গোধূলির লাল আলোয় লালচে পদ্মার জল। ওপারে ধুধু বালুর চরটাও লাল হয়ে উঠেছে। একঝাঁক দুধ সাদা বক সীমান্তের আকাশ ঢেকে চলে গেল বাংলাদেশের দিকে। বিড়িতে গোটাকয়েক টান দিয়ে লুঙ্গি গুটিয়ে চিংড়ির জাল গোটাতে পদ্মায় নেমে পাড়েছে জলঙ্গির লালকুপের বাসিন্দা বাবলু মণ্ডল। কিন্তু জাল ঘটাতে গিয়েই চমকে উঠল বাবলু, জালে আটকে পড়েছে একটা দেহ।
জালে আটকানো দেহটা দেখে প্রথমে চমকে উঠলেও জল ছেড়ে পালিয়ে আসেনি বাবলু। কারণ কিশোর বয়স থেকে পদ্মায় মাছ ধরতে নেমে এমন অনেক দেহ ভেসে যেতে দেখেছে বাংলাদেশের দিকে। ফলে কিছুটা হলেও এই ছবিটা তাদের কাছে চেনা। লাশটা জাল থেকে ছাড়িয়ে একটা লাঠি দিয়ে ঠেলে ভাসিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করল সে। বাবলুর দাবি, ‘‘লাঠি দিয়ে লাশটাকে ধাক্কা দিয়ে জালে হাত দিতেই একটা গুড়ুম করে আওয়াজ হলো পদ্মা জুড়ে। আর সেই আওয়াজের সঙ্গে সঙ্গে পদ্মার জল হাঁটু ছাড়িয়ে উঠে এলো কোমর পর্যন্ত।’’ শব্দটাও ঠিক ছিল, কারণ ওপারের (বাংলাদেশ) সারদা পুলিশ ট্রেনিং ক্যাম্প থেকে মাঝেমাঝেই গুলির শব্দ ভেসে আসে। কিন্তু হাঁটুজল কোমর পর্যন্ত উঠে যাওয়াটা বিশ্বাস করতে পারেনি বাবলু। পদ্মাপাড়ের মাচায় বসে আতঙ্কিত মুখে বারবার বলছিল, ‘‘বিশ্বাস করুন, ভূতের ভয় বিন্দুমাত্র ছিল না। রাতের পদ্মায় অনায়াসে ঘুরে বেরিয়েছি রাতের পর রাত। কিন্তু সে দিনের সেই ঘটনাটা এখনো আমার মনে দাগ কেটে আছে।’’
কেবল বাবলুর নয়, পদ্মায় নেমে এমন হাজারও অভিজ্ঞতা হয়েছে নির্মল চর এলাকার বাসুদেব মন্ডলের। বাসুদেবের কথায়, ‘‘জ্যোৎস্না ঝলমলে বর্ষার ভরা পদ্মা। পাড়ে লাগানো নৌকা থেকেই দেখতে পাচ্ছি একটা খালি নৌকা ভেসে যাচ্ছে মাঝ পদ্মা দিয়ে। প্রথমে হাঁক দিলাম, উত্তর পেলাম না। কোন মৎস্যজীবীর নৌকা ভেবেই নৌকাটাকে ধরার জন্য জোরে হাল মারলাম আমি। মাঝেমাঝেই হাঁক মেরে আর কান পেতে বোঝার চেষ্টা করছি সেই নৌকায় কেউ আছে কিনা। কিন্তু কোনও উত্তর পেলাম না।’’ হঠাৎ করেই নৌকাটা ঘুরতে শুরু করলো মাঝ পদ্মায়। হাত কয়েক দূর থেকে সেই দৃশ্য দেখেই চোখ ছানাবড়া দুই বন্ধুর। একটা নৌকা যে ওভাবে ঘূর্ণির মতো ঘুরতে পারে, বিশ্বাস হচ্ছিল না তাদের। চোখ কচলে দেখি হঠাৎ নৌকার একটা মাথা আকাশের দিকে আর একটা পাতালের দিকে। ঘুরতে ঘুরতেই সুড়ুৎ করে চোখের সামনে ডুবে গেল আস্ত নৌকাটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy