কখনও লুকিয়ে পড়ছে ভুট্টা খেতের আড়ালে। কখনও বা ঝাঁকড়া জাম গাছের পিছনে। এ দিকে পিছনে ঘুরতে ঘুরতে দফতরের কর্মীরা হয়রান। ঠিক জুত করে উঠতে পারেন না। প্রথম চেষ্টাটা জলে গিয়েছে। ফস্কে দিয়েছে ঘুম পাড়ানি গুলিটা। তারপরে যেন হাতির ছোটাছুটি বেড়ে দিয়েছে। ভুট্টা খেতে লুকিয়ে পড়ে। খানিক পরে শুঁড় তুলে জানান দেয় নিজের অবস্থান। আবার খেত ছেড়ে বেরিয়ে আসে।
তখনই ফের একটা গুলি। এ বার আর ফস্কায়নি। ওষুধে কাজ হয়। হাতি ঝিমিয়ে পড়ে। বন দফতরের লোকজন ধরাধরি করে হাতিকে ট্রাকে তোলে।
সোমবার এমনই নানা ঘটনার সাক্ষী রইল কালীগঞ্জের জুড়ানপুর।
রবিবার বর্ধমানের ভাতার ও মন্তেশরের দিকে দুটি দলছুট বুনো হাতি দাপিয়ে বেড়ায়। সেই দু’টি হাতির মধ্যে একটি হাতি সোমবার ভোরে ভাগরথী পেরিয়ে নদিয়ার কালীগঞ্জের জুরানপুরে চলে আসে। খবর পেয়ে এ দিন সকাল ৯টায় পৌঁছে যান বন দফতরের আধিকারিকেরা। দিনভর উৎসাহী লোকজনকে সামাল দেওয়ার পাশাপাশি হাতিটিকে নজরে রাখা হয়। অবশেষ বিকাল সাড়ে ৪টে নাগাদ ঘুমপাড়ানি গুলি করে হাতিটিকে বাগে আনা হয়। হাতিটিকে ধরে গাড়ি করে উত্তরবঙ্গে গরুমারা অভয়ারণ্যে চিকিৎসার পাঠানো হচ্ছে বলে জানান বন দফতরের কর্তারা।
নদিয়া মুর্শিদাবাদের ডিএফও রানা দত্ত বলেন, “হাতিটি সুস্থ। শরীরে কোনও আঘাতের চিহ্নও নেই।’’
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার দিনভর বর্ধমানের ভাতার ও মন্তেশ্বরের দলছুট দুটি হাতি তাণ্ডব চালায়। পরদিন সকালে একটি পুরুষ হাতিকে কালীপুরের মাঠে ঘুরতে দেখা যায়। গ্রামের লোকজন মাঠে হাতি ঘুরতে দেখে পুলিশ ও বন দফতরকে খবর দেন।
বনদফতর সূত্রে খবর। ওই এলাকায় কোনও বনাঞ্চল নেই। ফলে সেটিকে তাড়ানোর কোনও জায়গী নেই। তা ছাড়া হাতিটি বয়সে ছোট। তাই বনদফতর সিদ্ধান্ত নেয় হাতিটিকে ধরে অভয়ারণ্যে পাঠানোর। সেই মতো ঘুমপাড়ানি গুলি চালানোর জন্য বন দফতরের প্রশিক্ষিত ৫-৬ জন কর্মীও এসে পৌঁছন। কালীপুর বাঁধের কাছে থাকা জামগাছে উঠে দফতরের কর্মীরা হাতিটিকে লক্ষ্য করে গুলি চালান। প্রথম গুলিটি লক্ষভ্রষ্ট হয়। তবে দ্বিতীয়বারের গুলিটি তার গায়ে লাগে। এর পরে ক্রেনে হাতিটিকে লরিতে তুলে গরুমারা অভয়ারণ্যে পাঠানো হয়।
দলছুট হাতি নদিয়া এই প্রথম নয়। বন দফতরের সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বছরই দলছুট একটি হাতি নবদ্বীপ এলাকায় ঢুকেছিল। তবে কালীগঞ্জের জুড়ানপুরের বাসিন্দারা জানিয়েছেন আমাদের এলাকায় এই প্রথম দলছুট হাতি এল। ফলে হাতি আসার খবর ছড়িয়ে পড়তেই গ্রাম থেকে লোকজন কালীপুরের বাঁধের কাছে ভিড় জমাতে থাকেন। কালীগঞ্জ থানার পুলিশ এবং বন দফতরের কর্মীরা অবশ্য উৎসাহী লোকজনকে হাতিটির কাছাকাছি ঘেঁষতে দেননি। জুড়ানপুরের বাসিন্দা রবিউল আলম বলেন, “এর আগে হাতি দেখিনি। হাতি আসার খবর পেয়ে বাসিন্দারা গ্রামের বাঁধের কাছে ভিড় জমান।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy