Advertisement
৩১ জানুয়ারি ২০২৫
Bunkers Found In Nadia

দিল্লির গাড়ি, বারাণসীর সিরাপ, বদল চালকও

লালের সিরাপ পাচারের ‘রুট’ জুলাইয়ে সিরাপ উদ্ধারের পরে পুলিশ আন্দাজ করতে পেরেছিল। ধৃত তিন গাড়ি চালকের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায়।

নদিয়ার দুই বিঘা জমিতে অভিযানে বিএসএফ।

নদিয়ার দুই বিঘা জমিতে অভিযানে বিএসএফ। —নিজস্ব চিত্র।

সুস্মিত হালদার
শেষ আপডেট: ৩১ জানুয়ারি ২০২৫ ০৬:৫০
Share: Save:

উত্তরপ্রদেশের বারাণসী থেকে নদিয়ার বাংলাদেশ সীমান্ত। একাধিক বার গাড়ির চালক বদল, রাতের অন্ধকারে মজুত করা আর নগদে লেনদেন। এই পন্থায় চলছিল কাশির নিষিদ্ধ সিরাপ পাচারের কারবার। বাদ সাধল বাংলাদেশের অশান্ত পরিস্থিতি। পুলিশের দাবি, নদিয়ার কৃষ্ণগঞ্জে সিরাপ পাচারের কারবারের অন্যতম পান্ডা সুশান্ত ঘোষ ওরফে লালের কারবারে ধাক্কা দিয়েছিল সেই অস্থিরতা ও তার জেরে সীমান্তে বেড়ে যাওয়া নজরদারি।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, সীমান্তে কড়াকড়ির ফলে, দুই পারে সিরাপ পাচারের ‘কেরিয়ার’রা পিছিয়ে যাচ্ছিল। বাড়তি ঝুঁকি নিয়ে সিরাপ ও-পারে পৌঁছনো গেলেও তা সেখানকার পাচারের ‘চেন’ পর্যন্ত পৌঁছবে কি না, সেই নিশ্চয়তা ছিল না। দাম পাওয়া নিয়েও অনিশ্চয়তা ছিল।

তা সত্ত্বেও গত জুলাইয়ে বিশ হাজার বোতল সিরাপ পাচারের চেষ্টা করে লালের বাহিনী। কিন্তু ধরা পড়ে। পুলিশ তল্লাশি শুরু করায় গা-ঢাকা দেয় লাল। পুলিশ সূত্রের দাবি, এর ফলেই ভূগর্ভস্থ কুঠি বা ‘বাঙ্কার’-এ মজুত বিপুল পরিমাণ সিরাপ পাচার করা যায়নি। গত শুক্রবার বিএসএফ তেমনই ‘বাঙ্কার’-এর সন্ধান পেয়েছে। কৃষ্ণনগর পুলিশ-জেলার সুপার অমরনাথ কে বলেন, “বাংলাদেশে অস্থিরতা তৈরি হওয়ায় লালের ব্যবসা জোর ধাক্কা খায়। ওই সময়ে মজুত করা সিরাপের বেশির ভাগটাই সম্ভবত সে পাচার করতে পারেনি। তাই তিনটি বাঙ্কারে অত বোতল মিলেছে।”

লালের সিরাপ পাচারের ‘রুট’ জুলাইয়ে সিরাপ উদ্ধারের পরে পুলিশ আন্দাজ করতে পেরেছিল। ধৃত তিন গাড়ি চালকের বাড়ি উত্তরপ্রদেশের বিভিন্ন এলাকায়। তাদের জেরা করে জানা যায়, বারাণসীর গুদাম থেকে আসা সিরাপ রাজ্যে পাঠাতে পণ্যবাহী গাড়ি ভাড়া করা হয় দিল্লির একটি সংস্থা থেকে। একাধিক বার বদলানো হয় চালক—যাতে গাড়ি ধরা পড়লেও পুলিশ পুরো ‘খবর’ না পায়।

কেমন সেই রুট? পুলিশ সূত্রের দাবি, এক চালক দিল্লি থেকে গাড়ি নিয়ে বারাণসীতে নির্দিষ্ট জায়গায় দাঁড় করাত। বারাণসীর এক চালক গাড়ি নিয়ে যেত গুদামে। সেখানে থেকে সিরাপ বোঝাই করে এনে দিল্লির চালককে গাড়ি দেওয়া হত। সে গাড়ি নিয়ে আসত ঝাড়খণ্ডের সীমানায়। সেখান থেকে অন্য চালক গাড়ি নিয়ে বর্ধমান হয়ে নদিয়ায় ঢুকত। নবদ্বীপ ও কৃষ্ণনগর পার করে গাড়ি যেত কৃষ্ণগঞ্জে। পূর্বনির্দিষ্ট ফাঁকা জায়গায় রাতের অন্ধকারে সিরাপের বোতল নামাত স্থানীয় ‘এজেন্টরা’। গাড়ির চালক আশপাশে কোথাও দু’-চার দিন থাকত। তার মধ্যে সিরাপ যথাস্থানে পৌঁছে ‘এজেন্টরা’ নগদে টাকা মেটালে, চালক গাড়ি নিয়ে ফিরত।

পুলিশের দাবি, ফিরতি পথে চালক বলে দেওয়া রেলস্টেশনে নির্দিষ্ট সময়ে গিয়ে টাকার ব্যাগ রেখে আসত। সেই জায়গায় অপেক্ষা করা কেউ ব্যাগ তুলে নিত। হাতবদল হয়ে নগদ টাকা যেত কারবারের চাঁইয়ের কাছে। কারবার চলত নগদে ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে। পুলিশের চোখে ধুলো দিতে অনেক সময়ে টাকা হাতবদলে মহিলা বা নাবালকদেরও ব্যবহার করা হত।

অন্য বিষয়গুলি:

Nadia Cough Syrup police investigation
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy