Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

কে রাখছেন মনের খবর?

কলকাতার বেসরকারি স্কুলে এক ছাত্রীর মৃত্যুর পরে কতটা সতর্ক জেলার স্কুলগুলি? শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষে কি পড়ুয়াদের মনের খবর রাখা সম্ভব হয়? খোঁজ নিল আনন্দবাজার কলকাতার বেসরকারি স্কুলে এক ছাত্রীর মৃত্যুর পরে কতটা সতর্ক জেলার স্কুলগুলি? শিক্ষক-শিক্ষিকাদের পক্ষে কি পড়ুয়াদের মনের খবর রাখা সম্ভব হয়? খোঁজ নিল আনন্দবাজার

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

সামসুদ্দিন বিশ্বাস
বহরমপুর শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৯ ০৩:২৯
Share: Save:

হইহই করে বেড়ানো ছেলেটা ক’দিন ধরেই স্কুলে বড্ড চুপচাপ থাকছে। তার নাম ধরে কেউ ডাকলেই সে চমকে উঠছে। কেন?

হাসিখুশি মেয়েটাও টিফিন পিরিয়ডে একা বসে থাকছে ক্লাসরুমে। বন্ধুরা ডাকলে বলছে, ‘ভাল্লাগছে না রে!’ কেন?

প্রথমত, আদৌ কি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকারা পড়ুয়াদের এমন প্রশ্ন করছেন? দ্বিতীয়ত, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের কাছে কি পড়ুয়ারা মনের সব কথা খুলে বলতে পারছে?

বেশিরভাগ স্কুল কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, স্কুলের যা পরিকাঠামো তাতে সব সামলে আলাদা করে পড়ুয়াদের মনের খবর রাখা সম্ভব হয় না। তবে তেমন কিছু চোখে পড়লে বা তাঁদের আচরণে বড় কোনও পরিবর্তন হলে পদক্ষেপ করা হয়।

বহরমপুরের গোরাবাজার আইসিআইয়ের প্রধান শিক্ষক জয়ন্ত দত্ত বলছেন, ‘‘চারপাশটা যে ভাবে বদলে যাচ্ছে তাতে সত্যি সত্যি আমরা ছেলেমেয়েদের মনের তল খুঁজে পাই না। কিন্তু তাদের মনের খবর রাখাটাও জরুরি।’’ তিনি জানান, পড়ুয়াদের মনের অবস্থা বুঝতে প্রয়োজন কাউন্সেলিংয়ের। তিন-চারটি বিদ্যালয় পিছু এক জন করে কাউন্সেলর নিয়োগ করলে সুবিধে হয়। একই সঙ্গে বাবা মায়েরও কাউন্সেলিং করা দরকার।

পড়ুয়াদের মনের অবস্থা বুঝতে কলকাতার বিভিন্ন বিদ্যালয় মনোবিদদের সাহায্য নিচ্ছে। মনোবিদেরা মাঝে মাঝে বিদ্যালয়ে এসে পড়ুয়াদের কাউন্সেলিং করছেন, পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলছেন। জেলার বিদ্যালয়গুলি কতটা কী করছে? জেলার সিংহভাগ বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানাচ্ছেন, মিডডে মিল থেকে শুরু করে পড়ুয়াদের বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের কাজ করতে গিয়ে কালঘাম ছুটে যাচ্ছে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের। এর মধ্যে পড়ুয়াদের মনের খবর রাখা কি সম্ভব নাকি!

তবে কলকাতার ওই বেসরকারি স্কুলের ঘটনার পরে বেশ কিছু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ উদ্যোগী হয়ে মনোবিদ রাখার কথা ভাবছেন। কিছু স্কুল কর্তৃপক্ষ আবার নিজেদের মতো করে পড়ুয়াদের মন বোঝার চেষ্টা করছেন। বহরমপুরের হিকমপুর হাইস্কুল কর্তৃপক্ষ বছর দু’য়েক আগে ‘মনের কথা’ নামে একটি বাক্স রেখে দিয়েছেন স্কুলে। সেখানে পড়ুয়ারা তাদের মনের কথা লিখে জমা দেয়। প্রতি শনিবার বাক্স খুলে পড়ুয়াদের সেই চিঠি বের করেন প্রধান শিক্ষক।

প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘‘চিঠিতে পড়ুয়ারা নানা রকম সমস্যার কথা লেখে। সেই চিঠির কথা গোপন রাখা হয়। চিঠি থেকে কিছুটা হলেও ওদের মনের হদিস মেলে। তেমন বুঝলে পড়ুয়াদের আলাদা ভাবে ডেকে কথা বলা হয়। প্রয়োজনে মনোবিদেরও সাহায্য নেওয়া হয়। ‘মনের কথা’ বাক্সে মাসে অন্তত খান দশেক চিঠি আসে।’’

লালবাগের নবাব বাহাদুরস ইনস্টিটিউশনের তরফে বছরে দু’বার কাউন্সেলর আনা হয়। তাঁরা কথা বলেন পড়ুয়াদের সঙ্গে। প্রধান শিক্ষক মাসুদ আলম বলছেন, ‘‘বছর দু’য়েক থেকে এই ব্যবস্থা চালু হয়েছে। আমরা সুফলও পাচ্ছি।’’

হরিহরপাড়ার এক স্কুল শিক্ষক বলছেন, ‘‘সব সময় স্কুলে মনোবিদ নিয়ে আসা সম্ভব নাও হতে পারে। সবথেকে আগে জরুরি পড়ুয়াদের বিশ্বাস অর্জন। পড়ুয়ারা যেন শিক্ষক-শিক্ষিকাকে বন্ধু ভাবতে পারে। সেটা করতে পারলেই অনেক সমস্যা মিটে যাবে। এবং যাচ্ছেও। না হলে বাল্যবিবাহ বন্ধ হচ্ছে কী করে? পড়ুয়ারা এসে বলছে, ‘ও স্যর, বাড়ির লোকজন আমার বিয়ে দিতে চাইছে। আমাকে বাঁচান।’ এ ভাবেই পড়ুয়ারা সমস্যার কথা জানাচ্ছে। স্কুলের প্রতি ভরসাও বাড়ছে।’’ (চলবে)

অন্য বিষয়গুলি:

Berhampur Student Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy