Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Jangipur

ফরাক্কা-সুতির গঙ্গা জুড়ে পড়েছে চর

এই অবস্থা থেকে মুক্তির সন্ধান শুরু হয়েছে। গঙ্গায় ড্রেজিং করে চরা কেটে জল প্রবাহ বাড়াতে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকার একটি ‘মডেল প্রকল্প’-এর সমীক্ষাও শুরু করছে রাজ্য সেচ দফতর।

Mudflat and siltation at Farakka and Suti ganges

খোসবাগেও গঙ্গার বুকে জেগেছে চর। ছবি: গৌতম প্রামাণিক

বিমান হাজরা , জীবন সরকার 
জঙ্গিপুর, ধুলিয়ান শেষ আপডেট: ১০ মার্চ ২০২৩ ০৮:২৭
Share: Save:

গঙ্গার খাত জুড়ে চরা পড়ায় ফরাক্কা থেকে সুতি পর্যন্ত নদীর বিস্তীর্ণ অংশ জল-শূন্য। ফরাক্কা ব্যারাজের ঠিক পরপরেই বেনিয়াগ্রাম থেকে গঙ্গার মাঝ বরাবর এই চরা পড়েছে। ফলে আটকে পড়েছে গঙ্গার মাঝ বরাবর জলের প্রবাহ। জলের চাপ বেড়েছে পূর্বে ও পশ্চিমের দুই পাড় বরাবর। আর তাতেই প্রবণতা বাড়ছে ভাঙনের।

রাজ্যের এক বিশিষ্ট নদী বিশেষজ্ঞের দেওয়া হিসেবে, গঙ্গা প্রতি বছর অন্তত ৮০ কোটি টন পলি বহন করে আনে ফরাক্কা ব্যারাজের উজানে। সেই জলরাশি ব্যারাজে বাধা পাওয়ার ফলে পলির বেশির ভাগটাই নদীর গর্ভে জমে যায়। এ পর্যন্ত গত ৪৫ বছরে সেই হিসেবে জমা পলির পরিমাণ অন্তত ৩৮০০ কোটি টন। অর্থাৎ উজানে গঙ্গার নদী খাত প্রতি বছর অন্তত ৪০ সেন্টিমিটার করে মজে চলেছে। সেই জমা পলি ফরাক্কার বেনিয়াগ্রাম থেকে সুতির বাজিতপুর পর্যন্ত বিশাল চরার সৃষ্টি করেছে।

এই অবস্থা থেকে মুক্তির সন্ধান শুরু হয়েছে। গঙ্গায় ড্রেজিং করে চরা কেটে জল প্রবাহ বাড়াতে প্রায় ২৫০০ কোটি টাকার একটি ‘মডেল প্রকল্প’-এর সমীক্ষাও শুরু করছে রাজ্য সেচ দফতর। উত্তরপ্রদেশের নয়ডার একটি সংস্থাকে নিয়োগ করা হয়েছে এই সমীক্ষার কাজে। ইতিমধ্যেই রাজ্য সেচ দফতরের সঙ্গে এক প্রস্থ আলোচনা হয়েছে তাদের। ১১ মাস ধরে সমীক্ষার পর ‘ডিটেলস প্রজেক্ট রিপোর্ট’ তৈরি করে তা রাজ্য সরকারের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পাঠানো হবে। রাজ্য ও কেন্দ্র ওই ২৫০০ কোটি টাকার প্রকল্পেকে কত শতাংশ শেয়ার করবেন তার উপরই শুরু হবে ওই মডেল প্রকল্পের কাজ। এই প্রকল্প রূপায়িত হলে ফরাক্কা থেকে নিমতিতা পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার এলাকার ভাঙন সমস্যার সমাধান হবে বলেই মনে করছেন রাজ্য সেচ দফতরের নদী বিশেষজ্ঞরা। এর সঙ্গে যুক্ত করা উত্তরে মালদহের কিছু অংশকেও।এই মুহূর্তে ফরাক্কা থেকে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে জলচুক্তি মতো জল সরবরাহ হচ্ছে গঙ্গায়। ১ জানুয়ারি থেকে ৩১ মে পর্যন্ত প্রতি দশ দিন অন্তর জল সরবরাহে পরিবর্তন ঘটে ওই চুক্তি অনুযায়ী।

গঙ্গা ও পদ্মার ভাঙনে গত দু’দশকে প্রায় ২৮০০ হেক্টর জমি নদীর গর্ভে গিয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ১০০০ কোটি টাকা। এই বিপুল ক্ষতিতে স্বচ্ছল মানুষও আজ বাড়ি ঘর, জমি হারিয়ে দুর্দশায় পড়েছেন। ২০০৪ সালে গঙ্গা ভাঙনে চলে গিয়েছে ৩৫৬ বর্গ কিলোমিটার চাষযোগ্য জমি। ১৯৮৮ থেকে ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত ৮০ হাজার মানুষ ভিটে ছাড়া হয়েছেন। আড়াই দশক ধরে এই ভাঙন চলছে। বহরমপুরের সাংসদ অধীর চৌধুরী ইতিমধ্যেই এই ক্ষতির বিবরণ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। চিঠি দিয়েছেন জঙ্গিপুরের সাংসদ খলিলুর রহমানও।

রাজ্য সেচ দফতরের মতে, ফরাক্কা ও শমসেরগঞ্জের ভাঙনের প্রধান কারণ এই গজিয়ে ওঠা চর। উত্তরপ্রদেশে কেন্দ্রীয় সরকার গঙ্গায় ভাঙন থেকে বাঁচতে ৬৫২২ কোটি টাকা বরাদ্দ করে খাত সাফাইয়ের কাজ শুরু করেছে। রাজ্য সেচ দফতরও সেই পথে এগোতে চাইছে।

মুর্শিদাবাদের রাজ্য সেচ দফতরের সুপারেন্টেডিং ইঞ্জিনিয়ার সঞ্জয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “গঙ্গার উপর এই বিশাল চর মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একটি নামী সংস্থাকে সমীক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। সমীক্ষা করে ডিপিআর তৈরি করে কেন্দ্রকে পেশ করা হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Jangipur Dhulian Silt
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy