—প্রতীকী চিত্র।
সোমবার কলকাতা হাই কোর্টে এসএসসি নিয়োগ-দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা হয়েছে। উচ্চ আদালত রায়ে জানিয়েছে, মেয়াদ উত্তীর্ণ হওয়ার পরে কোনও চাকরি পেলে তার বৈধতা গণ্য করা হবে না। তাই ২০১৬ সালে এসএসসি চাকরি পাওয়া ২৫ হাজার ৭৫৩ জনের চাকরি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। নতুন করে নিয়োগ করতে হবে। নতুন নিয়োগে এসএসসি-কে কী কী নিয়ম মানতে হবে, তার জন্য কয়েক দফা নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। এর প্রভাব নদিয়া জেলায় কতটা পড়ল, ইতিমধ্যেই তা নিয়ে জোরদার চর্চা শুরু হয়েছে।
সার্বিক ভাবে জেলায় ঠিক কত জনের চাকরি বাতিল হতে পারে, সে বিষয়ে স্পষ্ট ছবি মেলেনি। তবে জানা গিয়েছে, জেলায় এমন একাধিক স্কুল রয়েছে, যেখানে চাকরি-বাতিল শিক্ষকের সংখ্যা সাত বা আট জন। এর পরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, একসঙ্গে এত জন শিক্ষক যদি চলে যান, তা হলে স্কুল চলবে কী করে? আর কবেই বা হবে ওই শিক্ষক পদের শূন্যস্থান পূরণ?
নদিয়ার উত্তরপ্রান্তে করিমপুর গার্লস হাইস্কুলে এমন শিক্ষকের সংখ্যা মোট ৮ জন। অঙ্ক, ইংরেজি, ভৌতবিজ্ঞান বিষয়ে দু’জন করে আর বাংলা ও জীব বিদ্যার এক জন করে শিক্ষকের উচ্চ আদালতের রায়ের আওতায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। বিদ্যালয়ে পড়ুয়ার সংখ্যা ২২০০ প্রায়। প্রধান শিক্ষিকা মঞ্জু সরকার বলেন, “আমাদের স্কুলে স্থায়ী শিক্ষক শিক্ষিকার সংখ্যা ২৭ জন। অস্থায়ী, প্যারা টিচার আছেন আরও ৮ জন। কিন্তু একসঙ্গে যদি আট জন চলে যান, তা হলে এই বিরাট সংখ্যক পড়ুয়াদের পঠনপাঠনে খুবই অসুবিধা হবে। কী নির্দেশ আসে, তার অপেক্ষায় আছি।”
নদিয়ার অঞ্জনগড় হাইস্কুলের সাত জন শিক্ষক এবং এক জন শিক্ষাকর্মী রয়েছেন, যাঁদের হাই কোর্টের রায়ের আওতায় পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। প্রধান শিক্ষক সুপ্রতীপ রায় জানান, স্কুলের উচ্চমাধ্যমিক বিভাগের তিন জন এবং মাধ্যমিক বিভাগে চার জন চাকরি-বাতিল শিক্ষক রয়েছেন। তিনি বলেন, “আমাদের স্কুলের অঙ্কের শিক্ষক ফাঁকা হয়ে যাবে। স্কুল চালাব কী ভাবে, সেটাই বুঝতে পারছি না। তবে ডিআইয়ের দফতর থেকে এখনও কোনও নির্দেশ আসেনি।”
ভালুকা উচ্চ বিদ্যালয়ে এমন উচ্চ আদালতের রায়ে নিয়োগ-বাতিল শিক্ষকের সংখ্যা ছয়। আড়াই হাজারের বেশি পড়ুয়া নিয়ে ৩০ জন শিক্ষক, আট জন প্যারাটিচার সেখানে হিমশিম খাচ্ছেন। ছ’জন শিক্ষক কমে গেলে স্কুলে প্রতিদিনের ক্লাসের কী হবে, ভেবে পাচ্ছেন না প্রধান শিক্ষক রতনদুলাল নাথ। আবার, তেহট্ট হাইস্কুলেও ছ’জন শিক্ষক এবং এক জন শিক্ষাকর্মী রয়েছেন সম্ভাব্য নিয়োগ-বাতিলের তালিকায়। উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের দু’জন শিক্ষক রয়েছেন সংস্কৃত এবং জীববিদ্যার। মাধ্যমিক বিভাগের আছেন চার জন শিক্ষক। এঁদের মধ্যে বাংলা ও অঙ্কের এক জন এবং বিজ্ঞান বিষয়ের দু’জন শিক্ষক। স্কুলের মোট পড়ুয়া সংখ্যা ২৩৫২ প্রায়। প্রধান শিক্ষক মানিকলাল ঘোষ বলেন, “আমাদের স্কুলে এই মুহূর্তে ৪৯ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা আছেন। ছ’জন একসঙ্গে চলে গেলে কিছুটা সমস্যা হবেই।”
তবে সব চেয়ে সমস্যা বিভিন্ন স্কুলের উচ্চ মাধ্যমিকের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের নিয়ে। তরুণীপুর হাইস্কুলে মোট পাঁচ জন শিক্ষক এবং এক জন শিক্ষাকর্মীর চাকরি বাতিলের আশঙ্কা রয়েছে। ওই স্কুলের পড়ুয়া সংখ্যা ১৩৫৭ জন, শিক্ষক-শিক্ষিকার সংখ্যা ২৩ জন। প্রধান শিক্ষক সুজিত কুমার মণ্ডল বলেন, “আমাদের স্কুলের এমন শিক্ষকের সংখ্যা উচ্চ মাধ্যমিক বিভাগের এডুকেশন, রাষ্ট্রবিজ্ঞান ও দর্শনের এক জন করে মোট তিন জন শিক্ষক এবং মাধ্যমিকের ভৌতবিজ্ঞান ও জীববিদ্যা বিভাগের দু’জন। এক জন শিক্ষাকর্মীও আছেন। খুব জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হল।”
উচ্চ আদালতের রায়ের পর চিন্তিত ভীমপুর স্বামীজি বিদ্যাপীঠের প্রধান। স্কুলে পড়ুয়া সংখ্যা ১৯০৫ জন। শিক্ষক-শিক্ষিকা ৪১ জন। প্যারাটিচার চার জন। প্রধান শিক্ষক সন্দীপ দে বলেন, “আমাদের স্কুলে এমন চার জন শিক্ষক রয়েছেন। অঙ্ক, বাংলা, জীববিদ্যা এবং এডুকেশনের শিক্ষক। তাঁদের অনুপস্থিতিতে বিদ্যালয়ের পঠনপাঠন খুবই সমস্যার মধ্যে পড়বে।”
এবিটিএ-এর নদিয়া জেলা সম্পাদক সৌমেন পাল বলেন, “নিয়োগ-দুর্নীতির যাবতীয় দায় রাজ্য সরকারের। রাজ্য সরকার টাকার বিনিময়ে স্কুলের চাকরি বিক্রি করেছে, তা প্রমাণিত হওয়ায় আদালত যাবতীয় নিয়োগ বাতিল করেছে। কিন্তু এঁদের মধ্যে অনেকেই আছেন, যাঁরা নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছেন। তাঁরাও আজ চাকরি হারালেন। এর দায় সরকারকে নিতেই হবে।”
বিজেপির নদিয়া জেলা শিক্ষক সংগঠনের আহ্বায়ক অমিত চট্টোপাধ্যায়ের মতে, “রাজ্য সরকারের অপদার্থতা, এসএসসি-র চূড়ান্ত ব্যর্থতার জন্য আজ চাকরি-চোরের সঙ্গে যাঁরা নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছিলেন, তাঁদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। এর জন্য জনতার দরবারে রাজ্য সরকারকে জবাবদিহি করতে হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy