ট্রেন থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গেই অটো পেয়ে গিয়েছিলেন তিনি। সাতপাঁচ না ভেবে উঠেও পড়েছিলেন। অন্ধকার রাস্তায় ভয় ভয়ও করছিল। ঠিক তখনই আঁধার ফুঁড়ে বেরিয়ে এল বেপরোয়া মোটরবাইক। তারপর চলন্ত অটো থেকেই বাইকের আরোহীরা ছিনিয়ে নেয় ওই তরুণীর ব্যাগ। টাল সামলাতে না পেরে অটো থেকে পড়ে গিয়ে হাত ভেঙে যায় কৃষ্ণনগর স্টেশন রোড এলাকার বাসিন্দা ঊষা নাগের।
রাতের কৃষ্ণনগর আদৌ নিরাপদ তো? মঙ্গলবার রাতের এই ঘটনা ফের প্রশ্নটা তুলে দিল। হাসপাতাল থেকে ফিরে বুধবার বাড়িতে বসে ঊষা নাগ বলছেন, ‘‘এ সব কী হচ্ছে বলুন তো? সন্ধ্যার পরে কি নিশ্চিন্তে বাড়িও ফিরতে পারব না?’’
এ দিকে ঘটনার চব্বিশ ঘণ্টা পরেও দুষ্কৃতীরা ধরা পড়েনি। তরুণী ও অটোচালকের সঙ্গেও কথা বলার ফুরসত পায়নি পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা অবশ্য বলছেন, ‘‘ওই তরুণীর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা হয়েছে। ছিনতাই হওয়া ব্যাগের মধ্যে ওই তরুণীর মোবাইলও রয়েছে। সেই সূত্র ধরেই এগোচ্ছি। খুব শিগ্গির দুষ্কৃতীরা ধরা পড়বে।’’
যদিও এমন আশ্বাসে বিশেষ ভরসা পাচ্ছে না কৃষ্ণনগর। এখনও আতঙ্ক কাটেনি ওই তরুণীর। ঊষার গলায় উদ্বেগ, ‘‘কিছুতেই ঘুমাতে পারছি না। চোখ বন্ধ করলেই ওই দৃশ্যটা মনে পড়ে যাচ্ছে। কানে আসছে মোটরবাইকের আওয়াজ। ফের ওই পথ দিয়েই বাড়ি ফিরতে হবে ভাবলেই কেঁপে উঠছি!’’
ঊষা কলকাতার একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরি করেন। বুধবার সরস্বতী পুজোর ছুটি। মঙ্গলবার তাই অফিস ছুটি হতেই বাড়ি ফেরার ট্রেন ধরেছিলেন তিনি। শিয়ালদহ থেকে ট্রেনটি যখন কৃষ্ণনগরে এসে পৌঁছয় রাত তখন প্রায় সাড়ে দশটা। নবদ্বীপঘাট যাওয়ার অটোতে উঠে পড়েন ঊষা।
অটোতে আরও কিছু যাত্রী ছিলেন। চালকের পাশের আসনে বসেছিলেন ঊষা। কাঁধে ছিল ব্যাগ। গৌড়ীয় মঠের কাছ থেকে পিছু নেয় একটি লাল রঙের মোটরবাইক। বাইকে তিন জন ছিল। রেলগেটটা পেরোতেই তরুণীর কাঁধের ব্যাগ ধরে টান দেয় বাইকের এক যুবক। অটো থেকে পড়ে যান ঊষা। তত ক্ষণে ব্যাগ নিয়ে অন্ধকারে হারিয়ে যায় ওই বাইক।
পিচের রাস্তায় পড়ে গিয়ে যন্ত্রণায় ছটফট করছিলেন ওই তরুণী। ঠিকানা জেনে অটোচালক ও তাঁর সহযাত্রীরা তাঁকে বাড়ি পৌঁছে দেন। রাতেই তাঁকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। চিকিৎসকেরা জানান, ঊষার ডান হাতের হাড় ভেঙে গিয়েছে। চোট লেগেছে বাঁ হাতেও।
এমন ঘটনা এই প্রথম নয়। রাতের শহরে ছিনতাই, মহিলাদের উদ্দেশ্যে কটূক্তি, বাইক বাহিনীর দাপাদাপিতে ক্রমশ অতিষ্ঠ হয়ে উঠছেন কৃষ্ণনাগরিকেরা। সম্প্রতি শক্তিনগর জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসককে আগ্নেয়াস্ত্র দেখিয়ে
হুমকি দিয়েছে দুষ্কৃতীরা। বাসিন্দাদের দাবি, চেনা শহরটা ক্রমশ
বদলে যাচ্ছে। প্রশাসনের উচিত অবিলম্বে কড়া পদক্ষেপ করে শহরকে নিরাপদ রাখা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy