প্রতীকী ছবি।
মুখে রডের বাড়ি খেয়েও তিনি ছিনতাইকারীর ব্যাগ ছাড়েননি। বরং তার সঙ্গেই ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে নেমে পড়ে চিৎকার করে ধরিয়ে দিয়েছেন লোকটিকে। তাকে আপাতত শ্রীঘরে চালান করা হয়েছে।
মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নার্স রুবি কুন্ডুর বাড়ি কৃষ্ণনগরের পাত্র মার্কেট এলাকায়। রোজ সেখান থেকেই তিনি ট্রেনে যাতায়াত করেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টা নাগাদ তিনি কৃষ্ণনগর থেকে রানাঘাট-লালগোলা ইএমইউ প্যাসেঞ্জারের মহিলা কামরায় চড়েন বহরমপুরে হাসপাতালে যাবেন বলে। কামরায় কোনও পাহারা ছিল না। বেলডাঙা স্টেশনে একটি লোক উঠে তাঁর পাশের আসনে বসে।
রুবির কথায়, ‘‘হাতে মোবাইল নিয়ে বসে ছিলাম। ট্রেন ভাবতা স্টেশন ছাড়তেই হঠাৎ ঝোলা থেকে হাতখানেক লম্বা রড বের করে লোকটা আমার দিকে এগিয়ে আসে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মোবাইল ও ব্যাগ কেড়ে নেয়।’’ কামরায় আরও কয়েক জন যাত্রী ছিলেন। রুবি ‘চোর চোর’ বলে চিৎকার করলেও তাঁরা কেউ এগিয়ে আসেননি। বরং চেন টানার কথা বললে নিত্যযাত্রী এক আনাজ বিক্রেতা ভয়ে কামরার অন্য দিকে সেঁধিয়ে যান।
মরিয়া হয়ে রুবি ছিনতাইকারির ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। সেটি নিয়ে দু’জনে টানাটানি চলতে থাকে। ছিনতাইকারী রড চালাতে গেলে রুবি সেটা ধরে ফেলেন। জং ধরা রডে তাঁর হাত কেটে রক্ত গড়াতে থাকে। তা ছাড়িয়ে নিয়ে রুবির মুখে মারে লোকটি। তবু ব্যাগ ছাড়েননি তিনি। ইতিমধ্যে ট্রেন সারগাছি স্টেশনে গিয়ে দাঁড়ালে ব্যাগ টানতে-টানতে লোকটি নেমে পড়ে। ব্যাগ আঁকড়ে নেমে পড়েন রুবিও। আর নেমেই ‘চোর-চোর’ চিৎকার শুরু করেন। পাশ দিয়ে ট্রেন বেরিয়ে যায়। প্ল্যাটফর্মে লোকজন ছিল। তারা ছুটে এসে লোকটিকে ধরে ফেলে। দু’চার ঘা লাগিয়েও দেয়। পরে বহরমপুর থেকে রেলপুলিশ গিয়ে লোকটিকে গ্রেফতার করে। এলাকার লোকজনই রুবিকে ওষুধের দোকানে নিয়ে গিয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা করান। পরে রেলপুলিশ তাঁকে তাঁর কর্মস্থলে, মুর্শিদাবাদ মেডিক্যালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করায়।
রেলপুলিশ জানায়, ছিনতাইকারীর নাম নাজির হোসেন। বাড়ি বেলডাঙা থানার গঙ্গারামপুরে। সে হেরোইনের নেশা করে বলে প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে। শুক্রবার সিজেএম আদালতে হাজির করানো হলে বিচারক তাকে ১৪ দিন জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
বহরমপুর প্রোগ্রেসিভ যাত্রী সেবা সমিতির সম্পাদক মলয়কুমার বণিক বলেন, ‘‘মহিলা সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছেন।!’’ বহরমপুর জিআরপি-র ওসি শুভেন্দু ভট্টাচার্য জানান, শিয়ালদহ-লালগোলা রুটে ১৬ জোড়া ট্রেন চলে। যথেষ্ট সংখ্যক কর্মী না থাকায় প্রতিটি ট্রেনে মহিলা কামরায় পুলিশ মোতায়েন রাখা সম্ভব হয় না। তাঁর দাবি, ‘‘বিশেষ করে রাতের দিকের ট্রেনে মহিলা কামরায় পাহারা রাখার কথা কর্তৃপক্ষকে বলেছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy