Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

দুই সেতুতে বদ্ধ জলঙ্গি

এমনিতেই বিভিন্ন কারণে জলঙ্গি নদী তার স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়েছে। তার উপর এই দুই বড় বাধা নদীকে অবরুদ্ধ করে দিচ্ছে বলে মনে করছেন নদী বিশেষজ্ঞরা। কৃষ্ণনগর পুরসভা লিখিত ভাবে এই সমস্যা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে কোনও রকম হেলদোল দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কোনও দফতরেই। 

অবরুদ্ধ জলঙ্গি নদী। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

অবরুদ্ধ জলঙ্গি নদী। কৃষ্ণনগরে। নিজস্ব চিত্র

সুস্মিত হালদার 
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০০:৪০
Share: Save:

কয়েক বছর আগেই তৈরি হয়েছে রেল সেতু। তার উপর দিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। কিন্তু সেই সেতু তৈরির সময় জলঙ্গি নদীর উপরে মাটি দিয়ে যে বাঁধ তৈরি করা হয়েছিল তা রয়ে গিয়েছে এখনও। ফলে সেই জায়গা দিয়ে জল প্রবাহিত হতে পারে না। আর বর্ষায় উল্টো দিকে শুরু হয়ে যায় ভাঙন।

শুধু রেল সেতু নয়, একই অবস্থা ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সম্প্রসারণের জন্য আংশিক তৈরি হয়ে থাকা সেতুরও। রেল সেতুর কাছেই এই সেতুর স্তম্ভে বাহাদুরপুরের দিকে মাটি দিয়ে বুজিয়ে রাখা আছে। এখানেও সেই একই ভাবে নদীর অর্ধেকটা আটকে থাকায় নদীর স্বাভাবিক গতি রুদ্ধ হয়ে আছে। এতে যেমন ওই এলাকায় নদী নাব্যতা হারাচ্ছে তেমনই উল্টো দিকে শম্ভুনগর এলাকায় নদীর পাড় ভাঙতে শুরু করেছে।

এমনিতেই বিভিন্ন কারণে জলঙ্গি নদী তার স্বাভাবিক গতিপথ হারিয়েছে। তার উপর এই দুই বড় বাধা নদীকে অবরুদ্ধ করে দিচ্ছে বলে মনে করছেন নদী বিশেষজ্ঞরা। কৃষ্ণনগর পুরসভা লিখিত ভাবে এই সমস্যা জেলা প্রশাসনকে জানিয়েছে। কিন্তু অভিযোগ, বিষয়টি নিয়ে কোনও রকম হেলদোল দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কোনও দফতরেই।

কৃষ্ণনগর শহরের প্রান্তে জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের সেতুটি দীর্ঘ দিনের। জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য পাশেই আরও একটি সেতু তৈরির কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু আংশিক কাজ শেষ হতে না হতে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তার পর থেকে তা ওই অবস্থায় পড়ে আছে। আবার একই ভাবে বেশ কয়েক বছর আগে তৈরি হয় দ্বিতীয় রেল সেতু। সেই সময় বাহাদুরপুরের দিকে মাটি দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছিল। জলঙ্গি নদী নিয়ে দীর্ঘদিন কাজ করছেন সুপ্রতিম কর্মকার। তাঁর কথায়, “এই রকম অবস্থায় নদী যেমন তার নাব্যতা হারায় তেমনই সে কূল ভেঙে তার স্বাভাবিক গতি পথ তৈরি করে নেয়। কিন্তু সবচেয়ে বিপদ হল, সেতুর স্তম্ভের আশেপাশের অংশে নদীর মাটি আলগা হয়ে যাচ্ছে। যা সেতুর পক্ষে অত্যন্ত বিপজ্জনক।” কিন্তু কে ভাববে সে কথা?

কৃষ্ণনগর পুরসভার প্রাক্তন পুরপ্রধান তথা প্রশাসক অসীম সাহা বলছেন, “সেতু দু’টির নীচের মাটি পরিষ্কার করে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ ফিরিয়ে না আনলে কৃষ্ণনগর শহরের বিপদ হতে পারে। জেলা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে জানিয়েছি। কিন্তু এখনও কোনও ফল হয়নি।” সেচ দফতরের কর্তারা বলছেন, ‘‘রেল সেতুর নীচের মাটি সাফ করার জন্য রেল কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। উত্তরে রেল কর্তৃপক্ষ চিঠি দিয়ে জানিয়েছেন যে, তাঁরা মাটি সাফ করে দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। রেলকে আবারও চিঠি লিখতে চলেছে সেচ দফতর। এই চিঠি চালাচালির শেষ কবে হবে এবং নদী কবে তার স্বাভাবিক গতি ফিরে পাবে তার উত্তর কারও জানা নেই। পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্রের বক্তব্য, “বিষয়টা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”

এর সঙ্গে রয়েছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সেতু। জেলা সেচ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়র সুরজিৎ ধর বলছেন, “এই বিষয়েও প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।” কেন এতদিন সেটা করা হয়নি তা নিয়ে কোনও স্পষ্ট কারণ দেখাতে পারেনি তিনি। যদিও ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক প্রকল্পের অধিকর্তা সৌতম পাল বলছেন, “আগে যে ঠিকাদার কাজ করছিলেন তিনি মাঝ পথে কাজ ছেড়ে চলে যান। সেতুর কাজ ওই ভাবে অসমাপ্ত হয়ে আছে।” জেলা শাসক বিভু গোয়েলের কথায়, “বিষয়টা নিয়ে সেচ দফতরের সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Jalangi Krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy