Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

বাধা পেরিয়ে সফল রাজীবরা

প্রতিবন্ধকতা পদে পদে। কেউ স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছে। কারও বাড়িতে টনটনে অভাব। তবুও হার মানেনি ওরা। ওদের কাছে পড়াশোনাটা ছিল যুদ্ধের মতো। যেখানে হেরে যাওয়া মানেই লক্ষ্য থেকে ছিটকে যাওয়া। কিন্তু তেমনটা হতে দেয়নি ওরা। শত বাধা ডিঙিয়েও উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল করেছে রাজীব দণ্ডপাট, বেলডাঙার প্রিন্সি ঘোষ কিংবা ডোমকলের আসামেল মণ্ডল।

রাজীব দণ্ডপাট। ডান দিকে, প্রিন্সি ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

রাজীব দণ্ডপাট। ডান দিকে, প্রিন্সি ঘোষ। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ৩১ মে ২০১৫ ০০:২৬
Share: Save:

প্রতিবন্ধকতা পদে পদে। কেউ স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছে। কারও বাড়িতে টনটনে অভাব। তবুও হার মানেনি ওরা। ওদের কাছে পড়াশোনাটা ছিল যুদ্ধের মতো। যেখানে হেরে যাওয়া মানেই লক্ষ্য থেকে ছিটকে যাওয়া। কিন্তু তেমনটা হতে দেয়নি ওরা। শত বাধা ডিঙিয়েও উচ্চ মাধ্যমিকে ভাল করেছে রাজীব দণ্ডপাট, বেলডাঙার প্রিন্সি ঘোষ কিংবা ডোমকলের আসামেল মণ্ডল।

নবদ্বীপের আরসিবি সারস্বত মন্দিরের ছাত্র রাজীব এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে পেয়েছে ৪১৩ নম্বর। যদিও রাজীবের আসল বাড়ি নবদ্বীপ থেকে প্রায় আড়াই’শো কিলোমিটার দূরে ঘাটালের খড়ারে। দু’বেলা পেট ভরে খাওয়া আর লেখাপড়া শেখার জন্য রাজীব নিজের গ্রাম, বাবা, মাকে ছেড়ে যখন নবদ্বীপে এসেছিল তখন সে ষষ্ঠ শ্রেণির পড়ুয়া। রাজীবের লেখাপড়ায় তখনই ইতি টেনে দিতে চেয়েছিলেন তার বাবা। ঋণে জর্জরিত ভাগচাষি তারকনাথ দন্ডপাটের সাফ যুক্তি ছিল, দু’বেলা খাবার জোটে না। বাড়ি পর্যন্ত মহাজনের কাছে বন্ধক দিতে হয়েছে। এমন অবস্থায় আবার পড়াশোনা করা তো বিলাসিতা!

ঠিক সেই সময়ে নবদ্বীপের রামকৃষ্ণ সেবা সমিতির এক মহারাজের নজরে পড়ে রাজীব। সেই মহারাজই তাকে নবদ্বীপে নিয়ে আসেন। প্রথমে রামকৃষ্ণ সেবা সমিতি এবং পরে বিবেকানন্দ যুব মহামণ্ডলের তত্ত্বাবধানে শুরু হয় রাজীবের লড়াই। সে ভর্তি হয় নবদ্বীপ সারস্বত মন্দির স্কুলে। মাধ্যমিকেও সে ভাল রেজাল্ট করে। একাদশ শ্রেণিতে সে ভর্তি হয় কলাবিভাগে। যুব মহামণ্ডলের ছাত্রাবাসে থেকে অধ্যাপক শিহরণ চক্রবর্তী ও স্কুলের শিক্ষকদের অকুন্ঠ সাহায্যে ফের উচ্চ মাধ্যমিকে স্কুলের সর্বোচ্চ নম্বর পায় সে।

স্কুলের প্রধানশিক্ষক বিজনকুমার সাহা বলেন, “প্রথম থেকেই রাজীবের দায়িত্ব আমরা সকলে ভাগ করে নিয়েছিলাম। রাজীবও তার উপযুক্ত সম্মান রেখেছে।” তবে রাজীবের কোনও গৃহশিক্ষক ছিল না। বিবেকানন্দ যুব মহামণ্ডলের নিজস্ব কোচিং এবং স্কুলের শিক্ষকদের কাছে পড়েই সে বাজিমাত করেছে। স্কুলের পর্ব শেষ। এ বার সংস্কৃতে অনার্স নিয়ে বেলুড় বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে চায় রাজীব।

জন্ম থেকেই স্নায়ুর সমস্যায় ভুগছে বেলডাঙা হাজরাপাড়ার বাসিন্দা প্রিন্সি ঘোষ। ডান হাতে সে কোনও কাজ করতে পারে না। কারও সাহায্য ছাড়া একা স্কুল কিংবা পড়তে যেতেও পারত না বেলডাঙা শ্রীশচন্দ্র বিদ্যাপীঠের ওই ছাত্রী। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকে তার প্রাপ্ত নম্বর ৪০৪। এটাই তার স্কুলের সর্বোচ্চ নম্বর। বাংলায় ৭৭, ইংরেজিতে ৬৩, দর্শনে ৯০, ভূগোলে ৮৪, রাষ্ট্রবিজ্ঞানে ৯০। প্রিন্সির এমন ফলে উচ্ছ্বসিত তার পরিবার ও স্কুলের ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক সকলেই। প্রিন্সির বাবা দীপঙ্কর ঘোষ বলেন, ‘‘মেয়ে ছোট থেকেই প্রতিবন্ধী। একা একা স্কুল কিংবা পড়তে যেতে পারত না। সঙ্গে কাউকে যেতে হত।’’ প্রিন্সি বলে, ‘‘ছোট থেকেই ডান হাতের বদলে বাঁ হাতেই সব কাজ করি। প্রথমে কষ্ট হত। পরে অভ্যাস হয়ে গিয়েছে। ইংরেজি নিয়ে পড়াশোনা করে শিক্ষকতা করতে চাই। প্রতিবন্ধীদের জন্যও কিছু কাজ করতে চাই।’’ শ্রীশচন্দ্র বিদ্যাপীঠের প্রধানশিক্ষক বলরাম হালদার বলেন, ‘‘প্রিন্সি আমাদের স্কুলের গর্ব।’’

দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করেও উচ্চ মাধ্যমিকে ৪৬৫ নম্বর পেয়েছে ডোমকলের ডুবোপাড়ার আসামেল মণ্ডল। ডোমকল পাবলিক স্কুলের ওই পড়ুয়ার ইচ্ছে আলিগড় বা প্রেসিডেন্সিতে পদার্থবিদ্যা নিয়ে পড়াশোনা করা। আসামেলের বাবা লকিমুদ্দিন মণ্ডল পেশায় দিনমজুর। তাঁর সামান্য আয়ে আসামেলের এমন ইচ্ছে আদৌ পূরণ হবে কি না সেই চিন্তা কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে বাড়ির সকলকেই। লকিমুদ্দিন জানান, বাড়িতে একটি গরু আছে। দুধ বিক্রি করার টাকা আর দিনমজুরি করে পাওয়া সামান্য টাকাতেই আসামেলের পড়াশোনা চলত। অভাবের কারণে লেখাপড়া করতে পারেননি লকিমুদ্দিন। কিন্তু তাঁর জেদ, হাজার কষ্ট করেও ছেলেকে লেখাপড়া শেখাবেন। মাধ্যমিকেও আসামেল ৮০ শতাংশের উপর নম্বর পেয়েছিল। কিন্তু এ বার কী হবে তা ভেবে পাচ্ছে না আসামেল ও তার পরিবার।

বাজে মৃত্যু। বাগানে আম কুড়োতে গিয়ে বাজ পড়ে মারা গেল এক বালক। শনিবার সকাল ৬টা নাগাদ ওই ঘটনায় মারা যায় বছর দশেকের সাহিন শেখ। তার বাড়ি রানিতলা থানার সৈইদপুর গ্রামে। ওই ঘটনায় সাহিনের প্রতিবেশী এক বালক আহত হয়েছে। তাকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE