ছাদ নেই, আদ্যন্ত খোলা আকাশ।
স্কুলের সামনে একফালি জায়গা। সেখানেই খুদেরা সার দিয়ে বসে। কাছেই বসে লেজ নাড়ে সারমেয়। গাছের উপরে বসে থাকে কাক। শিক্ষকদের বড় সতর্ক থাকতে হয়। তাতে যে শেষরক্ষা হয়, এমন নয়। একটু অন্যমনস্ক হলেই পাত থেকে খোয়া যায় ডিম বা সয়াবিন। নদিয়ার তেহট্টের প্রতাপনগর প্রাথমিক স্কুল, খাসপুর প্রাথমিক স্কুল, সিদ্ধেশ্বরীতলা ইনস্টিটিউশন কিংবা মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা, বহরমপুরের বেশ কয়েকটি স্কুলের এ দৃশ্য রোজ দিনের।
ক্ষুব্ধ অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, সর্বশিক্ষা মিশনের সৌজন্যে কয়েক বছরে স্কুলগুলোর চেহারা একেবারে বদলে গিয়েছে। অথচ এই স্কুলের পড়ুয়াদের কেন বছরের পর বছর ধরে এ ভাবে মিড ডে মিল খেতে হচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। প্রতাপনগর বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ১৫১ জন। রান্নার ঘর থাকলেও খাবারের ঘর নেই। খাসপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়েও একই সমস্যা। সেখানে ১২৭ জন পড়ুয়া। অভিভাবক ও বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, এ ভাবে গাছতলায় বা খোলা আকাশের নীচে খাওয়াটা অস্বাস্থ্যকর ব্যাপার। কিছু একটা ঘটে গেলে সে দায় কে নেবে? স্কুলে এত কিছু হয়, আর একটা খাবার ঘরের ব্যবস্থা হয় না?
সিদ্ধেশ্বরীতলা ইনস্টিটিউশনের প্রধান শিক্ষক কুমারেশচন্দ্র মণ্ডলের আক্ষেপ, ‘‘একশো বছরের পুরনো এই স্কুল। অথচ ছেলেমেয়েদের জন্য এখনও খাওয়ার ঘর নেই। কী লজ্জার বলুন তো!’’ তিনি জানান, পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত ৪০০ ছেলেমেয়েকে স্কুলের মাঠে বসেই মিড ডে মিল খেতে হয়। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে বারবার জানিয়েও কোন সুরাহা হয়নি। নদিয়ার মিডডে মিলের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক মানস মণ্ডল জানাচ্ছেন, বিধায়ক ও সাংসদ তহবিলের টাকায় কিছু স্কুলে মিডডে মিলের খাবার ঘর তৈরি হয়েছে। অন্য স্কুলগুলোও যাতে খাবার ঘর পায়, সে ব্যাপারে রাজ্যের কাছে আবেদন করা হয়েছে।
বেলডাঙা নিম্ন বুনিয়াদি বিদ্যালয়ে ২১৪ জন পড়ুয়া। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সুকুমার সাহা বলছেন, ‘‘বহু আবেদন করেও খাওয়ার ঘরের ব্যবস্থা হয়নি। ক্লাসরুমে খাওয়ালে পরে ক্লাস নিতে সমস্যা হয়। অগত্যা ভরসা খোলা আকাশ। বহরমপুরের মহারানি কাশীশ্বরী উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়েও একই চিত্র। মুর্শিদাবাদে প্রায় ৫ ৮৬৯টি স্কুলে মিডডে মিল চালু রয়েছে। প্রায় ৫৪৫০টি স্কুলেই খাবার ঘর নেই বলেই প্রশাসন সূত্রে খবর।
মুর্শিদাবাদের জেলাশাসক পি উলগানাথন বলছেন, ‘‘সব স্কুলেই যাতে খাবার ঘর থাকে সে ব্যাপারে আমরা উদ্যোগী হয়েছি। এ বছরেই প্রায় এক হাজার স্কুলে খাবার ঘর তৈরি করা হবে। ইতিমধ্যে শতাধিক স্কুলে কাজও শুরু হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy