Advertisement
১৮ ডিসেম্বর ২০২৪
New Born Girl Child

সদ্যোজাত কন্যাসন্তানকে সাজানো গাড়িতে ঘরে আনল পরিবার

দিন কয়েক আগে কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ায় কয়েকটি গাড়ি সাজিয়ে নার্সিংহোম থেকে সদ্যোজাতকে বাড়ি এনেছিলেন সাগরদিঘির রতনপুরের বাসিন্দা দম্পতি ইউসুফ হাসান, রুপসা পারভিন।

কন্যাসন্তান হওয়ায় খুশি পরিবার। হরিহরপাড়ায়।

কন্যাসন্তান হওয়ায় খুশি পরিবার। হরিহরপাড়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০২৪ ০৭:৫৪
Share: Save:

সাগরদিঘির রতনপুরের পর হরিহরপাড়া। কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ায় আত্মহারা পরিবারের লোকেরা। দিন কয়েক আগে কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ায় কয়েকটি গাড়ি সাজিয়ে নার্সিংহোম থেকে সদ্যোজাতকে বাড়ি এনেছিলেন সাগরদিঘির রতনপুরের বাসিন্দা দম্পতি ইউসুফ হাসান, রুপসা পারভিন। সেই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সুনাম কুড়িয়েছিল নেটিজেনদের। তারপর এক সপ্তাহ কাটতে না কাটতেই ফের কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ার আনন্দে সদ্যোজাতকে বহরমপুরের এক বেসরকারি হাসপাতাল থেকে সাজানো গাড়ি করে বাড়ি নিয়ে আসলেন তার পরিবারের লোকেরা। মেয়ে হওয়ার আনন্দে আগে থেকেই বাড়ি সাজানো হয়েছিল ফুল, মালা, বেলুন দিয়ে। যা নিয়ে রীতিমতো হইচই পড়েছে এলাকায়।

প্রায় বছর তিনেক আগে হরিহরপাড়া স্কুলপাড়ার বাসিন্দা ইমরান শেখের বিয়ে দস্তুরপাড়ার বাসিন্দা হেনা আক্তারের সঙ্গে। তাদের বিয়ের সময় গোটা গ্রামের বাসিন্দাদের নিমন্ত্রণ করে খাইয়েছিলেন হেনার বাবা পেশায় ব্যবসায়ী হারুন রশিদ। ধান খেতে সুবিশাল প্যান্ডেল বেঁধে কয়েক হাজার মানুষ নিমন্ত্রণ করে খাওয়ানোর গল্প এখনও গ্রামের লোকেদের মুখে ফেরে।

ইমরান হরিহরপাড়া আইটিআই কলেজের অস্থায়ী কর্মী। ইমরান, হেনা দু'জনেই শিক্ষকতা প্রশিক্ষণ (ডিএলএড) নিয়েছেন। শিক্ষকতার চাকরির প্রস্তুতিও নিচ্ছেন তাঁরা। রবিবার বহরমপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে হেনা জন্ম দেন এক কন্যা সন্তানের। মঙ্গলবার হাসপাতাল থেকে তাদের ছাড়া হয়। এ দিকে মেয়ে হওয়ার আনন্দে ফুল, মালা দিয়ে গাড়ি সাজিয়ে হাসপাতালে হাজির পরিবারের লোকেরা। বর্তমানে হারুন হরিহরপাড়া বিডিও রোড এলাকার বাসিন্দা। মেয়ে, নাতনিকে সেই বাড়িতেই এ দিন নিয়ে এসেছেন হারুন। মেয়ে হওয়ার আনন্দে এলাকার মানুষকে মিষ্টিমুখও করান তিনি। বাড়িকেও ফুল, বেলুন দিয়ে সাজানো হয়েছে। হারুন বলেন, “আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। সবাইকে আমি সমান নজরেই দেখি। বড় মেয়ের প্রথম সন্তান মেয়ে হওয়ায় আমরা পরিবারের সকলেই খুশি। জামাই, মেয়ের ইচ্ছে অনুযায়ী গাড়ি সাজিয়ে নাতনিকে ঘরে এনেছি।” ইমরান, হেনা দু'জনেই বলেন, “আমরাও চেয়েছিলাম আমাদের প্রথম সন্তান মেয়ে হবে। তাকে ভাল মতো মানুষ করাটাই আমাদের লক্ষ্য।”

সাগরদিঘির রতনপুরের বাসিন্দা ইউসুফ হাসানের একটি কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। বছর খানেক আগে বিয়ে হয়েছে গ্রামেরই মেয়ে রূকসা পারভিনের সঙ্গে। বলছেন, “আমার স্ত্রী’ই একদিন জানতে চেয়েছিল আমার কাছে, যদি মেয়ে হয় কী করবে? সেদিনই কথা দিয়েছিলাম যদি মেয়ে হয় সেই মেয়েকে বিয়ের কনের মতো সাজানো গাড়ির কনভয় নিয়ে গিয়ে বাড়িতে নিয়ে আসব হাসপাতাল থেকে। সেটাই পূরণ করেছি। ছেলে বা মেয়ে সে তো আমাদের ইচ্ছের উপর নির্ভর করে না। কিন্তু আমার ইচ্ছে ছিল একটি মেয়ের বাবা হওয়ার। ইচ্ছে পূরণ হওয়ায় আমিও কথা রেখেছি। স্ত্রী তো বটেই, খুশি আমার মা মেরিনা বিবি, বাবা আব্দুস সামাদও।”

সাগরদিঘির ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক ওয়াসিম আক্রাম বলছেন, “এখন এ নিয়ে সচেতনতা বেড়েছে। মেয়ে ও ছেলের মধ্যে কোনও ফারাক নেই এখন। তবে এ ভাবে ঘটা করে সদ্যোজাত ও তার মাকে বাড়িতে নিয়ে আসার ঘটনা অভিনব।”

শমসেরগঞ্জের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক তারিফ হোসেন বলেছিলেন, “এটা নজিরবিহীন। সমাজের পক্ষে একটি ভাল বার্তা তো বটেই। তবে এর আগে শমসেরগঞ্জে একটি বেসরকারি হাসপাতালে জন্ম হওয়া প্রতিটি কন্যা সন্তানের মাকে একটি করে সোনার কয়েন দিয়ে উৎসাহিত করা হয়েছিল। সমাজ যে এগুচ্ছে তা বোঝা যাচ্ছে।”

স্ত্রী রূকসা বিবি বলছেন, “আমি ভাবতেই পারিনি এ ভাবে সংবর্ধনা দিয়ে আমায় নিয়ে যাওয়া হবে বাড়িতে। আমি খুব খুশি।”

অন্য বিষয়গুলি:

New Born Girl Child Girl child Murshidabad
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy