মুখ্যমন্ত্রী কাল, সোমবার কী বলেন তা জানতে উদগ্রীব হয়ে রয়েছে শিক্ষকমহল। কিন্তু জট না খোলা পর্যন্ত কী ভাবে স্বাভাবিক কাজকর্ম বজায় রাখা যায়, তা ভাবতে গিয়ে ঘুম উড়েছে বহু প্রধান শিক্ষকেরই। নদিয়ায় প্রায় তিনশো স্কুল থেকে মোট ৯০৩ জন শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী আদালতের রায়ে চাকরি হারিয়েছেন।এমনিতেই দীর্ঘদিন নিয়োগ না হওয়ায় জেলার প্রায় সমস্ত স্কুলেই প্রয়োজনের তুলনায় শিক্ষকের সংখ্যা অপ্রতুল। শিক্ষাকর্মীরা না স্কুলের কাজকর্ম কারা চালাবেন? ফলে মুখর হচ্ছে শিক্ষক সংগঠনগুলিও।
এই পরিস্থিতির জন্য সরাসরি রাজ্য সরকারের দিকে আঙুল তুলছে বিরোধী শিক্ষক সংগঠনগুলি। বিজেপির শিক্ষক সংগঠনের নদিয়া জেলা আহ্বায়ক অমিত চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এত শিক্ষকের সামাজিক প্রতিষ্ঠা, সম্মান যে ভাবে ধুলায় মিশিয়ে দেওয়া তার দায় কে নেবে? রাজ্য সরকারের সদিচ্ছার অভাবে বহু যোগ্য শিক্ষককে পথে বসতে হল।” এবিটিএ-র রাজ্য কমিটির সদস্য সৌমেন অধিকারীর মতে, “দুর্নীতিগ্রস্ত শিক্ষাবিরাধী রাজ্য সরকারের মদতে প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির শিকার হয়েছেন বাংলার কয়েক হাজার মেধাবী ও যোগ্য শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী।”
নদিয়ার একটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক অজিত ভট্টাচার্য মনে করেন, তীব্র সমস্যার মুখোমুখি হতে হবে স্কুলগুলিকে। তাঁর কথায়, “রাজ্যের স্কুলগুলিতে বর্তমানে পাঠরত প্রায় ৫০ লক্ষের কাছাকাছি ছাত্রছাত্রীর শ্রেণিকক্ষের পঠনপাঠন বিপর্যস্ত হবে। ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ব্যাপক হারে বাড়বে। অনিবার্য পতন ঘটবে শিক্ষার গুণগত মানের।”
অধিকাংশ স্কুলের যাবতীয় কাজ এখন কম্পিউটার-নির্ভর। কন্যাশ্রী, সবুজ সাথী, শিক্ষাশ্রী, তরুণের স্বপ্ন ইত্যাদি যাবতীয় সরকারি স্কলারশিপের কাজই কম্পিউটারের মাধ্যমে হয়। আগামী ১৮ এপ্রিলের মধ্যে একাদশ শ্রেণির প্রথম এবং দ্বিতীয় সিমেস্টারের নম্বর তোলার কাজ সম্পূর্ণ করতে হবে উচ্চ মাধ্যমিক সংসদের পোর্টালে। যে সমস্ত স্কুল করণিক হারাল, তারা কাজ সামলাবে কী করে— প্রশ্ন তুলছেন পশ্চিমবঙ্গ প্রধান শিক্ষক সমিতির নদিয়া জেলা কমিটির সভাপতি কিংশুক চক্রবর্তী।
তবে পশ্চিমবঙ্গ তৃণমূল মাধ্যমিক শিক্ষক সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক রমেন ঘোষের দাবি, ‘‘এই পরিস্থিতির জন্য রাজ্য সরকারকে একতরফা দায়ী করা যায় না। সুপ্রিম কোর্টে রাজ্য ৫০৭৩ জনের একটা তালিকা জমা দিয়েছিল, যাদের নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন ছিল। সে ক্ষেত্রে যোগ্য-অযোগ্য ভাগ তো করেই দেওয়া হয়েছে। না বুঝে অনেকেই অনেক কথা বলছেন। মুখ্যমন্ত্রী হস্তক্ষেপ করছেন। আশা করি, সঙ্কট দ্রুত কেটে যাবে।”
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)