Advertisement
২২ ডিসেম্বর ২০২৪
School Dropout

নেই শিক্ষক, বন্ধ বিদ্যালয়, স্কুলছুট হচ্ছে পড়ুয়ারা

বইপত্র ছেড়ে ছাত্রদের অনেকেই কেউ এলাকায় বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দু-এক জন আবার কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছে ভিন রাজ্যে।

স্কুল প্রাঙ্গনে ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু ছাগল।

স্কুল প্রাঙ্গনে ঘুরে বেড়াচ্ছে গরু ছাগল। — নিজস্ব চিত্র।

মফিদুল ইসলাম
হরিহরপাড়া শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০২৩ ০৬:৫৮
Share: Save:

আছে দ্বিতল ভবন। বিদ্যালয়ের সামনে রয়েছে বিশাল খেলার মাঠ। তবে বিদ্যালয়ে নেই এক জনও শিক্ষক। নেই কোনও শিক্ষাকর্মীও। ফলে গত কয়েক মাস ধরে তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে রয়েছে হরিহরপাড়ার লোচনমাটি জুনিয়র হাইস্কুল। শিক্ষকের অভাবে নতুন শিক্ষাবর্ষেও খোলেনি বিদ্যালয়ের তালা। বিদ্যালয় চত্বর এখন গবাদিপশুর বিচরণ ক্ষেত্র। অন্যদিকে গ্রামের বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় অধিকাংশ পড়ুয়াই হয়ে পড়ছে স্কুলছুট।

বইপত্র ছেড়ে ছাত্রদের অনেকেই কেউ এলাকায় বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। দু-এক জন আবার কাজের সন্ধানে পাড়ি দিয়েছে ভিন রাজ্যে।জানা গিয়েছে ২০১১ সালে এলাকার কয়েক জন বাসিন্দার দানের জমিতে গড়ে ওঠে ওই জুনিয়র হাইস্কুল। শিক্ষা দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই বিদ্যালয় চালুর পর কোনও পূর্ণ সময়ের শিক্ষক ছিলেন না। এক জন অতিথি শিক্ষক নিয়েই শুরু হয় পঠনপাঠন। ২০১৭ সালে নিজামুদ্দিন মণ্ডল নামে এক অতিথি শিক্ষক ওই বিদ্যালয়ে কাজে যোগ দেন। ২০১৮ সালে এক শিক্ষাকর্মী ওই বিদ্যালয়ে কাজে যোগ দেন। গত ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর চাকরির মেয়াদ শেষ হয়েছে নিজামুদ্দিনের। তারপর কয়েক মাস স্বেচ্ছায় বিদ্যালয়ে এসে কোনও ক্রমে ক্লাস চালাতেন তিনি। ২০২২ এর মার্চ মাসে অন্যত্র বদলি হয়েছেন একমাত্র শিক্ষাকর্মী। খাতায় কলমে ওই স্কুলে ছিল তিন জন পড়ুয়া। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে নতুন শিক্ষাবর্ষে তারা অন্য কোনও বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়নি। প্রত্যেকেই বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন।

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, বিদ্যালয়ের পরিকাঠামো থাকলেও শিক্ষক না থাকায় অধিকাংশ অভিভাবকই তাদের ছেলেমেয়েদের ওই বিদ্যালয়ে ভর্তি করতে চাইতেন না। তবুও প্রতিটি শ্রেণিতে পাঁচ -ছ'জন পড়ুয়া নিয়ে ২০-২১ ছাত্রছাত্রী নিয়ে চলত পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণির পঠনপাঠন। স্থানীয় এক বাসিন্দা নাসিরুদ্দিন সেখ বলেন, ‘‘লকডাউনের সময় থেকেই স্কুল লাটে উঠেছে। শুনেছি গত বছর মাত্র তিন জন ছাত্র ভর্তি ছিল। তা-ও প্রায় ছ-সাত মাস ধরে স্কুল তালাবন্ধ অবস্থায় পড়ে আছে।’’ ছাত্রছাত্রীদের কেউ কেউ তরতিপুর, কয়েক জন হরিহরপাড়া হাইস্কুলে ভর্তি হয়েছে। জানা গিয়েছে বিদ্যালয়ের অধিকাংশ ছেলেমেয়েই কেউ ষষ্ঠ শ্রেণি, কেউ আবার অষ্টম শ্রেণির পর স্কুলছুট হয়ে পড়েছে। জানা গিয়েছে গত শিক্ষাবর্ষে ওই স্কুলের অষ্টম শ্রেণির দুই ছাত্রীর মধ্যে একজনের নাবালিকা অবস্থাতেই চার মাস আগে বিয়ে হয়ে গিয়েছে।

ওই বিদ্যালয়ের ছাত্র বছর চোদ্দোর আনোয়ার শেখ। এ বছর তার অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার কথা। কিন্তু স্কুলে ভর্তি না হয়ে কলকাতায় রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করে। সুপর্ণা দাস নামে উচ্চ প্রাথমিকের এক চাকরি প্রার্থী বলেন, ‘‘অধিকাংশ জুনিয়র হাইস্কুল শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে। অথচ উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগ পরীক্ষায় পাশ করেও আমরা দীর্ঘদিন ধরে বসে রয়েছি। আমাদের প্রশিক্ষণ আপডেট করে উচ্চ প্রাথমিকে নিয়োগের ব্যবস্থা করুক সরকার।’’

হরিহরপাড়ার অবর বিদ্যালয় পরিদর্শক শর্মিষ্ঠা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘অতিথি শিক্ষক দিয়ে কিছু উচ্চ প্রাথমিক স্কুল চালানোর চেষ্টা চলছে। ওই স্কুলের জন্যও অতিথি শিক্ষকের খোঁজ চলছে। অতিথি শিক্ষক পেলে স্কুল খোলার ব্যবস্থা করা হবে। পড়ুয়ারা যাতে স্কুলছুট না হয়ে পড়ে সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ করা হবে।"

অন্য বিষয়গুলি:

School Dropout Hariharpara Teacher Crisis
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy