প্রতীকী চিত্র
সম্প্রতি গণপ্রহারে মারা গিয়েছেন সইদুল শেখ। একটি বিয়ে বাড়িতে তিনি চুরি করতে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগ ওঠে। সেই অভিযোগ সত্যি কি না, তার পরোয়া কেউ করেননি। তাঁকে ধরে বেধড়ক পিটুনি দেওয়া হয়। তাঁর পা ভেঙে যায়। সোমবার সকালে মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে যাওয়ার পথেই মৃত্যু হয় তাঁর। তার পরে তখনই প্রশ্ন উঠেছিল, স্থানীয় বাসিন্দারা নিজেদের হাতে এ ভাবে আইন তুলে নিতে পারেন কি না।
সেই সময়ই স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছিলেন, সইদুলকে এর আগেও চোর বলেই ধরা হয়েছিল। পুলিশের খাতাতেও সেই অভিযোগ লিপিবদ্ধ রয়েছে। তাই বিয়ে বাড়িতে তাঁকে দেখে চুরি করতেই তিনি গিয়েছিলেন বলে সন্দেহ হওয়াটা স্বাভাবিক। কিন্তু গণপ্রহারে সইদুলের মৃত্যুর এক দিন অতিক্রান্ত হতে না হতেই আর একটি চুরির ঘটনা ঘটে আমতলা হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় একটি মিষ্টির দোকানে। মঙ্গলবার রাতে দোকানের টালি খুলে চুরি যায় প্রায় দেড় হাজার নগদ টাকা এবং বেশ কিছু মিষ্টান্ন সামগ্রী, ঠান্ডা পানীয়। এ বার প্রশ্ন উঠেছে, সইদুলকে কি সারা জীবনই মিথ্যা অপবাদ ঘাড়ে নিয়ে বাঁচতে হয়েছে? তাঁর মৃত্যুও সেই অপবাদে? এলাকার সব চুরির দায় কেন তাঁর উপরেই পড়ত?
এলাকার বাসিন্দারা অনেকেই স্বীকার করছেন, সইদুলকেই চোর বলে সন্দেহ করাটা ভুল হয়েছে। তাঁরা অনুতপ্তও। বিশ্বজিৎ ঘোষ নামে ওই মিষ্টান্ন ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘এলাকায় চুরির ঘটনা ঘটলে আগে সইদুলকেই সন্দেহ করতাম। এখন দেখছি অনেক চোর চুরি করে।’’ আমতলা বাজার সমিতির সম্পাদক বিশ্বজিৎ রায় বলেন, ‘‘এ দিনের চুরির ঘটনা প্রমাণ করে দিল সইদুল চোর ছাড়াও আরও চোর আছে। সব সময় সইদুলকে সন্দেহ করে আমরা ভুল করেছি। সন্দেহের বশে ওকে মারধর ঠিক হয়নি।’’
এলাকায় বাসিন্দারাই জানাচ্ছেন, এর আগেও শুধু জনতার হাতে ধরা খেয়ে মারধর খেয়েছেন তা-ই নয়, একাধিক বার জেলও খেটেছেন তিনি। ফলে চুরির কিনারা না হলেই তার দায় পড়ত কানাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা সইদুলের উপরেই। কিন্তু মিষ্টির দোকানে চুরির পরে এলাকার অনেকেই বলছেন, ‘‘ঠিক যেমন সব পাখি মাছ খায় আর দোষ হয় মাছ রাঙার। একই ভাবে চুরি হয়ত একাধিক জন করে কিন্তু নাম হত সইদুলের।’’এখন সইদুলের পরিজনেরাও বলছেন, ‘‘ও মারা যাওয়ার পরেও তো চুরি হল, সে চুরি কে করছে?’’
সেই সঙ্গে এলাকায় গণপ্রহারের প্রবণতার বিরোধিতাও করতে শুরু করেছেন অনেকে। হরিহরপাড়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক সমিরুদ্দিন সরকার বলেন, ‘‘মানুষ অধৈর্য হয়ে পড়ছে। আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে, এটা ঠিক নয়। অপরাধ করলেও তার কারণ বিশ্লেষণ করে আইনগত বিচার হওয়া উচিত। তাই বলে পিটিয়ে মারা বা গণপ্রহারের মত বিষয় মেনে নেওয়া যায় না।’’ নওদার অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক সুনীল মণ্ডল বলেন, ‘‘চুরি করাটা অপরাধ। তার জন্য দেশে আইন কানুন রয়েছে। তাকে মান্যতা দিতে হবে। পিটিয়ে মারার মতো ঘটনা অসমর্থন যোগ্য। আমাদের অপরাধ প্রবণতাকে রুখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy