নফরচন্দ্রপুর প্রাথমিক স্কুলের খুদেদের ভরসা আর্সেনিকযুক্ত নলকূপের জল। নিজস্ব চিত্র
জেনেশুনেও কি কেউ বিষ খান? নফরচন্দ্রপুর বলছে, বিপাকে পড়লে তা-ও খেতে হয় বইকি!
কথাটা কিন্তু কথার কথা নয়। নলকূপের জলে আর্সেনিক আছে জেনেও দিনের পর দিন সেই জল খাচ্ছে স্কুলের পড়ুয়া। রান্না হচ্ছে মিডডে মিল। নিরুপায় হয়ে সেই জলই ব্যবহার করছেন গ্রামের লোকজনও।
স্কুল কর্তৃপক্ষ বিষয়টি প্রশাসন ও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন। অভিযোগ, সেখান থেকে ‘দেখছি, দেখব’ আশ্বাস ছাড়া এখনও পর্যন্ত আর কিছুই মেলেনি। অভিভাবকদের ক্ষোভ, ‘‘সমস্যাটা কিন্তু জল নিয়ে। সেটা সমাধান করতেও প্রশাসনের যদি আঠারো মাসে বছর হয়, তা হলে তো কিছুই বলার নেই।’’
ভারত বাংলাদেশ সীমান্ত ঘেঁষা জনপদ তেহট্টের নফরচন্দ্রপুর। গ্রামের বাসিন্দাদের অভিযোগ, একসময় এ গ্রামে কিছুই ছিল না। ঘরবাড়ি করে সে গ্রামে বসবাস করলেও সেই জমি নিজের ছিল না। কয়েক বছর আগে সরকার থেকে গ্রামের সবাইকে বসবাসের জমির পাট্টা দেওয়া হয়। তার পরে গ্রামে প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠে। পরিস্রুত পানীয় জলের জন্য সজলধারা প্রকল্প তৈরি হয়। দেওয়া হয় বিদ্যুতের সংযোগ। তা হলে কেন আর্সেনিক জলে তেষ্টা মেটাতে হচ্ছে? গ্রামের জীতেন সর্দার, সঞ্জয় মুণ্ডা, ব্রজবালা মুণ্ডারা জানাচ্ছেন, গ্রামে বিদ্যুৎ এসেছে ঠিকই। কিন্তু লো-ভোল্টেজ রোজনামচা। আলো জ্বলে টিমটিম করে। কম ভোল্টেজে গ্রামের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনের সজলধারা প্রকল্পের মোটর চলে না। তার উপরে, মাস দু’য়েক থেকে ট্রান্সফর্মার বিকল। ফলে বন্ধ হয়ে রয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। সজলধারার মোটরই যদি না চলে তা হলে পরিস্রুত জল মিলবে কী করে?
গ্রামের লোকজন তো বটেই, স্কুলের খুদে পড়ুয়ারাও আর্সেনিক আছে জেনেও নলকূপের জল খাচ্ছে। নফরচন্দ্রপুর আদিবাসী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অমৃত সরকার জানান, স্কুলের জল পরীক্ষা করে জানা গিয়েছে, স্বাভাবিক মাত্রার থেকে অনেক বেশি আর্সেনিক রয়েছে স্কুল ও এলাকার নলকূপে। অমৃতবাবু বলছেন, ‘‘সমস্যার কথা তো সব জায়গায় জানিয়েছি। এখন দেখা যাক, কবে এ সমস্যার সমাধান হয়।’’
স্কুলের পড়ুয়ার সংখ্যা ১২৮ জন। স্থানীয় বাসিন্দা পুষ্প সর্দারের কথায়, ‘‘কলে বিষ আছে জেনেও সবাইকে খেতে হচ্ছে। এ গ্রামে সব বাড়িতেই নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। বাইরে থেকে জল কেনার মতো সামর্থ্য নেই কারও।’’ চতুর্থ শ্রেণির সুস্মিতা সর্দার, তৃতীয় শ্রেণির তন্ময় সর্দারদের কথায়, ‘‘আমরাও জানি, এখানকার নলকূপে বিষ আছে। কিন্তু তেষ্টা পেলে কী করব? জল না খেয়ে কি বাঁচা যায়?’’ তেহট্ট ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি সঞ্জয় দত্তের আশ্বাস, ‘‘শীঘ্র ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগামী পনেরো দিনের মধ্যে বিদ্যুতের সমস্যা মিটবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy