Advertisement
E-Paper

নিখুঁতি ঘিরে রয়েছে জনশ্রুতি, জমেছে ব্যবসাও

শান্তিপুরের নিখুঁতি তৈরির পিছনে জড়িয়ে রয়েছে জনশ্রুতিও। কথিত আছে, প্রায় দুশো বছর আগে শান্তিপুরে প্রথম এই মিষ্টি তৈরি শুরু হয়।

 নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব চিত্র।

সম্রাট চন্দ

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০২২ ০৯:১২
Share
Save

রানাঘাট মানেই যেমন পান্তুয়া, কৃষ্ণনগর মানেই সরপুরিয়া, সরভাজার নাম উঠে আসে, তেমনই শান্তিপুরের নামের সঙ্গে সঙ্গে ভোজন-বিলাসীদের মনে পড়ে যায় নিখুঁতির নাম।

শান্তিপুরে তৈরি নিখুঁতির নামডাক যেমন ছড়িয়ে পড়েছে চার দিকে, তেমনই এর চাহিদাও বেড়েছে উত্তরোত্তর। এবারের উৎসবের মরসুমেও অন্যান্য মিষ্টির চেয়ে এই নিখুঁতির চাহিদা বেশি বলেই জানাচ্ছেন মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা।

শান্তিপুরের নিখুঁতি তৈরির পিছনে জড়িয়ে রয়েছে জনশ্রুতিও। কথিত আছে, প্রায় দুশো বছর আগে শান্তিপুরে প্রথম এই মিষ্টি তৈরি শুরু হয়। জনশ্রুতি, শান্তিপুরের গোভাগাড় মোড়ের কাছে সেই সময়ে একটি মিষ্টির দোকান ছিল। যার মালিকের নাম ছিল ভোলা। ভোলা ময়রার দোকান হিসাবেই তা খ্যাত ছিল। যদিও বর্তমানে আর সেই দোকান নেই। কথিত আছে, সেই ভোলা ময়রার এক অপূর্ব সুন্দরী কিশোরী কন্যা ছিল। যার নাম ছিল নিখুতি। সেই কিশোরী মাঝেমধ্যে বাবার দোকানে এসে বসে থাকত।

এই ভাবেই এক দিন ভোলাবাবু যখন মিষ্টির দোকানে অনুপস্থিত, সেই সময় বাবার অনুপস্থিতিতে তাঁর কিশোরী মেয়ে হাতের ছানার দলা পাকিয়ে মিষ্টি তৈরির রসের মধ্যে ছেড়ে দেয়। তা একটি মিষ্টির আকার নেয় কিছু সময় পর। পরে এক ক্রেতা এলে অন্য মিষ্টি ফুরিয়ে যাওয়ায় তাঁকে সেই মিষ্টিই দেন ভোলা ময়রা। তার স্বাদে মুগ্ধ হয়ে পরের দিন সেই ক্রেতা ফের দোকানে আসেন। তিনি ভোলাকে জিজ্ঞাসা করেন মিষ্টির নাম কী? কানে কম শুনতেন ভোলা। তিনি ভাবেন, মিষ্টি প্রস্তুতকারকের নাম জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি উত্তর দেন— নিখুঁতি। এর পর আরও একাধিক নিখুতির অর্ডার দেন সেই ক্রেতা।

প্রায় দুশো বছরে আগের সেই ঘটনা থেকেই শান্তিপুরের নিখুঁতির যাত্রা শুরু বলে পুরনোদের দাবি।

মূলত ছানার তৈরি এই মিষ্টি। ছানার লেচি পাকিয়ে, রসে ভেজে তৈরি হয় এই মিষ্টি। তাতে স্বাদ বাড়ানোর জন্য দেওয়া হয় বিভিন্ন উপকরণও। আকারে ল্যাংচার চেয়ে বেশ কিছুটা ছোট। অনেকটা আঙুলের মতো দেখতে এই নিখুঁতিই দুই শতাব্দী ধরে ভোজনরসিকদের রসনা তৃপ্ত করে আসছে। প্রায় দুশো টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় এই মিষ্টি।

শান্তিপুরের বাইরে থেকে যাঁরা শহরে আসেন, তাঁরা সকলেই এই মিষ্টি কিনে নিয়ে যান বাড়িতে ফেরার সময়ে। আবার, বাড়িতে অতিথি এলে তাঁদের আপ্যায়নের জন্যও এর চাহিদা রয়েছে। মাঝে দুই বছর অতিমারির কালে অনেকটাই ভাটা পড়েছিল এর চাহিদায়। এবারে অবশ্য পুজোর মধ্যে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা দেখছেন ব্যবসায়ীরা।

শান্তিপুরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী মিন্টু ঘোষ বলেন, “আমাদের দোকানে অন্যান্য মিষ্টির চেয়ে নিখুঁতির চাহিদাই বেশি। পুজোর সময়ে এর চাহিদা অনেকটা বেশি থাকে। মাঝে দু’বছর ধাক্কা এসেছে। তবে এ বার চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু তা এখনও সেই আগের জায়গায় যায়নি।”

শান্তিপুরের মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী দিব্যেন্দু ঘোষ বলেন, “পুজোর মধ্যে এ বার নিখুঁতির চাহিদা ছিল সব চেয়ে বেশি। বেশির ভাগ মানুষই এসে এর খোঁজ করেছেন।”

দুর্গাপুজো থেকেই শান্তিপুরে উৎসবের মরসুম শুরু হয়ে গেল। কালীপুজো থেকে শুরু করে জগদ্ধাত্রী পুজো, রাস একাধিক উৎসবে প্রচুর মানুষের আনাগোনা হয় শহরে। মাঝে অতিমারিতে ধাক্কা খাওয়ার পর উৎসবকে ঘিরেই ফের ঘুরে দাঁড়ানোর আশা করছেন মিষ্টান্ন ব্যবসায়ীরা।

Nadia Sweet Sellers

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}