প্রতীকী ছবি।
কাঁটাতারের ক্ষতটা এখনও খচখচ করে সীমান্তের স্কুল শিক্ষক বাহারউদ্দিনের। হিন্দি না জানা এই শিক্ষক বারবারই বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন, তিনি চরের স্কুলেই পড়ান। কিন্তু বাংলা না বোঝার ফলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই কয়েকটা রুলের বাড়ি বসে গিয়েছিল তাঁর পিঠে। সাইকেল থেকে পড়ে যাওয়া শিক্ষককে পাশের চাষের জমি থেকে এসে তুলেছিলেন চাষিরা। তাঁরাই বিএসএফকে বুঝিয়েছিলেন ইনি চরের স্কুলের শিক্ষক, পড়াতে যাচ্ছেন।
সে যাত্রা মিটমাট হলেও, তার পরেও বাহারউদ্দিনকে অনেকবারই বিএসএফের বাধার সামনে পড়তে হয়েছে। কেবল বাহারউদ্দিন নয়, সীমান্তের স্কুলগুলির শিক্ষকদের এমন দশা নিত্য দিনের। শিক্ষা দফতরের দেওয়া পরিচয়পত্র দেখানোর পরে কিছুটা রেহাই মিলল যে এলাকায় শিক্ষকদের এখনো পরিচয়পত্র দেওয়া হয়নি সেই এলাকায় হয়রানির অন্ত নেই। সকাল-বিকেল যাতায়াতের পথে একাধিক ওপি পয়েন্টে কৈফিয়ত দিতে হয় কোথায় গিয়েছিলেন বা কোথা থেকে আসছেন।
কেবল শিক্ষক নয়, সীমান্তের পথে সে চিকিৎসক বা চাষি যেই হোন না কেন, ছাত্র-মহিলা রেহাই নেই কারও। কাঁটাতারের ওপারে নিজের বাপ দাদার আমলের জমিতে চাষ করতে গেলেও নানাভাবে হয়রানির শিকার হতে হয় রানিনগর এবং জলঙ্গি এলাকার চাষিদের। সকাল সকাল যাওয়া যাবে না, মাঠে থেকে ফিরতে হবে বেলা গড়ানোর আগেই। রানিনগরের চাষি আমিরউদ্দিন সরকার বলছেন, ‘‘একে পদ্মার ভাঙনে জলঙ্গি এবং রানিনগরের সীমান্ত এলাকায় ক্ষতির শেষ নেই। তার উপরে আবার জেগে ওঠা চরে চাষ করতে গেলে হাজারও হ্যাপা বিএসএফের। কখনও পরিচয়পত্র নিয়ে সমস্যা, কখনো নির্দিষ্ট বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে যাতায়াত না করতে পারলে সমস্যা। ফলে অনেকেই চরের মাঠে চাষ বাস ছেড়ে দিয়েছেন।’’
কেবল চাষি নয়, পদ্মা পাড়ের মৎস্যজীবীদের রুজিতেও টান পড়েছে। পদ্মায় নামতে পারলেও বিএসএফের বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে জল ছেড়ে উঠে আসতে হবে। এমন হাজারও হ্যাপা সীমান্তের পথে। রানিনগর থানা এলাকার মৎস্যজীবী রেজাউল করিম বলছেন, ‘‘যাদের মৎস্য দফতরের সচিত্র পরিচয়পত্র নেই তারা পা রাখতেই পারেন না মাছ ধরার জন্য পদ্মায়। অথচ তাঁদেরও সারাক্ষণ বিড়ম্বনা।’’
রানিনগর ও জলঙ্গি ব্লক প্রশাসনের কর্তারা বলছেন সীমান্তের সবচাইতে বড় সমস্যা ভাষা। ভাষা না বোঝার জন্য অনেক সময় শিক্ষকের উপরে হাত উঠছে বিএসএফের। তা ছাড়া ব্যাটেলিয়ান এর পরিবর্তন হলে স্থানীয় মানুষজনকে চিনতেই বছর ঘুরে যায়। দীর্ঘ আলাপ আলোচনার পরে পরিস্থিতি য়খন কিছুটা স্বাভাবিক হয় ততদিনে ফের ব্যাটালিয়ন বদলির সময় হয়ে য়ায়। চক্রাকারে এ সমস্যা চলতেই থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy