কল্লোল প্রামাণিকের তোলা ছবি।
এ যেন সেই বেসরকারি হাসপাতালের বিজ্ঞাপন। ‘তোমার ছুটি, আমার নয়।’ নদিয়ার পুলিশ কর্মীদের অবস্থা অনেকটা তেমনই।
নোটের গুঁতোয় রাসের ভিড়ে ভাটার টান। কিন্তু, ছুটি নেই পুলিশের। শিড়দাঁড়া টানটান করে ডিউটি করে যাচ্ছেন তারা। তবে ব্যবসায়ীদের আশা, শেষবেলায় ভিড় টানবে রাসের মেলা। বিশেষ করে শান্তিপুরের ভাঙা রাসে ভিড় হবে বলে মনে করছে সব পক্ষই।
শুধু দেশেরই নয়, বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষের কাছে শান্তিপুরের বৈষ্ণব রাস আজও সমান জনপ্রিয়। পর্যটকদের পাশাপাশি উৎসবের দিনগুলিতে শান্তিপুর শহরে ভিড় জমান বিভিন্ন দোকানী। খাবার থেকে শুরু করে নানান ধরণের জিনিসের পসরা সাজিয়ে তারা বসে পড়েন রাস্তার ধারে কিম্বা বিভিন্ন মন্ডপের সামনে। তবে এবার রাস্তার পাশের সেই সব দীর্ঘ দিনের চেনা মুখের দোকানিদের দেখা মিলছে না। কারণ, সেই নোটের ধাক্কা।
ভিড় না থাকায় মার খেয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরাও। শান্তিপুর থানা এলাকা ব্যবসায়ী সমন্বয় সমিতির সম্পাদক তারক দাস বলেন, “নোটের ধাক্কা সামলে ওঠাই কঠিন হয়ে পড়েছে। এমনিতেই নোটের আকালের দিনে ব্যবসা জলে, তার উপরে বাইরের লোকও তেমন আসছে না।”
একই কথা শান্তিপুর পুসভার দীর্ঘদিনের পুরপ্রধান তৃণমূলের অজয় দেরও। তিনি বলেন, “টাকা নিয়ে সকলেই যা সমস্যার মধ্যে রয়েছেন, তাতে বাড়ির বাইরে বের হওয়াই মুশকিল। দোকানও কম বসেছে। নোট বদলের ধাক্কা কিন্তু রাসকে বেসামাল করল।” তবে তাঁর আশা, শেষ দু’দিন ব্যবসার হাল কিছুটা ফিরবে।
শান্তিপুর শহরের প্রায় শ’খানেক বারোয়ারি লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে মণ্ডপ করেছেন। গত বছরও হাজার হাজার মানুষ মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় বাড়িয়েছেন। কিন্তু এ বার রাসের ঠিক আগেই ৫০০ এবং ১০০০ টাকার নোট বাতিলের ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পড়েছে পুরো উৎসবটাই।
বারোয়ারিগুলির কর্মকর্তাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ। ঢাকি থেকে শুরু করে মন্ডপ শিল্পী, পুরোহিত— টাকা মেটানোর ক্ষেত্রে চরম সমস্যায় পড়েছেন তাঁরা। কিন্তু, তাঁদের আরও বেশি নিরাশ করেছে প্রায় ফাঁকা রাস্তাঘাট। তাঁদের আক্ষেপ, ‘‘যাদের জন্য এত আয়োজন তারাই যদি না আসেন, তা হলে উৎসবের আর সার্থকতা কোথায়?”
শুধু নবদ্বীপ আর শান্তিপুরই তো শুধু নয়। গত কয়েক বছর ধরে রাস মানচিত্রে উঠে এসেছে জেলারই ভীমপুরের কুলগাছি ও চাপড়ার দইয়ের বাজার। ফি বছর বাড়ছে রাসের সংখ্যা আর জৌলুশ। বাইরের লোকেরা না এলেও তবে স্থানীয়রা ভিড় করছেন আগের মতোই।
সোমবার থেকে শুরু হয়েছে শান্তিপুরের রাস। মঙ্গলবার মধ্যম রাস আর বুধবার ভাঙারাস। এই তিন দিনই শান্তিপুরের রাস্তায় উপচে পড়ে ভিড়। আর সেই ভিড় সামাল দিতে রীতিমত হিমশিম থেকে হয় পুলিশ কর্মীদের। ভিড় না হলেও পুলিশি আয়োজন ছিল প্রতিবারের মতোই। সাড়ে তিনশ’ সিভিক ভলান্টিয়ার সহ সাড়ে তিনশ’ জন রাজ্য পুলিশ কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
তার মধ্যে আবার প্রায় একশো জন অফিসার। রীতিমত ঘাঁটি গেড়ে বসে আছেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার থেকে শুরু করে এসডিপিও-সহ একাধিক সিআই ও ওসিরা। ভিড়ের সেই দাপট যে এবার কম, সেটা স্বীকার করে নিচ্ছেন তাঁরাও। কিন্তু ডিউটি এতটুকু হালকা দেওয়ার উপায় নেই। অভিজ্ঞ পুলিশ অফিসাররা বলছেন, বাইরের দর্শনার্থীরা নয়, বরাবর গণ্ডগোল পাকায় স্থানীয় দুষ্কৃতীরা।
জেলার এক পুলিশ কর্তা বলছেন, সেই দুর্গাপুজো থেকে এক টানা ডিউটি চলছে। কালীপুজো, জগদ্ধাত্রী পুজো, তার পরে রাস। ফলে, আর ধকল নেওয়া যাচ্ছে না। এ বার ভিড় কম হলেও নজরদারিতে ঢিল দেওয়া যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy