মালদহে বহু চেষ্টাতেও পারেননি, কিন্তু মুর্শিদাবাদ তাঁর মান রেখেছে। বারবার জেলায় এসে দলের সকলকে এক মঞ্চে আনতে পেরেছেন। বিধানসভা নির্বাচনে তার ফল ফলেছে। শুভেন্দু অধিকারীর চেষ্টায় এই মুহূর্তে জেলার প্রায় দেড়শোটি পঞ্চায়েতও তৃণমূলের দখলে। দলের এই সাফল্যের সিংহভাগ কৃতিত্বের হকদার যে শুভেন্দুই, দলের নেতারা তা একবাক্যেই মানছেন।
আর সে কারণেই দাবি উঠেছে, তৃণমূলের অধিকৃত জমি আরও বাড়ানোর। ৩ জুলাই নির্বাচনের পর শুভেন্দুর প্রথম জেলা সফর নিয়ে তাই উৎসাহী তৃণমূল কর্মীরা। সে দিন দুপুরে জঙ্গিপুরে দু’দু’টি অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন তিনি। সন্ধ্যেয় গফুরপুর বরজ মাঠে ইফতারের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে মিঞাপুরে প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শুভেন্দুকে সংবর্ধনা দেওয়ার আয়োজন চলছে পুরোদমে। দলের জেলা কমিটির পক্ষ থেকে জঙ্গিপুরে এই ইফতারের আয়োজনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে মন্ত্রী হিসেবে জাকিরকে। প্রতিটি ব্লক থেকে দলের ৫০ জন করে কর্মীকে জঙ্গিপুরের এই ইফতারে যোগ দিতে বলা হয়েছে।
মান্নান হোসেন জানান, দলের তরফে গত বছরের ইফতার হয়েছিল বেলডাঙায়, যোগ দিয়েছিলেন ১০ হাজার মানুষ। এবারে সেই সংখ্যা ছাড়িয়ে যাবে। তৃণমূল সূত্রে দাবি, ২০১৪ সালে সর্বশেষ লোকসভা নির্বাচনে পাওয়া ২০ শতাংশ ভোটকে মাত্র দেড় বছরে এক ধাক্কায় ৩১ শতাংশে তুলে নিয়ে যেতে পেরেছেন শুভেন্দু। কংগ্রেস ও সিপিএমের জোটের দখলে থাকা ৬৭ শতাংশ ভোট ৫২ শতাংশে নেমে গিয়েছে। কংগ্রেসের দুর্গে কংগ্রেসের ভোট নেমে এসেছে ৩৫ শতাংশে। জোট করে এ জেলায় বামেদের ভোট কমে দাঁড়িয়েছে ১৭ শতাংশে।
এ জেলায় শাসক দল তৃণমূলের বড় সাফল্য হল বিধানসভায় জেলার ২২টি আসনের মধ্যে অন্তত ১৯টিতে দলের প্রার্থীরা লড়াই দিয়েছেন সমানে সমানে। প্রাপ্ত আসন সংখ্যা ১ থেকে বেড়ে ৪ হয়েছে, বিরোধী জোট না হলে সেটা যে ৮-এ পৌঁছে যেতে পারত সাগরদিঘি ও জঙ্গিপুর তার জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত। তৃণমূলের জেলা সভাপতি মান্নান হোসেনও এক বাক্যে মানছেন, জেলায় দলের এই সাফল্যের মূল কারিগর শুভেন্দুবাবু। তাঁর ঘন ঘন জেলায় আসা, প্রতিটি ব্লকে একাধিক সভা করার ফলে কর্মীরা বাড়তি অক্সিজেন পেয়েছেন বলে মনে করেন মন্ত্রী জাকির হোসেনও।
মান্নান বলেন, “জেলায় তৃণমূলের এই সাফল্যের পর শুভেন্দুর প্রথম জেলা সফরকে তাই সেলিব্রেট করতে চায় জেলা তৃণমূল। দলের প্রতিটি কর্মী তা চান। আগেই তাঁকে সংবর্ধনা দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু তিনি আসতে পারেননি। তাই ঠিক হয়েছে ৩ জুলাই জঙ্গিপুরে শুভেন্দুকে সংবর্ধনা দেওয়া হবে। তবে জেলার সব প্রান্তের কর্মীরা সেখানে হাজির থাকতে পারবেন না। তাই ১১ জুলাই বহরমপুর রবীন্দ্র সদনে ফের শুভেন্দু জেলায় এলে বড় করে অনুষ্ঠান করা হবে।” মুর্শিদাবাদ জেলায় কংগ্রেসের আসন ছিল ১৪টি । এবারও সংখ্যায় সেই ১৪টি আসন ধরে রাখলেও দলের ভিত যে অনেকটাই আলগা হয়েছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০০১ সালে তৃণমূলের সঙ্গে রাজ্যে জোট হয়েছিল কংগ্রেসের। তৃণমূল জেলায় ভোট পেয়েছিল ১৩.২ শতাংশ। ২০০৬ সালে তৃণমুল রাজ্যে গাঁটছড়া বেঁধেছিল বিজেপির সঙ্গে। ১৩টি আসনে লড়াই করে তৃণমুল জামানত খুইয়েছিল সব আসনেই। শাসক দল হিসেবে ২০১৪ সালে একক ভাবে লড়ে জুটেছিল মাত্র ২০ শতাংশ ভোট। এ বারে সেই অধরা সাফল্য কিছুটা হলেও ছুঁতে পেরেছে তৃণমূল। এই সাফল্য কংগ্রেস ও বাম শিবিরেও বড় সড় ধাক্কা দিয়ে চলেছে প্রতি নিয়ত। দুই দলেরই রক্তক্ষরণ ক্রমাগত বাড়ছে।
এক কংগ্রেস নেতা বলছেন, “মুর্শিদাবাদে এসে শুভেন্দু বাম ও কংগ্রেস জোটের বিরুদ্ধে কখনও জেলার কংগ্রেসকর্মীদের সরাসরি বিদ্রোহের ডাক দিয়েছেন, কখনও কংগ্রেস কর্মীদের মনে পুরোনো স্মৃতি উস্কে দিয়েছেন এই বলে যে, এ জেলায় ৩৫০০ কংগ্রেস কর্মীকে খুন করেছে সিপিএম। কংগ্রেস করার অপরাধে কত মানুষকে জেল খাটতে হয়েছে। আজ সেই খুনি সিপিএমের সঙ্গে জোট করে কংগ্রেস ভুল পথে চলেছে।’’ তাঁর কথায়, জেলার কংগ্রেসকর্মীরা এই জোটকে মানবেন না। এর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে দল ছেড়ে বেরিয়ে আসুন। এই জোটের বিরুদ্ধে তৃণমূলের পাশে দাঁড়ান। যারা কংগ্রেসকে সিপিএমের কাছে তুলে দিতে চাইছেন, তাঁদের থেকে দূরে থাকুন।
তৃণমূলের দাবি, শুভেন্দু এই বিদ্রোহের ডাক যে বিফলে যায়নি তার প্রমাণ কংগ্রেস ভোটের সিংহভাগ সিপিএমের থেকে মুখ ফিরিয়েছে। মুর্শিদাবাদে শুভেন্দুর সাফল্যের পাটিগণিত যে এটাই তা মানছেন মান্নান হোসেনও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy