বেলডাঙায় শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে এসে একরকম সব খুইয়ে কলকাতায় ফিরেছিলেন পার্থপ্রতিম বন্দ্যোপাধ্যায়। বাড়ি ফেরার আগে অবশ্য খোঁজাখুজিতে কসুর করেননি। কিন্তু, পাননি। টাকা-পয়সার জন্য নয়, তাঁর আফশোস ছিল পার্সের সঙ্গে খোয়া যাওয়া তাঁর চাকরির পরিচয়পত্র, ব্যাঙ্কের এটিএম কার্ড নিয়ে।
সেটা ছিল শনিবারের ঘটনা। মঙ্গলবার দুপুরেও অবশ্য পুরো ঘটনা বিশ্বাস করে উঠতে পারছিলেন না তিনি। কারণ, খোয়া যাওয়া সব কিছুই ফিরে পেয়েছেন তিনি। আর বহু কাটখড় পুড়িয়ে যে তাঁর হাতে সবকিছু তুলে দিল, সে বেলডাঙা এসআরএফ কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সাবির শেখ। খুশী হয়ে তাঁকে পুরস্কার স্বরূপ কিছু টাকা দিতে গিয়েছিলেন। কিন্তু, বিনয়ের সঙ্গে তা ফিরিয়ে দিয়েছেন, ছা পোষা কৃষক পরিবারের ছেলে সাবির। তাকে নিয়ে গর্বিত কলেজের শিক্ষকরাও।
পার্থপ্রতিমবাবু কলকাতার টালার বাসিন্দা। তিনি কলকাতা পুলিশের কর্মী। শনিবার শ্বসুরবাড়ি এসে বাজারে বেড়িয়েছিলেন তিনি। টোটোতে উঠে খেয়াল করেন, তাঁর পার্সটি নেই। বিস্তর খোঁজাখুজি করেও তা পাননি। শনিবারই নেতাজী পার্ক লাগোয়া রাস্তায় একটি পার্স কুড়িয়ে পায় সাবির। তার মধ্যে একটি এটিএম কার্ড, এক ব্যক্তির চাকরির পরিচয়পত্র ও পাঁচ হাজারের কিছু বেশি টাকা ছিল। নাম জানা গেলেও পার্থপ্রতিমবাবুর ঠিকানা বা ফোন নম্বর ছিল না।
সোমবার কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষকে পুরো ঘটনাটি জানায় সাবির। কী ভাবে পার্থপ্রতিমবাবুর ঠিকানা জানা যায়, এই ভেবেই তাঁর এটিএম কার্ডটি যে ব্যাঙ্কের, তারই একটি শাখায় পৌঁছে যায় সে। এটিএম কার্ড নম্বরের সূত্রেই মেলে ফোন নম্বর। ব্যাঙ্ক ম্যানেজারই যোগাযোগ করেন পার্থপ্রতিমবাবুর সঙ্গে। মঙ্গলবারই বেলডাঙা পৌঁছে সোজা কলেজে চলে যান পার্থপ্রতিমবাবু। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সুজাতা মুখোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে সাবির টাকা-সহ সবকিছু তাঁর হাতে তুলে দেয়।
সাবির বেলডাঙার বেনাদহ গ্রামের বাসিন্দা। টানাটানির পরিবার তাদের। এতগুলো টাকা একসঙ্গে দেখে নিতে ইচ্ছে করেনি? ‘‘তা কেন করবে? ও কী আমার টাকা নাকি?’’ সপাট জবাব সাবিরের। সে বলে, ‘‘ব্যাগের মধ্যে অতগুলো টাকা দেখে, সত্যি বলতে কী ঘাবড়েই গিয়েছিলাম।’’ সাবিরকে কীভাবে ধন্যবাদ জানাবেন, ভেবেই পাচ্ছেন না পার্থপ্রতিমবাবু। তিনি বলেন, ‘‘আজকালকার দিনে এমন ঘটনা তো বিরলই।’’ সুজাতাদেবী বলেন, ‘‘সাবির যা করেছে, সেটাই তো করা উচিৎ। ওর জন্য আমরা গর্বিত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy