দুয়ারে সরকার শিবিরের আয়োজনে ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’ অবস্থা পঞ্চায়েতগুলির নিজস্ব তহবিলে। সাধারণ উন্নয়ন ও আনুষঙ্গিক খরচ চালানো এখন দুষ্কর হয়ে উঠছে বলে দাবি পঞ্চায়েত প্রধানদের একাংশের। নদিয়া জেলায় থাকা ১৮৫টি গ্রাম পঞ্চায়েতের চিত্রটা প্রায় একই রকম।
গত ২৪ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলছে নবম দফার দুয়ারে সরকার শিবির। ২০২০ সালে রাজ্যে প্রথম দফায় দুয়ারে সরকার শিবির করা হয়। সূত্রের খবর, ওই শিবিরের আয়োজন করতে গিয়ে বিগত বছরগুলির মতো এ বারও ‘হাত’ পড়ছে পঞ্চায়েতগুলির নিজস্ব তহবিলে। এ বছরে অবশ্য খরচ কমাতে সেই আয়োজনে অনেকটাই কাটছাঁট করা হয়েছিল। প্রশ্ন উঠছে, শিবির আয়োজনের জন্য খরচের টাকা মিলছে কী ভাবে?
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, শহর ও গ্রামীণ এলাকায় ওই শিবিরের জন্য সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত কিংবা পুরসভার নিজস্ব তহবিলের অর্থ খরচ করতে হচ্ছে। জেলায় মোট ১৮৫টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও দশটি পুরসভা রয়েছে। পুরসভাগুলির নিজস্ব ভবন কিংবা অনুষ্ঠান বাড়িও রয়েছে। সেখানে মূলত দুয়ারে সরকার শিবিরের আয়োজন করা হয়ে থাকে। কিন্তু বেশিরভাগ পঞ্চায়েতেই শিবিরের জন্য বাঁশ-ত্রিপল দিয়ে প্যান্ডেল, সেখানে আলো, পানীয় জল ইত্যাদি আনুষঙ্গিক আয়োজন করতে হয়।
যেমন রানাঘাট-১ ব্লকের অধীনে থাকা রামনগর ১ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বিজেপির শিবু মণ্ডল বলেন, ‘‘ওই শিবির করতে গিয়ে এ বছরে পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিলের প্রায় সাড়ে ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।’’ আবার হরিণঘাটা ব্লকের কাষ্ঠ ডাঙা ২ পঞ্চায়েতে পৃথক দুই দিন দুয়ারে সরকার শিবিরের আয়োজন করা হয়েছিল। পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের চিন্ময় দাস বলেন, ‘‘সব মিলিয়ে আমাদের পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবলের প্রায় ৫০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার মধ্যে সামান্য কিছু টাকা ব্লক অফিস থেকে দেওয়ার কথা।’’
অনেকেই বলছেন, অনুষ্ঠান, অতিথি আপ্যায়ন, আধিকারিক-কর্মীদের জন্য মধ্যাহ্নভোজ, আলোর ব্যবস্থা, প্রচার ইত্যাদির জন্য পঞ্চায়েতের নিজস্ব তহবিল ব্যবহার করা যায় না। পঞ্চায়েত প্রধানদের অনেকেরই দাবি, শিবির আয়োজনের জন্য আলাদা করে অর্থ বরাদ্দ হয় না। আবার অধিকাংশ পঞ্চায়েতের ক্ষেত্রে নিজস্ব আয় নেই বললেই চলে। কর সংগ্রহ করে যে টুকু টাকা তহবিলে গচ্ছিত হয়, তা এমন অনুষ্ঠান করতে গিয়েই এক ধাক্কায় অনেকটাই খরচ হয়ে যাচ্ছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক (জেলা পরিষদ) অনুপকুমার দত্ত বলেন, ‘‘শিবিরের জন্য পঞ্চায়েতগুলি নিজস্ব তহবিলের টাকা খরচ করেছে কি না তা জানতে হবে। কোনও পঞ্চায়েত যদি তা করে থাকে তা কী ভাবে করছে, খোঁজ নিতে হবে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)