Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

শাসক দলের অগ্নিপরীক্ষা

প্রথম যখন এই রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল, তখন বিরোধী দল তৃণমূল নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরে জমি আন্দোলন আঁকড়ে রয়েছে।

রানাঘাট কোর্ট মোড়েও দু’পাশে অবৈধ দখলদারি। ছবি: প্রণব দেবনাথ

রানাঘাট কোর্ট মোড়েও দু’পাশে অবৈধ দখলদারি। ছবি: প্রণব দেবনাথ

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৭ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৪:২২
Share: Save:

সত্যিই কি জাতীয় সড়কের দু’পাশ দখলমুক্ত করার সদিচ্ছা আছে শাসক দলের? জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার কথা বলা হলেও তৃণমূলের অভিপ্রায় নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন থাকছে। কারণ রাজনৈতিক দলের ক্ষেত্রে নানা সমীকরণ আছে, রয়েছে ভোটব্যাঙ্কের চিন্তাও। বিশেষত পরের বিধানসভা নির্বাচন যখন দরজায় কড়া নাড়ছে আর জাতীয় সড়কের যে অংশ নিয়ে কথা হচ্ছে, তার বেশির ভাগটাই পড়ছে নদিয়ার দক্ষিণাংশে যেখানে গত লোকসভা ভোটে বিজেপির বড় রকম উত্থান হয়েছে।

প্রথম যখন এই রাস্তা সম্প্রসারণের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি হয়েছিল, তখন বিরোধী দল তৃণমূল নন্দীগ্রাম-সিঙ্গুরে জমি আন্দোলন আঁকড়ে রয়েছে। সে দিন তৃণমূলের জেলা সভাপতি ছিলেন নরেশ চাকি, উচ্ছেদের বিরোধিতায় আন্দোলনে নেমেছিল তৃণমূল। সেই তৃণমূলই এখন ক্ষমতায়। ফলে জমি দখলমুক্ত করে সড়ক সম্প্রসারণের সহযোগিতা করা এখন তাদের দায় ও দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। বিশেষ করে যেখানে বাহাদুরপুর থেকে বড় জাগুলিয়া পর্যন্ত সড়ক সম্প্রসারণের দায়িত্ব নিয়েছে রাজ্য সরকার। গত লোকসভা নির্বাচনের আগেও কিন্তু বেহাল জাতীয় সড়কের দায় নিতে চায়নি শাসক তৃণমূল। নদিয়ায় প্রশাসনিক বৈঠকে এসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নির্দেশ দিয়ে যান, এই রাস্তা যে কেন্দ্রীয় সরকারের তা জানিয়ে জাতীয় সড়কের পাশে হোর্ডিং লাগাতে। তেমনটা করাও হয়েছিল। কিন্তু এখন পরিস্থিতি ভিন্ন। কেন্দ্রের তরফে জমি অধিগ্রহণ ও রাস্তা তৈরির টাকা দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ বার অধিগৃহীত জমি দখলমুক্ত করতে না পারলে আবার রাস্তা তৈরির কাজ আটকে থাকবে।

প্রত্যাশিত ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, শাসক দল হিসাবে তৃণমূলের ভূমিকা এ বার কী হবে? বিশেষ করে যখন এক সময়ে তারা উচ্ছেদের বিরোধিতা করেছিল? নদিয়া জেলা পরিষদের সভাধিপতি, তৃণমূলের রিক্তা কুণ্ডুর মতে, “বৃহত্তর স্বার্থে রাস্তা সম্প্রসারণ প্রয়োজন। যাঁরা জমির মালিক, তাঁদের নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু কিছু লোকজন আছেন যাঁরা অবৈধ ভাবে জমি দখল করে রেখেছেন। আমরা দলের তরফে তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে সহযোগিতা চাইছি।”

বোঝাই যাচ্ছে, তৃণমূল এ ক্ষেত্রে সাবধানে পা ফেলতে চাইছে। একে জমির নেওয়ার জন্য জোরাজুরি করা তাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির সঙ্গে মানানসই নয়, তার উপরে তাতে হিতে বিপরীত হওয়ার আশঙ্কাও প্রবল।

এক দিকে যেমন বহু মানুষ রাস্তা সম্প্রসারণের দাবি তুলছেন, তেমনই যাঁরা এত দিন ওই জমি ভোগদখল করে এসেছেন, তাঁদের জোর করে উচ্ছেদ করাও কঠিন কাজ। সবচেয়ে বড় কথা, একটু ভুল পদক্ষেপ হয়ে গেলেই ঘোলা জলে মাছ ধরতে নামবে বিজেপি। রাজনৈতিক ফায়দা লোটার চেষ্টা করবে। তৃণমূল নেতারা তাই বেশি মাত্রায় সাবধানী। অপ্রিয় কাজের দায়টা অন্যের এড়াতে পারলে বাঁচেন।

তৃণমূলের রানাঘাট সাংগঠনিক জেলা সভাপতি শঙ্কর সিংহ বলেন, “এটা তো কেন্দ্রের প্রকল্প। তাদের পরিকাঠামো নেই বলে রাজ্যকে দায়িত্ব দিয়েছে। জমিমালিকদের নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু যাঁরা বেআইনি ভাবে জমি দখল করে আছেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যার সমাধানের দায়িত্ব জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের।” তবে সেই সঙ্গেই তিনি যোগ করেন, “আমরা চাই, রাস্তা সম্প্রসারণ হোক। দলের তরফে দখলদারদের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের সহযোগিতা চাইছি। তবে রাস্তার কাজ আটকে থাকবে না।” বিজেপি আবার বলছে, তারা চায় রাস্তা দখলমুক্ত করে সম্প্রসারণের কাজ শুরু করা হোক। কিন্তু কেউ যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। রানাঘাট লোকসভার সাংসদ, বিজেপির জগন্নাথ সরকারের বক্তব্য, “আমরা তো প্রথম থেকে বলে আসছি, জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য দখলমুক্ত করা হোক। কিন্তু যেন কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়।” তাঁর দাবি, “জবরদখলকারীদের তো আর কেন্দ্র ক্ষতিপূরণ দেবে না। তাদের জন্য বিকল্প ব্যবস্থা রাজ্যকেই করতে হবে। কারণ শাসক দলই ভোটের স্বার্থে আর টাকার বিনিময়ে তাদের বসিয়েছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “যাঁরা জমি দখল করে আছেন, তাঁদের তো একটা জীবিকা আছে। তাদের বিকল্প জীবিকার ব্যবস্থা করে তবেই উচ্ছেদ করতে হবে।”

শাসক দল এই ট্রাপিজে ভারসাম্য রেখে কাজ উতরোতে পারবে কি?

অন্য বিষয়গুলি:

Occupied Land TMC National Highways
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy